বাগেরহাটে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, শিক্ষকদের মানববন্ধন

মানববন্ধন করছেন শিক্ষকরা
মানববন্ধন করছেন শিক্ষকরা  © টিডিসি ছবি

বাগেরহাটের চিতলমারী কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মের বিরুদ্ধে ৪৫ লাখ ৩৮ হাজার ২৭৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। আত্মসাৎকারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন সহকারী শিক্ষকরা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।

রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে চিতলমারী উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন শিক্ষকরা।

অনিয়মের বিচার চাওয়ায় সুশান্ত কুমার ব্রহ্ম নামের এক সহকারী শিক্ষককে লোক দিয়ে মারপিট ও লঞ্চিত করেছেন প্রধান শিক্ষক। এসব নিয়ে কয়েকদিন ধরে উপজেলা জুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এবার প্রভাবশালী ওই প্রধান শিক্ষকের বিচার ও অপসারণের দাবিতে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা রুখে দাঁড়ান।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক তপন কুমার বিশ্বাস, সহকারী শিক্ষক প্রভাত কুমার মজুমদার, মো. আতিয়ার রহমান, সুশান্ত কুমার ব্রহ্ম, অপূর্ব কুমার বিশ্বাস, স্মৃতি কণা মজুমদার, স্মৃতি ঘরামী ও আশিষ কুমার বিশ্বাস।

বক্তারা জানান, যোগদানের পর থেকে প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিধান চন্দ্র ব্রহ্ম বিদ্যালয়ের আয় ব্যয়ের কোন হিসাব দেয় না। এর প্রেক্ষিতে ২৬ অক্টোবর শিক্ষক পরিষদের সভায় প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মের আমলে আয়-ব্যয়ের সকল হিসাব নিরীক্ষার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি প্রধান শিক্ষকের দাখিলকৃত হিসাব সংক্রান্ত নথিপত্র নিরীক্ষা করে ২৬ নভেম্বর হিসাব দাখিল করেন। নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্ম ৪৫ লাখ ৩৮ হাজার ২৭৬ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয়ে আমরা শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করি। অভিযোগ করার কারণে সে আমাদের নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়েছে। সব শেষ শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে সহকারী শিক্ষক সুশান্ত কুমার ব্রহ্মকে লোকজন দিয়ে মারপিট ও লাঞ্ছিত করিয়েছেন প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্ম। আমরা তার অপসারণ এবং অর্থ আত্মসাতের বিচার চাই।

মারধরের শিকার সহকারী শিক্ষক সুশান্ত কুমার ব্রহ্ম বলেন, ‘বিদ্যালয় তো প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত সম্পদ নয়, যে সে যা ইচ্ছে তাই করবে। তার আর্থিক অনিয়মের বিচার চাওয়ায় তিনি তার আত্মীয়দের দিয়ে আমাকে মারধর করিয়েছেন। আমি এর বিচার চাই।’

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘মাত্র ৯ বছরে বিদ্যালয় থেকে ৪৫ লাখ ৩৮ হাজার ২৭৬ টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক। তার সাথে আওয়ামী লীগের নেতারাও ছিলেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দেওয়া টিউশন ফি, ফটক তৈরির টাকা, সরকারি অনুদান এমন কোন খাত নেই যে খাত থেকে সে টাকা আত্মসাৎ করেনি। আমরা এই প্রধান শিক্ষকের অপসারণের পাশাপাশি বিচার চাই।’

অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্ম বলেন, ‘ওরা আমার স্বাক্ষর জাল করে নিরীক্ষা কমিটি করেছে। আমি কোন অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত নই।’

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মোল্লাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হরেকৃষ্ণ অধিকারী বলেন, ‘আসলে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস কুমার পাল ১০ দিনের একটি প্রশিক্ষণে ঢাকায় রয়েছেন। আমি দায়িত্বে আছি। এ বিষয়ে কোন তথ্য নেই আমার কাছে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস কুমার পাল আসলে তার সাথে কথা বলার অনুরোধ করেন এই কর্মকর্তা।

১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০১৬ সালে বিধান চন্দ্র ব্রহ্ম প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে বারবার শিক্ষকদের জিম্মি করা, শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ ব্যবহার ও আর্থিক অনিয়ম করার অভিযোগ ‍রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১৩ জন শিক্ষক, ৫ জন কর্মচারী ও ২৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ