কুয়েটে ৩৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কার : বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের ডাক
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৬ PM , আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০০ PM

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ৩৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কারের ঘটনাকে ‘অন্যায্য’ উল্লেখ করে ‘স্ট্যান্ড উইথ কুয়েট’ কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এদিকে কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর প্রশাসনের চলমান কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মানববন্ধন করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
আজ বেলা ১টায় বুয়েট ক্যাম্পাসে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীরাসহ প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
একই ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে আজ বেলা ২টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব জাহিদ আহসান বলেন, ‘কুয়েটে অন্যায্যভাবে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য মাহিন আহমদের ওপর বিএনপির হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ জরুরি সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করছে।’
এ ছাড়া কুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে কুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীর আয়োজনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর মিথ্যা মামলা এবং প্রহসনমূলক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করবেন তারা।
ইএসই ১৭ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী জিয়াউল হক তালুকদার দ্য ডেইলি ক্যাম্পসকে বলেন, কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেভাবে প্রহসন শুরু করেছে, আমরা তার প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছি।
অন্যদিকে কুয়েটের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) সংসদ। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
প্রতিবাদলিপিতে তারা শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উপাচার্যের অপসারণের দাবি জানান।
এর আগে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে প্রশাসন। সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কুয়েটের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা ডিভিশনের পাবলিক রিলেশনস অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহেদুজ্জামান শেখ স্বাক্ষরিত গণমাধ্যম পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৯৮তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় সভায় উপস্থাপন করা হয় এবং তদন্ত প্রতিবেদনটি সিন্ডিকেট কর্তৃক গ্রহণ করা হয়। উক্ত ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। হল না খোলা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের দাবি ছিল সোমবার রাত থেকেই হল খুলে দিতে হবে। এ ছাড়া সিন্ডিকেট সভা শেষে তারা অপেক্ষা করছিলেন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তের বিষয়গুলো তাদেরকে জানাবে। কিন্তু কেউ তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্তগুলো জানায়নি। হল খোলা ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরুর অনেকদিন দেরি রয়েছে। একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তাদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া হলে থাকতে না পারায় তাদের টিউশনি বন্ধের উপক্রম।
তারা জানান, ৩৭ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের তালিকা দেখে সকালে তারা আবার প্রেস ব্রিফিং করবেন।
জানতে চাইলে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থীরা আসলে ছোট মানুষ, তাই বিষয়টা তারা বুঝতে পারছে না। হল ও শিক্ষা কার্যক্রম একবার বন্ধ করলে পরবর্তী সময়ে খুলতে হলে একটু সময় লাগে। সিন্ডিকেট সভায় সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমি বলব তাদের সে সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া উচিত। তাদের টিউশনের বিষয়টা তো আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে নেই। এটার জন্য আমরা দুঃখিত। তবু আমাদের কিছু রুলসের মধ্যে থাকতে হয়।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের যদি কোনো দাবি জানায়, তাহলে আমি উপাচার্য হিসেবে সিন্ডিকেট সভায় তা উপস্থাপন করব। যত সিদ্ধান্ত সেখানেই নিতে হয়।
৩৭ জন শিক্ষার্থীর বিষয়ে উপাচার্য বলেন, শৃঙ্খলাবহির্ভূত কাজের অভিযোগে যে ৩৭ জন শিক্ষার্থীর তালিকা করা হয়েছে, তা অচিরেই নাম ধরে ধরে চিঠি ইস্যু করা হবে। তাদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে না, এটা সঠিক নয়। দ্রুত আমরা তাদের নাম-পরিচয় জানিয়ে দেওয়ার জন্য আমি বলে দিয়েছি।