দৈনিক মজুরিতে কাজ-পড়াশোনা, গুচ্ছে সেরাদের তালিকায় দিলওয়ার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২২, ০৬:৫০ PM , আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২২, ০৬:৫০ PM
ছোট থেকেই পড়াশোনায় তেমন একটা ভালো ছিলেন না মো. দিলওয়ার জাহান। তবে অত্যন্ত পরিশ্রমী। সম্প্রতি গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে সারাদেশে মোট ৫০ জন শিক্ষার্থী ৮০ নম্বরের ওপরে পেয়েছেন। দেলওয়ার তাদের মধ্যে একজন।
নিতান্ত হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান দিলওয়ার জাহান। পিতা মো. হারুনূর রশীদ পেশায় একজন প্লাম্বার। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি।
সিলেটের দ্যা এইডেড হাই স্কুল থেকে জিপিএ ৪.৮৩ পেয়ে এসএসসি এবং মদন মোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন দিলওয়ার।
তিনি জানান, ‘খুব ভালো ছাত্র কখনোই ছিলাম না। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই পরিশ্রমী ছিলাম। করোনা মহামারীর কারণে সারাদেশে লকডাউন দেওয়া হয়, আমি তখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। পরিবারের সবাই তখন চাকরিহীন। আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় সেসময় ভ্যান গাড়ি চালিয়েছি। দোকানে দোকানে মাল ডেলিভারি দিয়েছি।’
তিনি আরও জানান, ‘দৈনিক মজুরিতে কাজ করেছি। মাল ডেলিভারি দিয়ে এসে রাতে আবার পড়তে বসেছি। লকডাউন শেষে এইচএসসি পরীক্ষা হয় এবং এতে আল্লাহর রহমতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই।’
জানা যায়, এইচএসসি’র পর থেকেই মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন দিলওয়ার। তবে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা এক মাস পিছিয়ে যাওয়ায় কিছুটা দুর্ভোগে পড়েন তিনি।
এ ব্যাপারে দিলওয়ার জানান, ‘সে সময় জানানো হয়, পূর্ণ সিলেবাসে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা হবে। কিন্তু এতদিন ধরে সর্ট সিলেবাসের প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম। উপায় না পেয়ে একমাস রাতে না ঘুমিয়ে দৈনিক ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা পড়াশোনা করে কোনো মতে ফুল সিলেবাস শেষ করে পরীক্ষা দেই। রেজাল্টে আমি ৭৪.৫ নম্বর পেলেও কোনো সরকারি মেডিকেল পাইনি। কারণ আমার এসএসসি’তে জিপিএ-৫ ছিল না। তাই মেরিট স্কোর ২৭১.৯৫ এবং পজিশন ৫২৭৮তম আসে।’
তিনি আরও জানান, ‘এরপর কিছুদিন হতাশায় থাকি। ঢাবির পরীক্ষা চলে আসায় সময় নষ্ট না করে নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি চলে। ঢাবিতে ১৫৬০তম হয়ে মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাই।’
আরও পড়ুন : সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন আরও বাড়বে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্তই থমকে যাননি তিনি। নিজেকে আরেকটু ঝালাই করতে গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রকৌশল গুচ্ছে আবেদন করেন তিনি।
এ ব্যাপারে দিলওয়ার জানান, ‘আরেকটু ভালো সাবজেক্টে পড়ার ইচ্ছে ছিল, তাই জিএসটি ও ইঞ্জিনিয়ারিং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ফর্মও তুলি। প্রথমে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দেই, সেখানে ৮০ নম্বর পাই।’
তবে আক্ষেপ রয়েছে দিলওয়ারের। তিনি জানান, ‘এইচএসসিতে সাবজেক্ট ওয়াইজ মার্ক কম থাকায় বুয়েটের ফর্ম তুলতে পারিনি। তবে এরপর প্রকৌশল গুচ্ছে পরীক্ষা দিয়ে সারাদেশে জাতীয় মেধায় ৮৩তম স্থান দখল করি।’