চানাচুর বিক্রিতে চলে রাব্বির পড়ালেখা ও অভাবের সংসার

চানাচুর বিক্রি করে সংসার ও পড়ালেখার খরচ চালান অদম্য ফজলে রাব্বি
চানাচুর বিক্রি করে সংসার ও পড়ালেখার খরচ চালান অদম্য ফজলে রাব্বি  © ফাইল ফটো

চানাচুর…গরম গরম চানাচুর। একবার খান, খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে করবে। প্রতিনিয়ত ভোলার চরফ্যাশন পৌরশহরের ফ্যাশন স্কয়ারসহ বিভিন্নস্থানে ঘুরে ঘুরে হাঁক ডেকে এভাবে ঝাল চানাচুর বিক্রি করেন কলেজ পড়ুয়া ফজলে রাব্বি। পড়ালেখার পাশাপাশি সংসারের খরচ জোগাতে তার এই পন্থা। এক সময় তার বাবার আয়-রোজগারে চলত তাদের সংসার। এখন বৃদ্ধ বয়সে বাবা অন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইনকাম করতে পারছেন না। এদিকে তার মাও সব সময় অসুস্থ থাকে।

বলছিলাম উপজেলার হাজারীগঞ্জ ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রফিজল ইসলামের ছেলে ও অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র মো: ফজলে রাব্বির কথা।

শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে শহরের ফ্যাশন স্কয়ারে চানাচুর বিক্রি করতে দেখা গেছে তাকে। এসময় চানাচুর খেতে খেতে জানা যায় তার সংগ্রামী জীবনের গল্প। 

ফজলে রাব্বি জানান, বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে অভাবের সংসারে সংগ্রাম করেই বাঁচতে হচ্ছে তাকে।  তারা চার ভাই ও তিন বোন। তিন ভাই বিয়ে করে তাদের স্ত্রী সন্তান নিয়ে অন্য বসবাস করেন। বৃদ্ধ বা-মার খোঁজ খবর রাখেন না কেউ। বড় ভাইয়েরা মা-বাবাকে ছেড়ে চলে গেলেও তাদের ভরণপোষণ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বহু সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে চলছে তার জীবন। পরিবারের আর্থিক সংকট। অল্প বয়স থেকেই সংসারে হাল ধরেছে এবং পাশাপাশি পড়ালেখাও চালিয়ে যাচ্ছেন। 

ফজলে রাব্বি আরো জানান,সংসার ও নিজের পড়ালেখার খরচ জোগাতে প্রতিনিয়ত চানাচুর নিয়ে বের হন জীবিকার সন্ধানে। চানাচুর বিক্রি করে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা উপার্জন করেন। অসুস্থ মা-বাবার ঔষধ কিনে অবশিষ্ট যা থাকে তা দিয়ে কোনোরকম সংসারের খরচ ও নিজের পড়ালেখার খরচ চলে। এই স্বল্প আয়ে সংসার খরচ চালানো ও নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতে সে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। এই অবস্থায় পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সরকারের কাছে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি। 

ফজলে রাব্বির এক ক্রেতা ইসরাফিল জানান, এটা নিশ্চিতভাবে ভালো উদ্যোগ। পড়ালেখার পাশাপাশি কর্ম করছেন তিনি। রাব্বি তর এই আয় দিয়ে সংসার খরচ, মা-বাবার চিকিৎসার খরচ বহন করার পাশাপাশি  নিজের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছেন। সমাজের প্রতিটি মানুষের উচিত রাব্বির মতো অসহায় যারা রয়েছেন তাদের পাশে এসে দাঁড়ানো। 

এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মামুন হোসেন বলেন, 'ফজলে রাব্বি যদি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চান তাহলে তাকে শিক্ষা ভাতার আওতায় আনা হবে। এছাড়াও তার বাবার বয়স ৬৫ এবং মায়ের বয়স ৬২ বছর হয়ে থাকলে তাদেরকেও বয়স্ক ভাতা প্রদান করা যাবে। 


সর্বশেষ সংবাদ