পুরুষের সংসারে তিক্ততা, একসঙ্গে থাকতে চান দুই নারী
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২২, ০৩:৩২ PM , আপডেট: ২১ জুলাই ২০২২, ০৩:৩২ PM
মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন ২০১৯ সালে। তবে পাস করতে পারেননি। এরপর বিয়ে-সন্তান! তবে মনের মাঝে পুরুষের প্রতি বিরূপ জমে ওঠে। বিষয়টি শুধু তার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। আরও একজন রয়েছেন। তারা দুজনে এখন একসঙ্গে থাকতে আগ্রহী।
একসঙ্গে থেকে সংসারের খারাপ অভিজ্ঞতা ভুলতে চাইলেও রয়েছে নানান বাঁধা। এই বাঁধা অভিক্রম করতেই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন তারা। তবে সমাজকর্মী; যারা সমকামীদের নিয়ে কাজ করেন, তাদের থেকে পাশে থাকার আশ্বাস পেয়েছেন তারা। খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার।
এই দুই তরুণীই ভারতের হুগলির বাসিন্দা। একজন হুগলির বলাগড়ের, অন্যজন পোলবা-দাদপুরের। বলাগড়ের তরুণীর অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনার শেষে বিয়ে হলেও সেই সংসার টেকেনি। এরপর আবারও বিয়ে হয়েছিল, সেটিও টেকেনি। এরপর থেকেই ‘পুরুষ-বিদ্বেষ’ জন্মের তার মধ্যে।
পোলবা-দাদপুরের তরুণী জানান, নিঃসন্তান দম্পতির দত্তক-সন্তান তিনি। ২০১৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেও পাস করতে পারেননি। এরপর বিয়ে-সন্তান। মৎস্যজীবী স্বামী প্রায়ই মারধর করে বের করে দিতেন। দুই বছর পর সেখান থেকে চলে আসেন তিনি। তবে অভিভাবকদের কথায় থানা-পুলিশ করেননি তিনি।
দুই তরুণী জানান, বছর খানেক আগে ফেসবুকে তাদের পরিচয় হয়। পরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। যন্ত্রণার বিষয়ে একে অপরকে জানান। এরপর একসঙ্গে বসবাস শুরু করেন তারা। এক সময়ে সিদ্ধান্ত নেন, পুরুষের সঙ্গ আর নয়, দুই নারী মিলেই সংসার করবেন। মাস দেড়েক আগে তাঁরা মন্দিরে বিয়ে করেন।
তারা আরও জানান, তবে দুজনের এই বিয়ে মানতে নারাজ পরিবার। বাড়িতে একসঙ্গে থাকা হয়নি। প্রতিবেশীদেরও এতে আপত্তি রয়েছে।
এদিকে সোমবার গুপ্তিপাড়া ফাঁড়িতে গিয়ে এসব কথা জানান ওই দুই তরুণী। তারা জানান, তারা দু’জনেই স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার ব্যাপারে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আপাতত তারা অন্য জায়গায় ভাড়া থাকবেন। নিজেদের ছোটখাটো আয়েই সংসার চলবে। সমকামিতা এখন অপরাধ নয়।
এ ব্যাপারে হুগলির এক ম্যারেজ রেজিস্ট্রার জানান, তারা পরিস্থিতির শিকার হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু তাদের বিয়ের আইনি ভিত্তি নেই। সমকামিতা অপরাধ না হলেও তারা আইনত পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন না। এ দেশের আইন বা সংবিধানে সেই সংস্থান নেই।
এদিকে ওই দুই তরুণী জানিয়েছেন, দু’টি মেয়ে বিয়ে করতে পারে না, বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। না জেনে তারা ভুল করেছিলেন। তবুও তারা একসঙ্গে থাকতে চান। সমাজের তথাকথিত নিয়মে আর বাঁধা পড়তে চান না।
এসব বিষয় নিয়ে রূপান্তরকামী ও সমকামীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘কলকাতা আনন্দম ফর ইকুয়ালিটি অ্যান্ড জাস্টিস’ এবং ‘স্যাফো ফর ইক্যুয়ালিটি’র সদস্যেরা ওই দুই তরুণীর সমস্যার কথা শুনেছেন।
এ ব্যাপারে আনন্দমের সম্পাদিকা সিন্টু বাগুই বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলব। কী ভাবে তাদের পাশে থাকা যায়, দেখব।
স্যাফো ফর ইক্যুয়ালিটি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা মীনাক্ষী সান্যাল বলেন, তাদের দুজনের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা বোঝার চেষ্টা করব। পুলিশের সঙ্গেও কথা বলব। সম্ভব হলে, তাদের পরিবার বা পড়শিদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করব।
মীনাক্ষী জানান, ওই দুই যুবতীর যদি রোজগার বা থাকা-খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও দরকার হয়, সে ব্যাপারেও তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।