মেডিকেলে ১০ নম্বর কাটার চিন্তা, কী ভাবছেন শিক্ষার্থীরা

ভর্তি পরীক্ষার্থী
ভর্তি পরীক্ষার্থী  © ফাইল ছবি

সরকারি মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পরও দ্বিতীয়বার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ১০ নম্বর কাটার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমবার সরকারি মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে ৭ দশমিক ৫ নম্বর কাটা হয়। যারা প্রথমবার কোথায় ভর্তির সুযোগ পান না তাদের ক্ষেত্রে কাটা হয় ৫ নম্বর। তবে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে সরকারি মেডিকেলে ভর্তি থাকার পরও দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মোট জিপিএ নম্বর থেকে ১০ নম্বর কাটা হতে পারে।

শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশের দাবি, যারা সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ফের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন তাদের কারণে অনেকেই ভালো নম্বর পেয়েও ভর্তির সুযোগ পান না। যারা প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়েছেন তারা মেধাবী। দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার কারণে তারা অনেক লম্বা সময় ধরে প্রস্তুতির সময় পান। পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে তারা ভালো মেডিকেল কলেজে চলে যান। এতে একদিকে যেমন সরকারি মেডিকেলে আসন ফাঁকা হচ্ছে; অন্যদিকে মেধাবীরা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের অপর একটি পক্ষ বলছে, সেকেন্ড টাইমারদের ১০ নম্বর কাটার বিষয়টি কোনো দিক থেকেই যৌক্তিক নয়। কেননা একজন শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকতে পারে ঢাকা মেডিকেলে পড়ার। তবে প্রথমবার কম নম্বরের কারণে সে যদি ঢামেকে চান্স না পেয়ে নোয়াখালীতে চান্স পায় তাহলে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢামেকে আসতে পারবে। প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় নানা কারণে অনেকেই ভালো করতে পারেন না। তবে সেজন্য তাদের নম্বর কাটার বিধান কোনো ভাবেই কাম্য নয়।

মো. মাজহার নামে এক শিক্ষার্থী জানান, সরকারি মেডিকেলে ভর্তি থেকেও দ্বিতীয়বার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কাম্য নয়। মেডিকেলের একটি সিটের পেছনে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। সেখানে একটি আসন দখলে রেখে আবার আরেকটি আসনের জন্য লড়াই করাটা সমীচীন নয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এমন চিন্তা-ভাবনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। দ্রুত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হোক।

বিশ্বজিৎ নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের নাম্বার কাটার বিধান ঠিক নয়। পূর্বের নিয়ম মেনে নেওয়া গেলেও কিন্তু ১০ নম্বর কাটলে অবিচার করা হবে। কারণ অনেকেই প্রথমবার ভালো মেডিকেল পায় না। তারা মেডিকেলের পড়ালেখা বাদ দিয়ে কেবল ভর্তি প্রস্তুতিই নেয়। ধৈর্য্য ধরে লেখাপড়া করে স্বপ্ন পূরণের জন্য। কিন্তু ১০ নম্বর কেটে নিলে মেডিকেলে চান্স পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে যাবে,তাদের স্বপ্নে কুঠারাঘাত করা হবে। কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী এ বছরও পূর্বের ন্যায় নিয়ম কানুন বহাল রাখা হোক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের প্রথমবর্ষের এক ছাত্রী জানান, আমার ইচ্ছা ঢাকার মধ্যে কোনো মেডিকেলে পড়ার। তবে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় কম নম্বরের কারণে ঢাকার মেডিকেল আসেনি। সেজন্য এবার আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে ১০ নম্বর কাটার পরিকল্পনা শোনার পর থেকে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ একেবারে বন্ধ করে দিক। তবে এভাবে নাম্বার কাটার বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, যারা প্রথমবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন, তারা প্রস্তুতির জন্য সেভাবে সময় পান না। তবে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা এক বছর ধরে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পান। এতে এক ধরনের বৈষম্য দেখা দেয়। এছাড়া সরকারি মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পরও অনেকে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেন সেজন্য ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে সেকেন্ড টাইমারদের ১০ নম্বর কর্তনের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।

তাদের মতে, সরকারি মেডিকেলে ভর্তি থাকা শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করতে এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। খুব দ্রুত স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সাথে সভা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে কিছু আলোচনা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে মেডিকেলে দ্বিতীয়বার ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত জিপিএ’র উপর ৫ মার্ক কর্তন করা হয়। আর প্রথমবার সরকারি কলেজে চান্স পেয়েছে এমন শিক্ষার্থী দ্বিতীয়বার আবার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে চাইলে তার ৭.৫ নম্বর কর্তন করা হয়। 


সর্বশেষ সংবাদ