কোটি টাকা চাঁদা দাবি, ফাঁদ পেতে ধরা হলো জানাক ও যুবদল নেতাসহ ৫ জনকে

জানাক ও যুবদল নেতাসহ ৫ জনকে
জানাক ও যুবদল নেতাসহ ৫ জনকে  © সংগৃহীত

এক ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা পরিচয়ে। জিম্মিদশা থেকে ব্যবসায়ীকে মুক্ত করতে পরিবারের সদস্যরা ৫০ লাখ টাকা জোগাড় করার প্রতিশ্রুতিতে টাকা আনতে গিয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে ধরা পড়লেন চক্রের একাধিক সদস্য। 

তাদের মধ্যে রয়েছে, জাতীয় নাগরিক কমিটির মহানগর কমিটির সদস্য ইমন মোল্লা, খুলনা মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাহাবুব হাসান পিয়ারু, সাংবাদিক জিয়াউস সদাত, ইমনের সহযোগী জয় হাসান এবং সাকিব রহমান। 

শনিবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরীর বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অপহৃত আওয়ামী লীগ নেতাকে বসুপাড়া এলাকার একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।

এদিকে ফাঁদ পাতা হোয়াটসঅ্যাপের কথোপকথন থেকে জানা গেছে, জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা পরিচয়ে জিম্মি করা ব্যবসায়ীর ছেলের মোবাইলে রিং দিয়ে এক কোটি (কোটি উল্লেখ না করে শুধুমাত্র এক উচ্চারণ করা হয়) টাকা চাঁদা দাবি করে বলা হয়, ‘শোনো আমি বলি তোমাকে, গতকালতো তোমাকে একটা কথা আমি বলে আসছিলাম তাইনা? আমি একের কথা বলছিলাম। এ ঘটনা তো আমি ঘটাইনি। নিশ্চয়ই এর ওপরে আরো কেউ না কেউ আছে। এটাতো বোঝো তোমরা। বা কারোনা কারো সিদ্ধান্তে এটা হচ্ছে। এটা যদি না বোঝো তাহলে তো বোকামি হবে। ঢাকার লোকজন এর সঙ্গে ইনভল্ভ। এখন আমি বলি, গতকালকে আমি তোমাকে বলে আসছি হার্ডভাবে যে, একের নিচে এখানে কোনো সমাধান হবে না। তারপরেও আজকে তোমাদের সার্বিক অবস্থা দেখে আমি ফাইট দিয়েছি, কথা বলেছি, আমি আমার জায়গা থেকে ফাইট দিয়ে বলেছি এক কোনোভাবে সম্ভব না। ফিফটি দিতে হবে।’ 

এভাবে ছয় মিনিট ৫০ সেকেন্ডের কথায় চাঁদাবাজির পুরো চিত্র ফুটে উঠে। ওই চক্রের সঙ্গে ৩০ জন সদস্য রয়েছে বলেও কথোপকথনে বেরিয়ে আসে। রাতে টাকা নেওয়ার জন্য ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে যান চক্রের তিনজন। এসময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আশপাশে অবস্থান করে হাতে-নাতে ওই তিনজনকে আটক করে। পরে তাদের নিয়ে জিম্মি থেকে ব্যবসায়ীকে উদ্ধারে অভিযানে নেমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাকিদের গ্রেপ্তার করেন।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক মো. তৈমুর ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী নুর আলমের ছেলে খুলনার বসুপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। সেই সুবাদে নূর আলম খুলনায় অবস্থান করনে। শুক্রবার রাতে ওই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়। তাকে বসুপাড়ার একটি বাড়িতে রেখে ছেলের কাছে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। নুর আলমের ছেলে বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশকে জানান। অপহরণকারী দলের সদস্যরা মুক্তিপণ নিতে নগরীর ময়লাপোতা হোটেল গ্রান্ড প্লাসিডের সামনে আসলে প্রথমে ইমন মোল্লাকে আটক করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নগরীর বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে বাকি আসামিদের আটক করে পুলিশ।

গোয়েন্দা পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, এর আগেও ইমন মোল্লা জাতীয় নাগরিক কমিটি ও ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদা‌ আদায় করেছে। যুবদল নেতা পিয়ারুর বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।


সর্বশেষ সংবাদ