হরতাল আর অবরোধের মধ্যে পার্থক্য কী
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:৩৮ PM , আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:৩৮ PM
গতকাল রবিবার (২৯ অক্টোবর) সারা দেশে সকাল–সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছিল বিএনপি। সেই কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যায় তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে দলটি। আগামীকাল মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) থেকে বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালিত হবে।
সভা-সমাবেশ, মানববন্ধনসহ নানা রাজনৈতিক কর্মসূচির সাথে সাধারণ মানুষ পরিচিত থাকলেও অনেকে হরতাল আর অবরোধের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেন না। দুটি কর্মসূচিতেই প্রায় একই ধরনের রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া হলেও হরতাল ও অবরোধের মধ্যে রয়েছে কিছু পার্থক্য।
হরতাল
‘হরতাল’ শব্দটি গুজরাটি। ‘হর’ মানে সবজায়গায় আর ‘তাল’ মানে তালা। অর্থাৎ, হরতাল মানে হলো সবজায়গায় তালা। ইতিহাস মতে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী এই হরতালের প্রবর্তন করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ‘তমুদ্দিন মজলিশ’ প্রথম হরতাল ডাকার পর থেকে এ দেশের রাজনীতিতে হরতাল বেশ প্রচলিত একটি কর্মসূচি।
পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশে অনেক হরতাল হয়েছে। স্বাধীনতার পর এরশাদের দীর্ঘ শাসনামলে হরতালের পাশাপাশি কিছু অবরোধ হয়েছে। আওয়ামী লীগও বিরোধীদলে থাকার সময়ে দেশে বহু হরতাল কর্মসূচি এবং অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে।
কোনো রাজনৈতিক দল কোনো ইস্যুতে হরতালের ডাক দিলে সেই কর্মসূচিতে মানুষের সাড়া দেওয়ার একটি সম্পর্ক থাকে। অর্থাৎ মানুষ হরতালের ইস্যুর সাথে একমত হয়ে তাতে সাড়া দিয়ে পরিবহণ, দোকানপাট, অফিস-আদালত বন্ধ রাখবে।
অবরোধ
হরতালের মতো অবরোধেরও রয়েছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। কোনো দুর্গ ও এলাকা দখলের আগে অবরোধের ইতিহাস বিভিন্ন আমলেই দেখা গেছে। গ্রিক উপাখ্যানে ইলিয়াড ও ওডেসিতে ট্রয় নগরী অবরোধের কথা উঠে এসেছে। ট্রয় নগরীতে রাণী হেলেনকে অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় দশ বছর ধরে গ্রিকদের ট্রয় অবরোধ করার ঘটনা বহুল আলোচিত। পরে এই অবরোধের জেরে নানা ঘটনাবহুল যুদ্ধে ধ্বংস হয় সেই ট্রয় নগরী।
জেরুজালেম অবরোধের ঘটনা ঘটে ১১৮৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত। মিসরের আইউবীয় সুলতান সালাদিন ওরফে সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে এই অবরোধ হয়। ওইসময় শহরের নাগরিকদের শহর থেকে বের হতে দিতে মুক্তিপণও আদায় করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক দল অবরোধের কর্মসূচি দেওয়া মানে মানুষকে জানিয়ে দেওয়া যে, কর্মসূচি চলাকালে সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ করে রাখা হবে। তাতে জনগণ হরতালের মতো সাড়া দিক বা না দিক অবরোধ হবে। কর্মসূচি পালনে মানুষকে অনেকটা বাধ্য করা হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হরতাল আর অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে অনেকসময় পার্থক্য করা মুশকিল হয়।
রাজনীতিতে হরতাল ও অবরোধ দাবি আদায়ে গণতান্ত্রিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার হলেও এই কর্মসূচিগুলোতে নানা সহিংস ঘটনার ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশে। ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদের গোঁয়ার্তুমি আর অহমের কারণে অনেক সময় নেতিবাচক পরিস্থিতি ডেকে আনে জনগণের ভাগ্যে।
কোনটা বড় কর্মসূচি
রাজনীতিবিদরা মনে করেন হরতালের চেয়ে অবরোধ কর্মসূচি বড়। এটা চূড়ান্ত ধাপের কর্মসূচি। কেননা দলের দাবির প্রতি যখন বেশির ভাগ মানুষ একমত পোষণ করে তখন এ ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায়। এটা না হলে হরতালে সফলতা পাওয়া যায় না। কেননা এখানে বেশিরভাগ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকতে হয়। না হলে কর্মসূচি সফল হয় না।
তারা মনে করে, এটা হচ্ছে ভোটের বা জরিপের মতো। হরতাল যত সফল ততই বোঝা যাবে দলের দাবির প্রতি মানুষের সমর্থন আছে। অন্যদিকে অবরোধে যেহেতু বাধ্য করার বিষয় থাকে, তাই মানুষের সমর্থন সম্পর্কে বোঝা যায় না। হরতাল হয় শান্তিপূর্ণ অন্যদিকে অবরোধ জোর করার থাকলে অনেক ক্ষেত্রে তা সহিংস হয়ে উঠতে পাবে।
তবে আমাদের দেশের এ ধরনের কর্মসূচির ধরণ অনেকটা একই। দুই ধরনের কর্মসূচিতে বাধ্য করার একটা ব্যাপার থাকে। কর্মসূচি ঘিরে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতে দেখা যায়।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, হরতালের পর ৭২ ঘণ্টার অবরোধের যে কর্মসূচি, সেটা আরেকটু হায়ায় ফরম্যাটের প্রোগ্রাম। হরতালের সঙ্গে এর পার্থক্য হচ্ছে—হরতালটা মানুষের সম্মতির ওপরে পালিত হয়ে থাকে। হরতাল মানে সবকিছু বন্ধ। এ কর্মসূচিতে আপনি জমায়েত নাও করতে পারেন। কিন্তু অবরোধের মধ্যে কিছুটা জামায়েতের প্রশ্ন আছে। রাজপথে অবস্থান নেওয়ার মতো বিষয় আছে।
তিনি বলেন, অবরোধের সময় রাজপথ, রেলপথ সব বন্ধ থাকে। রাজনৈতিক দলের কর্মীরা ছাড়াও ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষদের উপস্থিতির বিষয়টাও অবরোধ কর্মসূচিতে থাকে। এটা করা হয়ে থাকে সরকারকে বাধ্য করার জন্য, যখন তারা শান্তিপূর্ণ কোনও সমাবেশ করতে দেয় না তখন।