২৬ মে ২০২৫, ২০:১৩

বিএনপির অফিস টেবিলে পা তুলে ধূমপান আ. লীগ কর্মীর

হারুন আর রশিদ  © সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে বিএনপির অফিস টেবিলে পা তুলে এক আওয়ামী লীগ কর্মীর ধূমপানের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকজনকে টেবিলের সামনে বসে থাকতে দেখা যায়।

গতকাল রবিবার (২৫ মে) ‘জিয়ার সৈনিক’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, ওই আওয়ামী লীগ কর্মীর নাম হারুন আর রশিদ। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একাব্বর চেয়ারম্যানের ছেলে।

ওই ফেসবুক পোস্টের স্ট্যাটাসে লেখা হয়, ‘বাহ্! আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কুখ্যাত ভূমি দস্যু একাব্বর চেয়ারম্যানের ছেলে, ইয়াবা ব্যবসায়ী হারুন বলে কথা। বিএনপির অফিসে হাতে সিগারেট আর টেবিলে পা তুলে বসে থাকা সাধারণ জনগণকে মোটেও অবাক করেনি। কারণ এই এলাকায় স্বজনপ্রীতি রাজনীতির হালচাল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগের সময় এই স্বজনগুলো কোথায় ছিল?’

জানা গেছে, ওই অফিসে উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা বসেন। এটি ২নং ওয়ার্ড বিএনপির অফিস। অফিসটি উপজেলার গারো বাজারে অবস্থিত। হারুন ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী। তার বাড়ি সিংহচালা গ্রামে। তার বাবা একাব্বর আলী ছিলেন বৃহত্তর রসুলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে লক্ষিন্দর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও ওই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর হারুন পালিয়ে ভারতে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঢাকা থেকে ফেরত আসেন, পালাতে পারেননি। পরবর্তীতে বিএনপির নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় প্রকাশ্যে আসেন হারুন। বিএনপির নেতাদের সঙ্গে গড়ে তোলেন সখ্যতা। এর ফলেই তিনি পৌঁছে যান বিএনপির অফিস পর্যন্ত। ওই অফিসে দিন-রাত আড্ডা দেন তিনি।’

স্থানীয়রা জানান, তিন মাস আগে বিএনপির এই অফিস উদ্বোধন করা হয়। ১৫ দিন না যেতেই হারুন ওই অফিসে যাতায়াত শুরু করেন। সঙ্গে নিয়ে যান আওয়ামী লীগের আরও অনেক নেতাকর্মী। রাত-দিন অফিসে আড্ডা দেন।

উপজেলা বিএনপির সদস্য ও লক্ষিন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আক্কাস আলী আকন্দ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতার দোষ কম। আমাদের নেতৃত্বে যারা আছেন, তারা এই অফিস পরিচালনা করেন। অর্থাৎ সিনিয়ররা আওয়ামী লীগের লোকদের সঙ্গে নিয়ে অফিসে বসেন। বিএনপির সিনিয়ররা আওয়ামী লীগ ছাড়া চলতে পারেন না। জুলাই বিপ্লবের পর দেশ ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলেন হারুন। কিন্তু আমাদের কিছু লোক তাকে অভয় দিয়ে এলাকায় রাখার ব্যবস্থা করেছে। মনে হয়, অফিসটা আমাদের না, আওয়ামী লীগের অফিস।’

মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে হারুন আর রশিদ বলেন, ‘এটা আসলে বিএনপির অফিস না। এটা একটা খোলা ঘর। কারণে-অকারণে ওই ঘরে যাওয়া হয়। ঘরটি উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইকবাল তালুকদারের ভাই খোরশেদ তালুকদারের। সম্পর্কে ইকবাল তালুকদার আমার মামা। ছবিটি যেদিন তোলা হয়েছে, সেই রাতে ওই ঘরে আমার সঙ্গে ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম।’

লক্ষিন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জসিম চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। গারো বাজারের ওই অফিসটি ইউনিয়ন বিএনপির না। এটি ২নং ওয়ার্ড বিএনপির অফিস। ওইখানে বসেন উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইকবাল তালুকদার।’

ইকবাল তালুকদার বলেন, ‘লক্ষিন্দর ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা এ অফিসে বসেন। হারুন আমার বোনের দেবরের ছেলে—সম্পর্কে ভাগনে। কখন সে এই অফিসে এসে এ কাজ করেছে, আমি জানি না।’

এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে যদি কেউ আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকে, এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’