ক্যাম্পাসে অপরাধ বাড়ছে, অধরা দুর্বৃত্তরা

জাবিতে বান্ধবীসহ ছিনতাইয়ের শিকার ঢাবি শিক্ষার্থী 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দিন দিন বাড়ছে অপহরণ-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা, কমছে নিরাপত্তা। সম্প্রতি বান্ধবীসহ ঘুরতে এসে অজ্ঞাতনামা তিন ব্যক্তির কাছে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। কর্তৃপক্ষ বলছে, শীতে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের আধিক্যের ফলে অধিক জনসমাগমে এমন ঘটনা ঘটছে। 

গত রোববার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাবি শিক্ষার্থী মামুন অর রসিদ তার বান্ধবীকে নিয়ে সিএমবি এলাকা থেকে জাবিতে আসার উদ্দেশ্যে রওনা হন। তারা আশুলিয়া থানাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হলের গেটের সামনে পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা তিনজন ব্যাক্তি তাদের পথ রোধ করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মামুন অর রসিদ সাভার আশুলিয়া থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। 

অভিযোগসূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগীদের অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা ধারালো চাকু বের করে পিঠে ধরে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ সময় তাদের কাছে যা আছে, বের করে দিতে বলেন। পরে তারা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক নগদ ৫০০ টাকা ও ফোনের মাধ্যমে বিকাশ থেকে ৭৫০ টাকা নিয়ে নেয়।

মামুনকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি ও লাথি মেরে জখম করে এবং বান্ধবীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে ভুক্তভোগীদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন জড়ো হলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। 

ধারালো চাকু বের করে পিঠে ধরে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ সময় তাদের কাছে যা আছে, বের করে দিতে বলেন। পরে তারা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক নগদ ৫০০ টাকা ও ফোনের মাধ্যমে বিকাশ থেকে ৭৫০ টাকা নিয়ে নেয়।

ভুক্তোভোগী মামুন অর রসিদ বলেন, জাহাঙ্গীরনগরে নামার পর দুজন অপরিচিত ব্যক্তি আমাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকেন। পরে তাদের সঙ্গে আরেকজন যোগ দেন। তারা আমাদের সেন্ট্রাল ফিল্ডের এক পাশে নিয়ে যায়। তারপর পেছন থেকে চাকু ধরে প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং জোরপূর্বক মানিব্যাগ ও বিকাশ থেকে টাকা নিয়ে নেয়। এছাড়াও তারা আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে এবং এলোপাতাড়ি কিলঘুষি লাথি মেরে জখম করে।

এ ঘটনা ছাড়াও চলতি মাসের গত ১৯ ও ২০ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম ছায়ামঞ্চ ও মীর মশাররফ হোসেন হল এলাকায় এমন কয়েকটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৯ জানুয়ারি পাখি মেলায় ঘুরতে এসে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশ নামের এক শিক্ষার্থী সপ্তম ছায়ামঞ্চ এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন। এসময় আকাশের সাথে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো তিনজন নারী শিক্ষার্থী ছিল। একটি হলুদ বাইকযোগে এসে দুষ্কৃতিকারীরা ছিনতাই করে। পরে মীর মশাররফ হোসেন হলের রাস্তা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।

গত ২০ জানুয়ারি একই জায়গায় ঘুরতে এসে ছিনতাইয়ের শিকার হন শরিফুল ইসলাম। গাবতলী এলাকা থেকে বান্ধবীকে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসেছিলেন তিনি। তিনি জানান, দুপুর বেলা সপ্তম ছায়ামঞ্চে বসে ছিলাম। এ সময় তিনজনের একটি গ্রুপ আমাদের নানান প্রশ্ন করা শুরু করে। একপর্যায়ে তারা আমাকে চড়-থাপ্পড় দিতে থাকে। আমার বান্ধবীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে সঙ্গে থাকা নগদ টাকা নিয়ে তারা আমাদের ছেড়ে দেয়।

আরো পড়ুন: ফেরদৌসের স্ত্রীর বিচক্ষণতায় বাঁচল বিমানের ২৯৭ আরোহীর প্রাণ

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল সংলগ্ন রাস্তা, সপ্তম ছায়ামঞ্চ সংলগ্ন মীর মশাররফ হোসেন হলমুখী রাস্তা, জিমনেসিয়াম এলাকা সংলগ্ন রাষ্ট্র ও সেন্ট্রাল ফিল্ডে নিয়মিত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। গত বছরের ৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম এলাকায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা ছিনতাইয়ের শিকার হন। অভিযুক্তরা ছিলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী জয় পাল এবং বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মারুফুল হাসান মারুফ। ঘটনা প্রমাণিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়নি। 

অন্যদিকে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর আশুলিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. ওমর আলী নামে এক মোবাইল মেকানিক ছিনতাইয়ের শিকার হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের (৫০ ব্যাচ) অর্ণব নামের এক শিক্ষার্থীসহ সিটি ইউনিভার্সিটির রোমিও রাজু নামের আরেক শিক্ষার্থীকে হাতেনাতে অস্ত্রসহ আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে তাদের আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর বিকৃত মানসিকতা অন্যতম কারণ বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মত প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ঠরা।  এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুকের এক পোস্টের কমেন্টে নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাসেল স্বাধীন বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই গার্ডদের সম্মান দেয় না। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনায় কোনায় গার্ড দেওয়া সম্ভব কি? আমাদের বখে যাওয়া শিক্ষার্থীদের অসুস্থ মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ফেরাতে এর বিকল্প কিছু নেই।’

এ বিষয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন দ্যা ডেইলি ক্যম্পাসকে বলেন, মূলত শীতকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো না কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন হতেই থাকে। এতে অধিক পরিমাণে লোকসমাগম হচ্ছে। ফলে বহিরাগত ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া অনেকটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। পুরো ক্যম্পাসেই আমাদের নিরাপত্তা কর্মী আছে। কেউ ছিনতাইয়ের শিকার হলে আমাদের যেন দ্রুত জানায়। তাহলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, এমন ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের আরও সতর্ক হওয়ার জন্য বলব। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের কাছে এমন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।


সর্বশেষ সংবাদ