এই সরকার দেখাচ্ছে, মেধাবীদের কীভাবে মূল্যায়ন করা যায়
- অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
- প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৪ PM , আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৪ PM

এই ইন্টেরিম ইউনূস সরকারকে কি অনির্বাচিত সরকার বলা যায়? এই সরকারকে কি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলা যায়? না এই দুটির কোনটির মধ্যেই বর্তমান সরকার পড়ে না। এইটা একটা ইউনিক সরকার যার কোন উদাহরণ এর আগে নাই। এই সরকারকে অনির্বাচিত তারাই বলে যারা রাজনীতির পানিকে ঘোলা করে মাছ শিকার করতে চায়। এই সরকার একটা ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ম্যান্ডেট হলো, গত ৫৪ বছরের কলুষিত রাজনীতিকে মেরামত করা।
এই সরকার দেখাচ্ছে মেধাবীদের কীভাবে মূল্যায়ন করা যায়। মেধাবীদের মূল্যায়ন করে তাদের সঠিক জায়গায় বসালে কিভাবে কতটুকু লাভ হয় তা উদাহরণসহ আগে বোঝাতে চায় এই সরকার। এই সরকারের সময় কতগুলো নিয়োগের দিকে চোখ রেখে একটু দেখুন, তাহলেই বুঝবেন ৫৪ বছরের রাজনৈতিক সরকার আর এই ৭ মাসের ইন্টেরিম সরকারের নিয়োগ।
প্রথমেই দেখুন, কাকে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। উনি হলেন কিংবদন্তি তুলি আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ ইস্তিয়াক আহমদের ছেলে সৈয়দ রাফাত আহমেদ। আর তার মা ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদ। আর দাদা ছিলেন বিচারপতি ইব্রাহীম, যিনি একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও ছিলেন।
সৈয়দ রেফাত আহমেদ কে আসুন তাকে চিনি। তিনি অক্সফোর্ড এবং হার্ভার্ডে লেখাপড়া করেছেন। আর পিএইচডি করেছেন আমেরিকার বিখ্যাত টাফট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আর সম্প্রতি ২০২৫ সালের ২৬ মার্চ, তার অসাধারণ কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াডহ্যাম কলেজ তাকে আজীবনের জন্য সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।
এই মানের প্রধান বিচারপতি এর আগে বাংলাদেশ কখনো দেখেছে? রাজনৈতিক সরকার নিয়োগ দেয় চিপাচাপা থেকে খুঁজে এমন মানুষকে নিয়োগ দেয়, যে সরকারি দলকে সাপোর্ট করবে। এরপর দেখুন বাংলাদেশের ব্যাংকের গভর্নর পদে নিয়োগ পাওয়া ড. আহসান এইচ মানসুর। তার সঙ্গে বিগত আওয়ামীলীগ আমলের তিনজন গভর্নরকে একটু মিলিয়ে দেখেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন।
শেখ হাসিনার নিয়োগকৃত শেষ গভর্নর ছিলেন আব্দুর রউফ। যিনি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে নিম্ন গ্রেড ‘ডি’! পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভারতের গভর্নরের চেয়ে নিম্নমানের গ্রেড। কেন এত বাজে নিয়োগ দিয়েছিলেন? যেন টাকা পাচার সহজ হয়।
তারপর দেখুন আশিক চৌধুরীর নিয়োগকে। তিনি একজন বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার এবং চার্টার্ড ফাইনান্সিয়াল অ্যানালিস্ট। ২০২৪ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (BEZA)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি তিনি একটা বিনিয়োগ সম্মেলন করেছেন এবং সেখানে তার দেওয়া প্রেজেন্টেশন নিয়ে এখন পুরো বাংলাদেশ আলোচনা করছে।
ভালোমন্দ হিসেব পরে। এর আগে এরকম তুমুল আলোচনার জন্ম কেউ কি দিতে পেরেছে? অথবা এই পদে থাকা কাউকে নিয়ে কি কখনো আলোচনা হয়েছে? বরং এই পদটি যে এত গুরুত্বপূর্ণ, সেটিই আমাদেরকে রাজনৈতিক সরকার বুঝতে দেয়নি। যতটুকু দেখেছি এর আগে এই ধরণের সম্মেলন আয়োজন করে কেবল তোষামোদের মহড়া হয়েছে।
আরো পড়ুন: বদলে গেলে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম
ড. ইউনূস সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর উপদেষ্টা হিসাবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে সবাই না হলেও অনেকের যোগ্যতা এমন ছিল যে, এমন মানের মন্ত্রী কোন রাজনৈতিক সরকারের আমলে কল্পনাই করা যায় না।
বুঝতে হবে এই সরকারের সেন্টার অফ পাওয়ার কেবল ড. ইউনূসের হাতেই না। সেন্টার অফ পাওয়ার সেনাবাহিনীর প্রধানের হাতেও কিছুটা আছে। সুতরাং যারা নির্বাচন নির্বাচন বলে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে ফেলছে, তারা সেটা করছে ভয়ে। তারা বুঝে ফেলছে, এই সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে এত জনপ্রিয় হয়ে যাবে যে, রাজনৈতিক দলের রাজনীতিকেই মানুষ অপ্রয়োজনীয় ভাবতে শুরু করতে পারে।
সমস্যা এখানেই। কারা দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছে, একটু পরখ করে দেখুন। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা মাত্রই শুরু হবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই বলে নতুন আরেক আবদার। ওই আব্দারের হাত ধরে শুরু হবে নতুন ক্রাইসিস। এই সুযোগের অপেক্ষায় আছে অনেকেই।
লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)