১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পত্রিকায় যা ছাপানো হয়েছিলো

পত্রিকা
পত্রিকা  © সংগৃহীত

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। ৭২ বছর আগের এই দিনে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার দাবিতে শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অকুতোভয় বীর সন্তানরা নেমে এসেছিলেন রাজপথে। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিকসহ আরও অনেকে। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ১৭ জন। সেই সময়ের পত্রিকা থেকে সেই দিনের একটা চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। কী ছিল সেই সব খবরে?

২২ তারিখের দৈনিক আজাদের প্রকাশিত সংবাদে বলা হয় বিকাল চারটায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের সামনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. সালাহ উদ্দিন (২৬) ঘটনাস্থলে নিহত হন। ১৭ ছাত্র আহত হন। আহতদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাতে আটটার পর আহতদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুল জব্বার, আব্দুল বরকত, রফিক উদ্দিন আহমেদের মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন: ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

একুশের মিছিলের আহতদের একটি তালিকাও প্রকাশ করা হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আনোয়ারুল এছলাম (২৪), জগন্নাথ কলেজের এ আর ফৈয়াজ (১৯), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুদ্দিন খান (২২), সরকারি শুল্ক বিভাগের পিয়ন আব্দুস সালাম (২৭), এম এ মোতালেব (২৪), এলাহী বক্স (৪০) মনসুর আলী (১৬), বছিরউদ্দিন আহমদ (১৬), তাহজুল এছলাম (১৯), মাসুদুর রহমান (১৬), আব্দুস সালাম (২২), আক্তারুজ্জামান (১৯), এ রাজ্জাক (১৭), মোজাম্মেল হক (২৩), সুলতান আহমদ (১৮), এ রশিদ (১৪), মোহাম্মদ।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এক ছাত্রসভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে পুলিশের গুলি চালানোর ফলে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্রদের ওপর পুলিশের কাঁদুনে গ্যাস প্রয়োগ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর বলেন, ছাত্ররা তার নিকট পুলিশ কর্তৃক কাঁদানে গ্যাস প্রয়োগ সম্পর্কে অভিযোগ করলে তিনি পুলিশ কর্তৃপক্ষের নিকট কারণ জানতে চেয়েছেন জানান।

পুলিশ কর্তৃপক্ষ ভাইস চ্যান্সেলরকে বলেন, ছাত্ররা তাদের প্রতি ইট নিক্ষেপ করার এবং তাদের গাড়ি প্রস্তর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত করায় তারা কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছিল। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তার উপস্থিতি থাকাকালে তিনি ছাত্রদের মধ্যে অসংযত উচ্ছৃঙ্খলতার পরিচয় পাননি। তিনি তার সঙ্গে যে সকল অধ্যাপক ছিলেন তারা পুলিশের কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের পূর্বে কোনও প্রস্তরখণ্ড নিক্ষেপ হয়েছিল বলে শোনেন নাই, দেখেন নাই।

২২ তারিখে আজাদের আরেকটি নিউজ ছাপা হয়- গুলি চালানো সম্পর্কে তদন্তের আশ্বাস পাওয়া গেছে। পূর্ববঙ্গ পরিষদের অধিবেশন আরম্ভ হওয়ার অব্যবহিত পরে কংগ্রেস মহেন্দ্রনাথ দাবি করেন যে পরিষদের নেতা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হাসপাতালে ভর্তি করে আহতদের অবস্থা দেখে এসে পরিষদে বিবৃতি দিতে হবে।

পরিষদ সদস্যদের জানানো হয়, বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলি চালনা সম্পর্কে তদন্ত করবেন এবং কোনও পুলিশ কর্মচারী অপরাধী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে। আরও বলা হয়, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে ১৪৪ ধারা জারি করা অসঙ্গত হয়েছিল কিনা তা ভিন্ন ব্যাপার। তবে তা যখন জারি করা হয়েছে তখন তা মেনে চলা নাগরিকদের পক্ষে কর্তব্য বলেও কর্তৃপক্ষ দাবি করে।

আরও পড়ুন: একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

বেলা ১০টা থেকে ছাত্র নয় এমন কতগুলো লোকের পরিচালনায় ছাত্ররা পুলিশ বেষ্টনি ভেদ করে ১৪৪ ধারা অমান্য করে শোভাযাত্রা বের করতে চেষ্টা করে। তারা পথচারী ও মোটরগাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এসময় গুলি চালানো সম্পর্কে তদন্ত করা হবে বলেও জানানো হয়। বিরোধীদলের নেতা বসন্ত কুমার দাস পুলিশের কাজকে হীনতার পরিচয় বলে বর্ণনা করেন এবং তার সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে প্রকৃত অবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য পরিষদের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ জানান।

নুরুল আমিন বলেন, আমাকে এই ঘটনার পটভূমি জানতে হবে। আমি এ ব্যাপারে জানিয়েছি যে আমি এ ব্যাপারে তদন্ত করব।


সর্বশেষ সংবাদ