১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:০৪

‘দোহাই, শুধু মস্তিষ্কটা খেয়ো না আমার...’

ওসমান হাদি  © টিডিসি সম্পাদিত

আততায়ীর গুলিতে শহিদ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি একজন কবি। লিখতেন ‘সীমান্ত শরিফ’ নামে। গত বছর ২০২৪ সালের অমর একু্শে বইমেলায় প্রকাশ হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লাভায় লালশাক পূবের আকাশ’। ইনসাফ, সংগ্রাম আর মুক্তির চোখে দুনিয়া দেখায় বিভোর কবি সীমান্ত শরিফের এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে ৩২টি কবিতা। গ্রন্থের দ্বিতীয় কবিতা ‘আমায় ছিঁড়ে খাও হে শকুন’। সম্প্রতি ওসমান হাদির শাহাদাতের পর তার বোনের ভাষ্যে এই কবিতার একটি পঙ্কতি বেশ ভাইরাল হয়। পাঠকদের জন্য পুরো কবিতাটি উপস্থাপন করা হল।

আমায় ছিঁড়ে খাও হে শকুন

হে সীমান্তের শকুন
এক্ষুনি ছিঁড়ে খাও আমাকে
হে আটলান্টিকের ঈগল
শিগগির খুবলে খাও আমাকে
হে বৈকাল হ্রদের বাজ
আঁচড়ে কামড়ে ছিন্নভিন্ন করো আমাকে।

আমার রক্তরসে শুধু অসহায়ত্ব আর অভাব;
কাগজের কামলারা তারে আদর করে মুদ্রাস্ফীতি ডাকে।

ঋণের চাপে নীল হয়ে যাচ্ছে আমার অণুচক্রিকা
সংসার চালাতে অন্তরে হয় ইন্টারনাল ব্লিডিং
কী আশ্চর্য, তবুও আমি মরছি না!

ওদিকে দোজখের ভয়ে
আত্মহত্যা করবারও সাহস পাই না আমি!

খোদাকে বললাম, আমি মরতে চাই
তিনি বললেন, বেঁচে আছ কে বলল?
সহস্রাব্দ উন্নয়নের সাক্ষী হিসেবে
রাজা তোমাকে মমি করে রেখেছেন!

বাজারে দীর্ঘশ্বাস ফেললে নাকি
রাজ্যের ভীষণ বদনাম হয়
রাজারও মন খারাপ হয় খুব।

কোতোয়ালরা ফরমান জারি করেছে
আমাকে সারাক্ষণই হাসতে হবে!
নইলে দেশি কুকুর ও বিদেশি মাগুরকে
একবেলা ভালোমন্দ খাওয়ানো হবে আমার মাংস দিয়ে
নিত্যদিন ব্রয়লারের ভুঁড়ি নাকি ওদের ভাল্লাগে না!

অথবা আমাকে ভাগ দিয়ে বেচা হবে
মানুষেরও তো মানুষ খাওয়ার সাধ হতে পারে, তাই না?
ভাগ্যিস তা বিদেশি সুপারশপে বিকি হবে না
দেশি মানুষেরই তো হক বেশি আমাকে খাওয়ার!

এ দোজখই যখন নিয়তি
তখন আমি উদাম হয়ে ডাকছি
দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মাংসাশী বিহগদের

হে ঈগল, চিল ও ভয়ংকর বাজেরা
হে সাম্রাজ্যবাদী সাহসী শকুনিরা
তোমরা এফ-থার্টি ফাইভের মতো
মিগ টুয়েন্টি নাইনের মতো—

দল বেঁধে হামলে পড়ো আমার বুকে
আমার রান, থান, চক্ষু, কলিজা
আজ সব তোমাদের গনিমতের মাল
দেশি শুয়োর খুবলে খাওয়ার আগেই
আমায় ইচ্ছেমতো ছিঁড়ে খাও তোমরা!

দোহাই, শুধু মস্তিষ্কটা খেয়ো না আমার
তা হলে শীঘ্রই দাস হয়ে যাবে তোমরাও।