কুয়েটের সামনে আরেক রাত কাটালেন শিক্ষার্থীরা, নতুন কর্মসূচির সম্ভাবনা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৫ AM , আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৩ AM

হল খুলে দেওয়ার দাবিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে আরেকটি রাত পার করেছেন। গত রোববার বেলা ৩টা থেকে তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করছেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী ২ মে থেকে হল খুলে দেওয়া এবং আগামী ৪ মে থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চান এখনই হল খুলে দেওয়া হোক।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনের সড়কে মাদুর বিছিয়ে অবস্থান করেন। রাতভর তাদের মশার কামড় সহ্য করতে হয়েছে। তারপরও দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
এদিকে আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তারা।
আরও পড়ুন : কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, হল খোলার সিদ্ধান্ত
শিক্ষার্থীরা বলেন, কুয়েটের সিন্ডিকেট সভায় যে ৩৭ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ এখনো তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি। কী অভিযোগে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তা-ও শিক্ষার্থীদের জানানো হয়নি। সাংবাদিকরা কুয়েট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা আপাতত বহিষ্কৃতদের নাম এবং কে কোন বিভাগের, তা জানাতে রাজি হননি।
এর আগে সোমবার রাতে কুয়েটের জরুরি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সভায় গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম আগামী ৪ মে থেকে শুরু এবং সব আবাসিক হল আগামী ২ মে থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে সন্তুষ্ট হননি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা হল না খোলা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন এবং রাতভর সেখানে অবস্থান করেন।
আরও পড়ুন : যেসব অঞ্চলে দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা
শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের দাবি অনুযায়ী হল খোলা হয়নি। হল খোলা ও একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর অনেক দিন দেরি আছে। একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তাদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ছাড়া হলে থাকতে না পারায় তাদের টিউশনি বন্ধের উপক্রম।
ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩৭ জনের ওই লিস্টে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। তারা বলেন, কুয়েটে যারা রাজনীতিতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিলেন, তাদের বহিষ্কারের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়েছিল। ওই লিস্টে যে ২২ জন শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ ছিল, তারা ছাত্ররাজনীতিতে অনুপ্রবেশ ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি করেন তারা।
এটা বিবেচনায় রেখে শিক্ষার্থীরা বলেন, যেহেতু ৩৭ জনকে বহিষ্কার করার কথা বলা হয়েছে, সুতরাং এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানতে চাইলে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থীরা আসলে ছোট মানুষ, তাই বিষয়টা তারা বুঝতে পারছে না। হল ও শিক্ষা কার্যক্রম একবার বন্ধ করলে পরবর্তী সময়ে খুলতে হলে একটু সময় লাগে। সিন্ডিকেট সভায় সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমি বলব তাদের সে সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া উচিত। তাদের টিউশনের বিষয়টা তো আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে নেই। এটার জন্য আমরা দুঃখিত। তবু আমাদের কিছু রুলসের মধ্যে থাকতে হয়।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের যদি কোনো দাবি জানায়, তাহলে আমি উপাচার্য হিসেবে সিন্ডিকেট সভায় তা উপস্থাপন করব। যত সিদ্ধান্ত সেখানেই নিতে হয়।
৩৭ জন শিক্ষার্থীর বিষয়ে উপাচার্য বলেন, শৃঙ্খলাবহির্ভূত কাজের অভিযোগে যে ৩৭ জন শিক্ষার্থীর তালিকা করা হয়েছে, তা অচিরেই নাম ধরে ধরে চিঠি ইস্যু করা হবে। তাদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে না, এটা সঠিক নয়। দ্রুত আমরা তাদের নাম-পরিচয় জানিয়ে দেওয়ার জন্য আমি বলে দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে শতাধিক আহত হন। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।