থাইল্যান্ডে হামলা

ঘর ভর্তি ২৩ শিশুর লাশ, শুধু বেঁচে ছিল ৩ বছরের অ্যামি

বেঁচে যাওয়া শিশু অ্যামি
বেঁচে যাওয়া শিশু অ্যামি   © ফাইল ছবিহামলা

থাইল্যান্ডের শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে (প্রি-স্কুল ডে-কেয়ার সেন্টার) সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার হামলার ঘটনায় ২৩ শিশুসহ ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রে থাকা ২৪ শিশুর মধ্যে ২৩ শিশুই নিহত হয়। বেঁচে যায় শুধু একটি শিশু। তিন বছর বয়সী ওই শিশুর নাম অ্যামি। কিন্তু সে হামলার বিষয়ে কিছুই বলতে পারে না। ওই দিন কী হয়েছিল, কিছুই জানে না সে।

অ্যামির মা পানোম্পাই বলেন, এখন সে প্রতিদিনই শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছে। বন্ধুদের কাছে যেতে চাচ্ছে। এ কারণে শেষমেশ তার দাদি তাকে জানিয়েছে, কেন্দ্রে থাকা তার শিক্ষক ও বন্ধুরা সবাই মারা গেছে। তাই এখন শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র বন্ধ আছে। তার বয়স এত অল্প যে মৃত্যুর বিষয়টি সে বুঝতে পারছে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার দিন ছোট্ট অ্যামি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে তার বন্ধুর সঙ্গে ঘুমিয়েছিল। আর ওই হামলাকারী দিবাযত্ন কেন্দ্রে থাকা ঘুমন্ত শিশুদের ওপর নির্বিচার গুলি চালিয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রে থাকা ২৪ শিশুর মধ্যে কেবল অ্যামি প্রাণে বেঁচে গেছে।

বিবিসি অনলাইনে আজ রোববারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় নং বুয়া লাম্ফু প্রদেশে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হামলাকারীর সৎ ছেলে ও স্ত্রীও নিহত হয়েছেন। এর আগে এএফপি, রয়টার্সের খবরে হামলায় ২২ শিশুসহ ৩৮ জন নিহত হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

কেন্দ্রে থাকা তিন বছর বয়সী ১১টি শিশুকে সকালেই আঁকা ও লেখার কাজ করানো হয়। কাজ শেষে সবাই উচ্ছ্বসিত ছিল। সকাল ১০টার দিকে শিক্ষকেরা ওই শিশুদের হাসি মুখের ছবি অভিভাবকদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। এর দুই ঘণ্টা পরই ছিল শিশুদের ঘুমানোর সময়। এই সময় পুলিশের সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল পানিয়া খামরাব ওই দিবাযত্ন কেন্দ্রের ভেতর বন্দুক ও ছুরি নিয়ে হামলা চালান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হামলাকারী প্রথমে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের কর্মীদের ওপর গুলি চালিয়েছেন। শিশুদের তিনটি কক্ষে ঢোকার সময় তাঁকে বাধা দিলে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক শিক্ষককেও গুলি করেন তিনি। এরপর দরজা ভেঙে কক্ষে ঢুকে ঘুমিয়ে থাকা অ্যামির বন্ধুদের হত্যা করেন তিনি।

শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক নান্থিচা পুঞ্চুম বলেন, শিশুদের ঘুমের জন্য পাঠিয়ে তিনি দুপুরের খাবার খেতে যাচ্ছিলেন। ঠিক এমন সময় তিনি পরপর পাঁচটি গুলির শব্দ শুনতে পান। তিনি বলেন, এই কেন্দ্রে সাধারণত ৯২ জন শিশু থাকে। বাস না পাওয়া ও বৃষ্টির কারণে আটকা পড়ায় হামলার সময় ২৪ জন শিশু ছিল। তাদের মধ্যে মাত্র একটি শিশু বেঁচে আছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যামি কীভাবে বেঁচে গেছে তা বোঝা যাচ্ছে না। তাকে যখন উদ্ধার করা হয়, তখন সে জেগে ছিল। সহপাঠীদের লাশের পাশে একদম কুঁকড়ে ছিল ছোট্ট অ্যামি।

অ্যামির ৫৯ বছর বয়সী দাদা সোমসাক স্রিথং বলেন, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে সেদিন কী ঘটেছিল, সে বিষয়ে অ্যামির কোনো ধারণাই নেই। ঘুম জেগে ওঠার পরও সে কিছু ধারণা করতে পারেনি।

সোমসাক স্রিথং বলেন, লাশের পাশে বসে অ্যামি ভেবেছে, তার বন্ধুরা এখনো ঘুমিয়ে আছে। পরে পুলিশের এক কর্মকর্তা তার মুখ ঢেকে রক্তাক্ত এলাকা থেকে বাইরে বের করে আনেন।প্রতিবেদনে বলা হয়, উদ্ধারকারীরা শুরুতে অ্যামিকে উদ্ধার করে নিরাপদে রাখার জন্য দুই তলায় নিয়ে যান। অ্যামিকে দেখে তাঁরা ধারণা করেন, হয়তো আরও কেউ বেঁচে আছে। এ কারণে তাঁরা হন্যে হয়ে খোঁজার চেষ্টা করেন কেউ জীবিত আছে কি না।

অ্যামির দাদা সোমসাক স্রিথং বলেন, ‘সে বেঁচে আছে বলে আমি খুব কৃতজ্ঞ বোধ করছি। ঘটনার পর তাকে প্রথম দেখেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলাম।’

অ্যামির মা পানোম্পাই স্রিথং ব্যাংককে কাজ করেন। হামলার সময় তিনি ব্যাংককেই ছিলেন। তাঁকে জানানো হয়েছিল, হামলায় শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের সব শিশুই নিহত হয়েছে। পরে তাঁকে বোঝানো গেছে যে তাঁর মেয়ে জীবিত আছে। পানোম্পাই বলেন, ‘অ্যামির সঙ্গে ভিডিও কথা বলার পর শান্ত হতে পেরেছি।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, থাইল্যান্ডের ছোট এই শহরের সব পরিবারেই এখন শোক চলছে। প্রথম কয়েক দিন হামলা ও বন্ধুদের বিষয়ে অ্যামিকে কী বলবেন, তা নিয়ে অনেক ভাবতে হয়েছে তার দাদা–দাদিকে। শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র থেকে বাসায় ফিরে বাগানে খেলাধুলা করেছে অ্যামি। খেলার সময় সে তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু তিন বছর বয়সী পাত্তারাউতের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। এ সময় অনেক শান্তভাবে তার সঙ্গে কথা বলেছেন দাদা–দাদি।

শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে সবাই পা দিয়ে অন্যের পা স্পর্শ করে ঘুমাত। অ্যামির শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র খুব পছন্দের জায়গা ছিল। সে সেখানকার শিক্ষকদের মতো হতে চেয়েছিল।


সর্বশেষ সংবাদ