গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ  © টিডিসি সম্পাদিত

রাজশাহীর ঝলক-পলক নামের এক মেসের বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ছাত্রীদের দাবি, মানহীন খাবার, অনুমতিবিহীন গভীর রাতে রুমে পুরুষ মানুষ প্রবেশ, মনগড়া বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছিল রাজশাহীর ‘ঝলক-পলক’ নামের মেসের মালিক মতিন ও তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে।

সবশেষ রবিবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে খাবার নিয়ে এক নারী শিক্ষার্থীকে নির্যাতন ও মারধরের ঘটনায় মেস মালিকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও মারধরের ঘটনার পর ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ মেস মালিকের দুই ছেলে ঝলক (২২) ও পলক (২১)-কে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

এর জেরে মেস মালিক সন্ধ্যা থেকে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখে। রাতের মধ্যে তাদেরকে মেস থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়।  একপর্যায়ে তারা মেসের গেটের তালা ভেঙ্গে বের হয়ে আসে। রাত ১২টা ৩০ মিনিটের সময় প্রায় ৩০০ ছাত্রী মিলে নির্যাতনের শিকারের দায়ে থানায় অভিযোগ করতে যান। 

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, মেস মালিকরা আমাদের সব-সময় নির্যাতন করে। অতিরিক্ত টাকা দাবি করে। মেসের নিয়মকানুন বহির্ভূত কর্মকাণ্ড করে। আজকে আমাদের এক সহপাঠীকে চরম লাঞ্চনার শিখার হতে হয়েছে তাদের কাছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আজকে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি।

নির্যাতনের স্বীকার এক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, মেসের সাথে ৭ মাসের চুক্তিপত্র দেখতে চাইলে, আইনজীবী এনে তারপর দেখার জন্য বলা হয়। সে তার অধিকার দাবি করলে তাকে হুমকি দিয়ে অভিযুক্ত ঝলক বলে ‘তোকে রাজশাহীতে থাকতে দেবো না, তোর রাজশাহীতে থাকা মুশকিল করে দেবো, তুই আজকে রাতে কিভাবে থাকিস সেটা দেখব। অভিযুক্ত ঝলক সেই নারী শিক্ষার্থীর হাত চেপে ধরে এবং লোহার রড মারতে উদ্যত হয়। ঝলকের মা তাকে বাধা দেয়।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের তামজিদ সরকার জিসান নামে এক শিক্ষার্থী জানান খাবারের কোন্দলে মেস মালিকের ছেলে সকাল থেকে নারী শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করে রাখে। আমার ছোট বোন খবর জানালে আমরা উদ্ধারে আসি। তাদেরকে উদ্ধার করে থানায় অভিযোগ দায়ের করার জন্য থানায় যাচ্ছি।

মেসের ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বলেন, মেস মালিক ও তার ছেলেরা বিভিন্ন সময় মেসের ছাত্রীদের মানসিক নির্যাতন করে আসছেন। কিছুদিন পরপর মেসের সিট ভাড়া ভাড়া বাড়িয়ে দেন। কেউ মেস ছেড়ে দিতে চাইলে বলে ৭ মাসের টাকা দিয়ে যেতে হবে।

ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, মেস মালিক সময়ে অসময়ে মেয়েদের রুমে ঢুকে পড়েন। যার ফলে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। মেসের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভালো না, যেকোনো সময়ে বাড়িওয়ালাসহ বাহিরের লোক মেসের ভেতর ঢুকে পড়েন। কোন সমস্যা নিয়ে অভিযোগ দিতে গেলে উল্টো আমাদের নোংরা ভাষায় কথা শোনান।

রাজশাহী মহানগরের বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মেহেদী মাসুদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্সাকে বলেন, সকালে শিক্ষার্থীদের খাবার নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। খিচুড়িতে পাথর পাওয়া গেছে। এই নিয়ে মেস মালিকের সাথে কথা কাটাকাটি হলে মেস মালিকের দুই ছেলে তাদের উপর হামলা করে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ২ জনকে আটক করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, যদি শিক্ষার্থীরা যদি অভিযোগ দায়ের করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ