বন্ধু না আসায় থেমে গেলো বিয়ে, কবুল বললেন না বর
নোয়াখালীর হাতিয়ায় ঘটেছে এক অদ্ভুত ঘটনা। নিজের বিয়েতে বন্ধু না আসা পর্যন্ত কবুল বলতেই রাজি হননি এক বর। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার তমরদ্দি ইউনিয়নের ক্ষিরোদিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাতিয়া উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নের মাইজচরা গ্রামের করিম বেপারির ছেলে আরমান হোসেনের বিয়ে ঠিক হয় তমরদ্দি ইউনিয়নের ক্ষিরোদিয়া গ্রামের এক পরিবারের মেয়ের সঙ্গে। মঙ্গলবার দুপুরে কনের বাড়িতে বিয়ের সব আয়োজন শেষ, অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত সবাই। গাড়িবহর নিয়ে এসে পৌঁছান বরযাত্রীরাও। কিন্তু সময় গড়াতে থাকে, দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে না। কাজী বসে আছেন, চারপাশে উৎকণ্ঠা অবশেষে জানা গেল, ঘনিষ্ঠ বন্ধু না এলে কবুল বলবেন না বর।
পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুরের আগে বরযাত্রী রওনা হওয়ার সময় গাড়িতে বসা নিয়ে আরমানের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই বন্ধু বিয়েতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কনের বাড়িতে পৌঁছে বন্ধুকে না দেখে বর গাড়ি থেকে নামতেই অস্বীকৃতি জানান। পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়রা অনেক চেষ্টা করেও তাকে রাজি করাতে পারেননি। আরমান স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বন্ধু না আসলে তিনি কবুল বলবেন না।
অবশেষে প্রায় দুই ঘণ্টা পর বরপক্ষের কয়েকজন গিয়ে সেই বন্ধুকে নিয়ে আসেন। বন্ধুকে দেখে মুখে হাসি ফিরে আসে বরের। এরপরই কাজী ডেকে ‘কবুল’ বলেন আরমান, সম্পন্ন হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।
ঘটনা সম্পর্কে বর আরমান হোসেন বলেন, ‘রিয়াজ আমার ছোটবেলার বন্ধু। আমার এক আত্মীয়ের সঙ্গে গাড়িতে বসা নিয়ে রাগ করে বিয়েতে আসেনি। আমার জীবনের এমন শুভ দিনে সে থাকবে না, এটা আমি মেনে নিতে পারিনি। তাই সে আসার পরই আমি বিয়ে করেছি।’
কনেপক্ষের আত্মীয় আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আমরা দুপুর ১২টা থেকেই এলাকার লোকজনকে খাওয়ানো শুরু করি। বর আসে দেড়টার দিকে। কিন্তু বরের এক বন্ধুর জন্য দুই ঘণ্টা বিয়ের কাজ শুরু করতে পারিনি। অনেকে বিরক্ত হয়ে চলে গেছেন। পরে বন্ধুটি আসার পরই বিয়েটা সম্পন্ন হয়।’
স্থানীয় প্রবীণ আবদুল গফুর মিয়া বলেন, ‘ছেলেটার বন্ধুত্ব দেখে আমরা সত্যিই অবাক। আজকাল বন্ধুত্বের মানে অনেকেই ভুলে গেছে, কিন্তু আরমান দেখিয়ে দিল বন্ধুত্ব এখনো মনের ব্যাপার হতে পারে। তবে বিয়ের দিনে এমন নাটক না হলেই ভালো হতো।’
কনের মামা সেলিম হোসেন বলেন, ‘এমন ঘটনা জীবনে দেখিনি। সবাই দাওয়াত খেয়ে বসে আছে, কাজি সাহেবও অপেক্ষায়, কিন্তু বর কবুল বলছে না। আমরা ভেবেছিলাম কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পরে শুনলাম বন্ধুর জন্য বসে আছে। শেষ পর্যন্ত বন্ধুটি আসায় বিয়ে সম্পন্ন হয়।’