রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটের খুঁটিনাটি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ‘সি’ ইউনিট। তবে এই ইউনিটে মানবিক ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরাও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তাদের জন্য রয়েছে ৪০টি আসন। আগামী ১৬ জানুয়ারি ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য ‘সি’ ইউনিট সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো—
এক নজরে ‘সি’ ইউনিট:
‘সি’ ইউনিট মোট সাতটি অনুষদ নিয়ে গঠিত। এই অনুষদের অধীনে রয়েছে মোট ২৬টি বিভাগ। এর মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে নয়টি বিভাগ, জীববিজ্ঞান অনুষদের ছয়টি, কৃষি অনুষদের দুইটি, প্রকৌশল অনুষদের পাঁচটি, ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের দুইটি, ফিশারিজ অনুষদ এবং ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের একটি করে বিভাগ।
আসন সংখ্যা:
এ বছর এই ইউনিটে ২০টি আসন বাড়ানো হয়েছে। 'সি' ইউনিটে মোট আসন আসন সংখ্যা রয়েছে ১৫৩৬টি। যার মধ্যে বিজ্ঞান শাখার আসন সংখ্যা ১৪৯৬টি, গত বছরে ছিল ১৪৬০টি। অবিজ্ঞান শাখার আসন সংখ্যা ৪০টি; গত বছরে ছিল ৫৬টি। যারা অবিজ্ঞান শাখা পরীক্ষা দিবে তারা শুধুমাত্র শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ (১০টি আসন), ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ (১০টি আসন) এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগে (২০টি আসন) ভর্তির সুযোগ পাবেন।
আবেদন কবে ও ফি কত:
আগামী ২০ নভেম্বর বেলা ১২টা থেকে আবেদন শুরু হবে। চূড়ান্ত আবেদন ফি নির্ধারিত করা হয়েছে ১ হাজার ৩২০ টাকা (সার্ভিস চার্জসহ)।
প্রশ্নের পদ্ধতি:
বহুনির্বাচনি প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় এবার মোট ৮০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে; সময় এক ঘণ্টা। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১.২৫। প্রতিটি ভুল উত্তরের ০.২০ করে নম্বর কাটা হবে। অর্থাৎ পাঁচটি ভুল উত্তরের জন্য ১ নম্বর কাটা যাবে। পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০।
পরীক্ষা পদ্ধতি:
ভর্তি পরীক্ষা দুটি শাখায় অনুষ্ঠিত হবে। ১. বিজ্ঞান শাখা ও ২. অ-বিজ্ঞান (মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা)
১. বিজ্ঞান শাখা
বিজ্ঞান শাখায় প্রশ্নপত্রে দুটি অংশ থাকবে (ক) আবশ্যিক এবং (খ) ঐচ্ছিক। আবশ্যিক অংশে প্রশ্ন থাকবে পদার্থবিজ্ঞান ২৫টি, রসায়ন ২৫টি এবং আইসিটি ৫টি।
ঐচ্ছিক অংশে গণিত/জীববিদ্যা/জীববিদ্যা+গণিত মিলে ২৫/২৫/১৩+১২। সব মিলে ৮০টি প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১.২৫। মোট ১০০ নম্বর।
যেসব শর্তাবলি মানতে হবে:
(ক) যেসব ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ‘ক’-সহ ‘খ’ শাখার জীববিদ্যা+গণিত বিষয়ে উত্তর দেবে তারা ‘সি’ ইউনিটের সব বিভাগে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে।
(খ) যে সকল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী 'ক'-সহ 'খ' শাখায় গণিত বিষয়ে উত্তর দেবে তারা শুধুমাত্র 'সি' ইউনিটের গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, পরিসংখ্যান, পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড ইউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট, ফলিত গণিত, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা, মনোবিজ্ঞান, ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাটেরিয়ালস্ সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে।
(গ) যে সকল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী 'ক'-সহ 'খ' শাখায় জীববিদ্যা বিষয়ে উত্তর দেবে তারা শুধুমাত্র 'সি' ইউনিটের ফার্মেসি, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা, মনোবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যা, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান, মাইক্রোবায়োলজি, এগ্রোনোমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন, ফিশারিজ, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস এবং ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে।
২. অ-বিজ্ঞান শাখা: এই শাখায় বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের ওপর থাকবে ২৫টি করে প্রশ্ন এবং সাধারণ জ্ঞান/ভূগোল/মনোবিজ্ঞান বিষয়ের উপর ৩০টি প্রশ্ন। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১.২৫। মোট ১০০ নম্বর।
কোন বিভাগে কত আসন:
বিজ্ঞান অনুষদে এ বছর ১৫টি আসন বাড়ানো হয়েছে। অনুষদটির নয় বিভাগের অধীনে রয়েছে ৬২৫টি আসন। এর মধ্যে গণিত- ১০০, পদার্থবিজ্ঞান- ৭০, রসায়ন- ১০০, পরিসংখ্যান- ৮০, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান- ৫০, ফার্মেসি- ৫০, পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট- ৬৫, ফলিত গণিত- ৭৫ এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে ৩৫টি আসন রয়েছে। এ বছর পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগে, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে ও ফলিত গণিত বিভাগে ৫টি করে আসন বাড়ানো হয়েছে।
জীববিজ্ঞান অনুষদে এ বছর ৫টি আসন বাড়ানো হয়েছে। ছয় বিভাগের অধীনে আসন রয়েছে ৩০৫টি আসন। এর মধ্যে মনোবিজ্ঞান- ৬০, উদ্ভিদবিজ্ঞান- ৭০, প্রাণিবিদ্যা- ৮০, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি- ৩০, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান- ৩৫ ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে ৩০টি আসন রয়েছে। এ বছর চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগে ৫টি আসন বাড়ানো হয়েছে।
কৃষি অনুষদের দুই বিভাগের অধীনে রয়েছে ১২০টি আসন। এর মধ্যে এগ্রোনমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগে ৬০টি ও ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে ৬০টি আসন রয়েছে। প্রকৌশল অনুষদের পাঁচ বিভাগে রয়েছে ২৫১টি আসন। এর মধ্যে ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল- ৭০, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং- ৪০, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং- ৪৬, ম্যারেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং- ৫০ এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৪৫টি আসন রয়েছে।
ভূ-বিজ্ঞান অনুষদে এ বছর আরও ৫টি আসন বাড়ানো হয়েছে। অনুষদটির দুই বিভাগের রয়েছে ১৩৫টি আসন। এর মধ্যে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা- ৭৫ এবং ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগে ৬৫টি আসন রয়েছে। ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগে এ বছর ৫টি আসন বাড়ানো হয়েছে। ফিশারিজ অনুষদের ফিশারিজ বিভাগের অধীনে রয়েছে ৫০টি আসন। ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগে রয়েছে ৫০টি আসন।
যেদিন পরীক্ষা:
আগামী ১৬ জানুয়ারি ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বছরে সিলেকশন থাকবে না। দুই শিফটে পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রথম শিফটের পরীক্ষা সকাল ১১টা থেকে ১২টা এবং দ্বিতীয় শিফটের পরীক্ষা বিকাল ৩টা থেকে ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে।
পরীক্ষা কোথায় অনুষ্ঠিত হবে:
এবারের ভর্তি পরীক্ষা রাজশাহী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগে অবস্থিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হবে।
মেধাতালিকা যেভাবে:
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক (এসএসসি ও এইচএসসি) বা সমমান পরীক্ষার ফলাফলের ওপর কোনো মার্কস নেই। মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় যারা বেশি মার্কস পাবে তারাই মেধা তালিকায় এগিয়ে থাকবে। এছাড়া ভর্তিসংক্রান্ত যেকোনো তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে (http://admission.ru.ac.bd) জানা যাবে।