রাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা, বিক্ষোভ-ভাংচুর

রাবি ছাত্রলীগের এক কর্মীকে মারধর করেন পদবঞ্চিতরা
রাবি ছাত্রলীগের এক কর্মীকে মারধর করেন পদবঞ্চিতরা  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি 'বিতর্কিত' আখ্যা দিয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া ও পদবঞ্চিত নেতারা। নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদকের কক্ষেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা না করা পর্যন্ত  তারা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে পারবেন না বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

আজ রোববার (২২ অক্টোবর) সকালে তারা নিজেদের ফেসবুক টাইমলাইনে একযোগে এ ঘোষণা দেন। পরে ছাত্রলীগের দলীয় ট্রেন্টে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। দলীয় ট্রেন্ট থেকে পরে ক্যাম্পাসে শোডাউন করেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। শোডাউন শেষে কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের কক্ষ ভাংচুর করেন তারা।

এ ছাড়া পরিবহন মার্কেটে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে দেখে মারধর এবং তার মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাকিবুল হাসান বাকী, অনিক মাহমুদ বনি, শামীম হোসেন, নিয়াজ মোর্শেদসহ পদবঞ্চিত শতাধিক নেতাকর্মী। একাধিক নেতার অভিযোগ, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র না মেনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি দিয়েছে।

তাদের ভাষ্য, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, বিবাহিত ও অছাত্ররা কমিটিতে আসতে পারবেন না। কিন্তু যাদেরকে নিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে তারা দুজনেই বিতর্কিত। দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাথে সক্রিয় ছিলেন না সদ্য কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু। পড়াশোনা শেষ করে সেলুনসহ বিভিন্ন ব্যবসা এবং নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত তিনি।

তারা আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপআউট হয়েছেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। তার বিবাহের ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। এসব বিতর্কিতদের নিয়ে কমিটি ঘোষণা করায় তারা বর্তমান কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন।

এ বিষয়ে কমিটির সহ-সভাপতি শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন বলেন, বর্তমান কমিটি সম্পূর্ণ বিতর্কিত। অছাত্র ও বিতর্কিতদের নিয়ে এ কমিটি গঠিত হয়েছে। সভাপতি বাবু ছয় মাস আগে রাজনীতিতে এসেছেন। তিনি এখন নেতা হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক গালিব বিবাহিত, ইন্টারপাস ও বিতর্কিত। রাজাকারের নাতিও এ কমিটিতে আছে। আমরা এ কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ওরা ঢুকতে পারবে না।

পদবঞ্চিত নেতা ও আগের কমিটির সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন বলেন, ৩৪ দিন যাচাই-বাছাই করে যে কমিটি দিয়েছে, তা মেনে নেওয়ার মতো না। সব পোস্ট বিতর্কিতদের দিয়ে করা হয়েছে। সম্মেলন হওয়ার দুদিন আগেও বাবু প্রার্থী ছিলেন না। চুল কাটার ব্যবসা করতো। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি করা হয়েছে।

আরো পড়ুন: ছাত্রলীগ থেকে আ.লীগে শোভন, ছাত্রদল থেকে বিএনপিতে শ্রাবণ

তাঁর ভাষ্য, সাধারণ সম্পাদক গালিব ইন্টার পাস। ৩-৪ বছর পড়াশুনা করে পাস করতে পারেনি। সে বিয়েও করেছে। তার পরিবারের আটজন বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। গত কমিটিতে যে সহ-সভাপতি এখন সাত বছর পর সে আবার সহ-সভাপতি। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এ কমিটি হাস্যকর। এটা আমাদের সাথে রসিকতা করা হয়েছে। তারা সংগঠন শেষ করে দিয়েছে। আমরা এই সম্পূর্ন কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।

বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি তাওহীদুল ইসলাম দূর্জয় বলেন, সম্মেলনের শুরুতে বাবু প্রার্থীই ছিল না। কিছুদিন আগে রাজনীতিতে এসেছে। সাধারণ সম্পাদক গালিব অছাত্র, বিতর্কিত। এ কমিটিতে এমফিল-পিএইচডি শিক্ষার্থীরা আছেন। তাদের নেতা কীভাবে ইন্টারপাস হয়?

এ বিষয়ে নতুন কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুজ্জামান লিটন চিন্তাভাবনা করেই এ কমিটি দিয়েছেন। যারা এ কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন, তাদের ব্যক্তি স্বার্থ রয়েছে। শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

কমিটি নিয়ে বক্তব্য জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।


সর্বশেষ সংবাদ