‘ফ্যাসিবাদবিরোধী সবার এক হওয়া দরকার’

বিলাল আহমদ চৌধুরী
বিলাল আহমদ চৌধুরী  © টিডিসি ফটো

সম্প্রতি ছাত্রদলের নেতৃত্বে ১৫টি ছাত্রসংগঠনের ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য’এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এরপর গুঞ্জন উঠেছে আরেকটি নতুন ছাত্রজোট গঠনের। এর নেতৃত্বে থাকছে ইসলামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো। এ নিয়ে তারা একাধিকবার বৈঠকেও বসেছিল। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসও এর একটি। ইসলামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নতুন জোট গঠনের সম্ভাবনা, ক্যাম্পাসে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান, ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি—এসব বিষয় নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বিলাল আহমদ চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক রিফাত হায়দার—

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইসলামী দলগুলোর নতুন আরেকটি জোট গঠন করার কথা শোনা যাচ্ছে। যদি হয় সেটা কীভাবে হবে?

বিলাল আহমদ চৌধুরী: ঐক্য যে হচ্ছে না তা নয়। ছাত্রদলের যে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন সেখানে সবাইকে চেয়েছিল তারা, যেন বড় জোট করে বৃহত্তর ঐক্য গড়া যায়। সেক্ষেত্রে বিএনপি বা ছাত্রদলের সঙ্গে ইসলামী ছাত্রসংগঠন সবগুলোকে এক করতে ওই প্লাটফর্মে (ছাত্রঐক্য) যাওয়ার কথা ছিল। কথাবার্তা হয়েছিল আমাদের মাঝে।  কিন্তু আমরা দেখলাম ছাত্রদল তার একটা জায়গায় অলরেডি নির্দিষ্টভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ইসলামপন্থীদের বাদ দিয়ে শুধু গুটিকয়েক বামপন্থীদের নিয়ে উনারা জোট করছে এটা উনাদের মত করে। উনাদের সাথে আমরা বসেছিলাম। এছাড়াও  কয়েকদিন আগে চরমোনাই পীরের ছাত্রসংগঠন ছাত্রআন্দোলন ৬/৭টি ইসলামী ছাত্রসংগঠন নিয়ে একটা জোট করার জন্য আলোচনা করছে। পরবর্তীতে আমরাও বিভিন্ন সময়ে বসার চেষ্টা করেছি। সবাইকে নিয়ে বৃহৎ জোট করার চেষ্টা করেছিলাম। এখন পর্যন্ত আলোচনা চলছে। 

তবে জোট হওয়ার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে দেখছি না। যে যার যার মতো করে এগিয়ে যাচ্ছে। জোট কতটুকু হবে আমরা জানি না। আমাদের ইচ্ছে ফ্যাসিবাদ বিরোধী যারা থাকবে, সবার এক হওয়া দরকার। দলমত নির্বিশেষে যারাই ফ্যাসিবাদের পতন চাইবে তারাই জোট করতে পারবে বা জোটে আসতে পারবে এমন একটা প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন। ইসলামী জোট হওয়ার সম্ভাবনা এখন খুব কম। তবে আমরা ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনসহ একসাথে বসেছিলাম। সবার সাথে আলোচনা চলছে। নির্বাচনী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কাছাকাছি যেহেতু এসেছি। সামনে ভালো কিছু হবে বলে আমি মনে করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইসলামী ছাত্রসংগঠনগুলোর একসঙ্গে ঐক্য কেন হয় না? 

বিলাল আহমদ চৌধুরী: ইসলামী ছাত্রসংগঠনগুলো একসাথে ঐক্য না হওয়ার বেশ কিছু কারণ আছে। ইসলামী সংগঠনগুলোর মাঝে বেশ কিছু মতপার্থক্য আছে। অনেক চিন্তা ভাবনার পার্থক্য আছে। এর কারণে স্বাধীনতার পর থেকে ইসলামী সংগঠনগুলোর ঐক্য হয়, আবার ভেঙে যায়। সাধারণত জোটগুলো নির্বাচন কেন্দ্রিক হয় অথবা কোনো ইস্যু কেন্দ্রিক হয়। সর্বশেষ ছাত্রসংগঠনগুলো ঐক্য হয়েছিল ২০০৭ সালের দিকে। এরপর ইসলামী সংগঠনগুলো এক হতে পারেনি। বিশেষত ছাত্রশিবির আর চরমোনাই পীরের সংগঠন ছাত্র আন্দোলন- এরা কোনোদিনও এক জায়গায় বা একটেবিলে বসতে পারে না। আদর্শিক হোক আর যে কারণেই হোক তারা এক হতে পারে না। আমরা যারা ইসলামী ছাত্র মজলিশ, আমরা যে কোনো ছাত্রসংগঠনের সাথে বসতে প্রস্তুত। কিন্তু এই ঐক্য হয় না, কারণ মতপার্থক্য রয়েছে সংগঠনগুলোর মাঝে। যার যার দলের নির্দিষ্ট নিয়মনীতি থাকে, এসব কারণেও ঐক্য হয় না। 

কিন্তু এক না হয়ে কাজ করা ইসলামপন্থীদের বড় দুর্বলতা। একজায়গায়, এক প্লাটফর্মে আসলে আজকে হয়ত ভালো একটা অবস্থান থাকতো। ভালো একটা প্ল্যাটফর্ম দাঁড়াতো। এটা খুবই দুঃখজনক যে ইসলামী সংগঠনগুলোর ঐক্য হয় না।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আপনাদের দাবি কী ?

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সুষ্ঠু একটি নির্বাচন চায়। মানুষের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা চায়। বাংলাদেশের এই কঠিন পরিস্থিতির উত্তরণ সবাই চায়। তবে একজোট হয়ে কাজ করার ইচ্ছে সবারই আছে। হয়ত বিভিন্ন কারণে হচ্ছে না। বিএনপির নেতৃত্বে  যুগপৎ আন্দোলন আমাদের সিনিয়র সংগঠনও করছে। আগামী ১৪ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ আছে। জেলায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। মানুষ এই সরকারের পতন চায় এটাই আমাদের মূল দাবি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে একচ্ছত্র আধিপত্য, অন্য ছাত্রসংগঠনের সেখানে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে?

বিলাল আহমদ চৌধুরী: ক্যাম্পাসের সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিতের জন্য আমাদের এই আন্দোলন। আমাদের সংগ্রাম আমরা করে যাচ্ছি। বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসে উঠার চেষ্টা করেছি। বারবার হামলার শিকার হতে হচ্ছে কারণ ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসগুলোতে একক আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে তারা এখানে দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে। আমরা মনে করি বাংলাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে  রাজনীতি করার অবারিত সুযোগ যে কারও থাকা উচিত।

বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমরা বেশ কিছু ঘটনা দেখতে পেয়েছি, সেখানে বিরোধী ছাত্রসংগঠনের উপর বারবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনাগুলো আমাদের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সাথে যায় না। ক্যাম্পাসে সবার অধিকার আছে রাজনীতি করার। সেটা ইসলামপন্থী হোক আর বামপন্থী হোক। সেখানে ছাত্রলীগ কাউকে রাজনীতি করার সুযোগ দিচ্ছে না। আমরা মনে করি, অন্তত সহাবস্থান নিশ্চিত হওয়া দরকার। কিন্তু কোনো সংগঠন কার্যক্রম চালাতে পারেনা ছাত্রলীগের আধিপত্যের কারণে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইসলামপন্থী রাজনীতিতে কেমন চ্যালেঞ্জ রয়েছে ? 

বিলাল আহমদ চৌধুরী: চ্যালেঞ্জতো আছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামকে বাদ দিয়ে অথবা ইসলামপন্থাকে বাদ দিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না। নির্বাচন আসলে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি সবাই ইসলামের দ্বারস্থ হতে হয়। ইসলামের গান গাইতে হয়। ইসলামের কথাবার্তা বলতে হয়। টুপি মাথায় দিয়ে ভোট চাইতে হয়। ইসলামকে ধারণ করেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া লাগে সব দলের। তাই আমি মনে করি, ইসলামপন্থার রাজনীতি খুব কঠিন কিছু না। এটা সহজ।


সর্বশেষ সংবাদ