উচ্চশিক্ষার মানকে উন্নত করতে কিছু প্রস্তাবনা
- কামরুল হাসান মামুন
- প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২২, ০৫:১৩ PM , আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২২, ০৫:১৩ PM
৪ বছরের অনার্সই হওয়া উচিত টার্মিনাল ডিগ্রী। মাস্টার্স সকলের জন্য নয়। অত্যন্ত সিলেক্টিভ শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্টার্স। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাস্টার্স সম্পূর্ণ বন্ধ করা উচিত। যারা যোগ্য ভর্তি পরীক্ষায় পাশের সাপেক্ষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করার সুযোগ দিতে হবে।
৫১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নামিয়ে সর্বোচ্চ ১০টি বা তারও কম রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে বাকি ৪১টিকে আমেরিকার মত লিবারেল আর্টস কলেজে রূপান্তরিত করা যেখানে কেবল আন্ডার গ্রাজুয়েট ডিগ্রী দেওয়া হবে। মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রী কেবল ওই ১০টি রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে। বাংলাদেশের নর্থ সাউথ, ব্র্যাক এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে শর্ত সাপেক্ষে রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয় করে বাকিগুলোকে লিবারেল আর্টস কলেজে রূপান্তরিত করা উচিত।
যেগুলোকে আপাতত লিবারেল আর্টস কলেজ করা হবে সেগুলো যদি যথেষ্ট গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টির প্রমান দিতে পারে সেগুলোকেও রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা যেতে পারে। বাংলাদেশের কোন কলেজের মাস্টার্স ডিগ্রী দেওয়ার যোগ্যতা রাখে না। মাস্টার্স ডিগ্রী হতে হবে থিসিস বেসড। বাংলাদেশের কোন কলেজে গবেষণার যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা এবং লোকবল নেই। আর মাস্টার্স সবাইকে কেন করতে হবে? মাস্টার্স করে ১ থেকে ২ বছর সময় কেন নষ্ট করবে? মাস্টার্স সিলেক্টিভ করলে আবাসিক হলে প্রচুর আসন খালি হবে। সেগুলো প্রথম বর্ষের ছাত্রদের দিলে অনেক মেধা হত্যা থেকে দেশ রক্ষা পাবে।
যারা কলেজে শিক্ষকতা করবে তাদের মাস্টার্স ডিগ্রী থাকতে হবে। বিসিএসে যারা শিক্ষা ক্যাডার নিবে তাদের যেহেতু মাস্টার্স ডিগ্রী থাকার বাধ্যবাদকতা থাকবে তাদের বেতন ও সুবিধাদি অন্য সকল ক্যাডার থেকে বেশি থাকতে হবে। রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে হলে ন্যূনতম পিএইচডি থাকা বাধ্যতামূলক করা উচিত। যেহেতু এন্ট্রি লেভেলের ন্যূনতম যোগ্যতা বাংলাদেশের সকল পেশার ন্যূনতম যোগ্যতা থেকে বেশি সেহেতু রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা বেশি দিতে হবে।
এর মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশাকে বেশি এট্রাক্টিভ করা যাবে ফলে মেধাবীরা বেশি করে এই পেশায় আসতে আগ্রহী হবে। বাংলাদেশের তেমন কোন প্রাকৃতিক সম্পদ নাই কিন্তু এই দেশে জনসংখ্যা আছে। এই জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করার একমাত্র উপায় হলো মানসম্পন্ন এবং যোগোপযোগী শিক্ষা।
বিশ্ববিদ্যালয় নাম দিলেই বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় নামে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কোন যোগ্যতা নাই। বর্তমান কাঠামোতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের জাতীয় ক্ষতি করছে। এটির রিফর্ম এখন সময়ের দাবি।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়