জাবিতে প্রক্সি দিতে এসে আটক ঢাকা কলেজছাত্র সাগর

প্রক্সি দিতে এসে আটক ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সাগর হোসেন
প্রক্সি দিতে এসে আটক ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সাগর হোসেন  © টিডিসি ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ভর্তি পরীক্ষায় বৈধ শ্রুতি লেখকের পরিবর্তে অবৈধ শ্রুতি লেখক দিয়ে প্রক্সি দিতে এসে সাগর হোসাইন রোহান নামে ঢাকা কলেজের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের 'সি' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ৬ষ্ঠ শিফট চলাকালে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ১৩০ নং কক্ষ থেকে তাকে থেকে আটক করা হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণি থেকে হওয়ার কারণে ভর্তি পরীক্ষায় অন্ধ বা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শ্রুতি লেখক হিসেবে সর্বোচ্চ দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে ডিন বরাবর আবেদনের মাধ্যমে নিয়োগ করা যায়।

তবে আটককৃত ব্যক্তি সাগর হোসেন ওরফে রোহান নিজেকে ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের ৩য় বর্ষের স্নাতক শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দেন। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। তার বাবার নাম লিটন আলী।

নিরাপত্তা অফিস সূত্রে জানা যায়, মো. টুটুল হাসান নামের এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভর্তিচ্ছুর হয়ে প্রক্সি দিতে আসেন রোহান। এসময় রোহানের এসএসসি সার্টিফিকেটের সঙ্গে তার ছবির মিল না পেয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সন্দেহ হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ রোহান ও টুটুল হাসানকে নিরাপত্তা শাখায় হস্তান্তর করেন ওই শিক্ষক। 

অভিযুক্ত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী টুটুল জানান, প্রক্সি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য শ্রুতি লেখক হিসেবে কাউকে নিয়োগ করতে চেয়েছিলো সে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২য় বর্ষের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শাওনকে প্রক্সি লেখক খুঁজে দেওয়ার জন্য বলেন। শাওন প্রক্সি লেখকের জন্য মিরপুর বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী শফিকের সাথে যোগাযোগ করেন। পরে শাওন প্রক্সি লেখকের জন্য তিন হাজার টাকা দিতে বলেন টুটুলকে এবং চান্স পেলে দশ হাজার টাকা দেওয়ার চুক্তির কথা স্বীকার করেন টুটুল।

এ বিষয়ে শাওন বলেন, টুটুলের কাছ থেকে নগদ এক হাজার টাকা নিয়েছে ও পরে বিকাশে দুই হাজার টাকা নেওয়ার কথা ছিল। যিনি প্রক্সি দিতে এসেছেন তার যাতায়াত ও নাস্তা বাবদ এটা নিয়েছি। চান্স পাওয়ার পর দশ হাজার টাকা নেওয়ার কোনো চুক্তি হয় নি।

প্রক্সি দেওয়ার বিষয়ে অভিযুক্ত রোহান বলেন, আমি ভাবিনি বিষয়টা এমন হবে। আমি শুধু মাত্র শ্রুতি লেখক হিসেবে পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম। তবে নাস্তা বাবদ তারা কিছু টাকা দিতে চেয়েছে। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, অভিযুক্তকে সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের পরীক্ষার হল থেকে আটক করা হয়। তিনি অভিযোগের সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত বিদ্যমান বিধি-বিধান অনুযায়ী তাকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ ঘটনায় জড়িত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শাওন ও পরীক্ষার্থী টুটুলের শাস্তির বিষয়ে প্রক্টর বলেন, যেহেতু তারা দুজনেই অন্ধ তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের রাষ্ট্রীয় আইনে শাস্তি দেওয়া হয় নি। তবে শাওনের বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (আশুলিয়া সার্কেল) মো. আশরাফুর রহমান প্রক্সি কান্ডে জড়িত থাকায় রোহানকে পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন ১৯৮০ অনুযায়ী ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও নগদ ২০০ টাকা অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত করেন। 


সর্বশেষ সংবাদ