মন খারাপ! তবে জেনে নিন মন ভালো রাখার উপায়

মন ভালো রাখার কোন উপায়ই কি নেই?
মন ভালো রাখার কোন উপায়ই কি নেই?  © প্রতীকী ছবি

মন এক অদ্ভুত জিনিস। কারণে-অকারণেই যেমন বিষাদময় হয়ে উঠে, তেমনি আচমকাই আবার উৎফুল্ল হয়। পারিবারিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এমন বিভিন্ন কারণে মন খারাপ হতে পারে। তবে ব্যক্তিভেদে মন ভালো কিংবা খারাপের ধরণ ভিন্ন হয়ে থাকে। 

পারিবারিক কলহ, অর্থনৈতিক মন্দা, একাকিত্বতা, প্রেমে টানাপোড়েন, অগোছালো জীবনযাপন, ছাড়তে না পারা পুরোনো অভ্যাস, মাদকে আসক্তি ইত্যাদি কারণে সাধারণত অনেকের মনে প্রায়শই অশান্তি বিরাজ করে। তাই বলে মন কি সবসময় খারাপই থাকবে? মন ভালো রাখার কোন উপায়ই কি নেই?

না, আসলে এমনটা নয়। বিভিন্ন কারণে মন যেমন খারাপ হয়, তেমনি নানা উপায়ে মনকে ভালোও রাখা যেতে পারে। চলুন তবে মন ভালো রাখার কিছু উপায় সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক...

** মন খারাপের অনুভূতিগুলো কাছের কোন মানুষের সাথে শেয়ার করুন। দেখবেন মন অনেকটা হালকা হয়েছে। তবে মানুষটি অবশ্যই বিশ্বস্ত হতে হবে। সেটা হতে পারে কোন বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের কেউ কিংবা কাছের কোন মানুষ। যে আপনার আবেগ-অনুভূতি বুঝতে পারে। এমনকি আপনার ভালো লাগা কিংবা খারাপ লাগার মূল্য দিতে জানে। 

আরও পড়ুন: ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন কি না বুঝার উপায়

সারাজীবন সুখে থাকার কৌশল সম্পর্কিত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণার তথ্যমতে, জীবনে অবশ্যই এমন কেউ থাকা, যার ওপর স্বাচ্ছন্দ্যে আস্থা রাখা যায়। জীবনে এমন একজন মানুষের উপস্থিতি মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালনের পাশাপাশি বার্ধক্যকে বিলম্বিত করে। বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধন এক্ষেত্রে খুবই গুরত্বপূর্ণ।এটি আপনার জীবনকে সহজ করে দেয়, অন্যথায় আপনি নিমজ্জিত হতে পারেন দুঃখের অথৈ সাগরে।

** স্বল্প সময়ের বিশ্বস্ত এমন কোন মানুষের কাছে কোন গোপন কথা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা কিছুদিন পরে আবার তারাই আপনার মন খারাপের কারণ হতে পারে। 

** নিজেকে গোছানোর চেষ্টা করা। মন খারাপ থাকলে সব কাজই বিরক্তিকর হয়ে পড়ে। এমনকি সেই কাজগুলো করতে না পারলে আরো মন খারাপ হয়। এমন সময় নিজেকে শান্ত রাখুন। অল্প অল্প করে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো কারার মাধ্যমে নিজেকে গুছিয়ে নিন। 

আরও পড়ুন: দৈহিক সুস্থতা ও সৌন্দর্য বর্ধনে শসার উপকারিতা

** নেতিবাচক চিন্তা মুক্ত থাকুন। মন খারাপ হলে অনেক নেতিবাচক চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়। আমাকে দিয়ে কিছু হবে না, আমি পারি না, নিজেকে শেষ করে দিব- এমন সব চিন্তা করা বন্ধ করুন।

** হুটহাট সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকুন। মন খারাপ হলে অনেক সময় মাথা ঠিক থাকে না। ফলে হঠাৎই অনেককিছু ঘটে যায়। যেমন, রাগের মাথায় অনেক টাকা খরচ করা, শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নষ্ট করা, প্রয়োজনীয় কোন জিনিস ভেঙে ফেলা কিংবা অচেনা মানুষ কিংবা অজানা যায়গায় চলে যাওয়া। আবেগের বসে এসব কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা পরবর্তীতে এসব কাজই আপনার বিপদের কারন হতে পারে। যেটা আপনকেই আবার কষ্ট দিবে।

** একাকিত্ব অবস্থা পরিহার করুন। কেননা একাকিত্ব মুহুর্তেই যতসব নেতিবাচক চিন্তা মাথায় আসে। তাই মন খারাপ হলে প্রিয় কোন জায়গা থেকে হেঁটে আসুন। অথবা বন্ধুবান্ধব কিংবা প্রিয়জনদের সাথে আড্ডা দেন। কথা বলুন, মন খুলে হাসুন। কেননা হাসি মনকে প্রফুল্ল রাখে।

আরও পড়ুন: আখের রসের স্বাস্থ্য উপকারিতা

** নিজের যত্ন নেন। মন খারাপ হলে আয়নার সামনে বসে নিজেকে পরিপাটি করুন। নিজের পছন্দের কোন খাবার রান্না করুন কিংবা বন্ধু/নিকটজনদের সাথে রেস্টুরেন্টে যান। দেখবেন মন ভালো হয়ে গেছে।

** শরীরচর্চা করুন। নিয়মিত শরীরচর্চা আপনার মনকে প্রফুল্ল রাখার পাশাপাশি আপনার মেজাজকে সতেজ রাখবে। 

** সন্তুষ্ট থাকতে শিখুন। কেননা অধিক প্রত্যাশা মানুষের সুখ কেঁড়ে নেয়। অন্যের এটা আছে, আমার কেন সেটা নেই- এমন চিন্তা মনের আনন্দ কেঁড়ে নেই। আপনার অবস্থা আপনি জানেন। তাই প্রাসঙ্গিক প্রত্যাশা করে নিজেকে সন্তুষ্ট রাখুন। এমনকি অধিক প্রত্যাশা করা মানুষগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। দেখবেন অনেক সুখে আছেন। 

** নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। কথায় আছে, 'অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা'। তাই আপনি যদি শিক্ষার্থী হোন, তবে নিয়মিত পড়াশোনার অভ্যাস গড়ে তুলুন। অথবা কর্মজীবী হলে কাজে বেশি করে মনোযোগী হোন। সৃজনশীল চিন্তা করুন। দেখবেন নতুন কিছু জানার মাধ্যমে মন প্রফুল্ল হয়ে উঠেছে।

** ধর্মের প্রতি অনুরাগী হোন। বিভিন্ন ধর্মে নিজের খারাপ অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর নির্দেশনা রয়েছে। একইভাবে ইসলাম ধর্মেও বান্দার মন্দ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে নাজাজের মাধ্যমে সিজদায় অবনত হয়ে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করার কথা বলা হয়েছে। তাই মন খারাপ হলে নামাজে দাঁড়িয়ে যান। এতে আল্লাহ বান্দার খারাপ অবস্থার পরিবর্তন ঘটান। এমনকি সর্বোত্তম মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেন যা বান্দা চিন্তাও করেনি। তবে বান্দাকে এক্ষেত্রে ধৈর্য্যশীল হতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ