পাঠক বলছেন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করলেও শিক্ষার্থীরা ঘরে থাকবে না

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করলেও শিক্ষার্থীরা ঘরে থাকবে না
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করলেও শিক্ষার্থীরা ঘরে থাকবে না  © টিডিসি ফটো

দেশে করোনার সংক্রমণ আবারও বেড়ে চলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামীকাল রবিবার (৯ জানুয়ারি) কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বৈঠকে পূর্বের ন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিলেও শিক্ষার্থীদের ঘরে রাখা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকরা। পরামর্শক কমিটির বৈঠকের বিষয়ে পাঠকদের মতামত জানতে চেয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। এতে বেশিরভাগ পাঠক বন্ধ না করে স্বাস্থ্যবিধিতে মত দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ সংক্রমণ বেড়ে গেলে বন্ধের কথা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠক কাল

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ফেসবুক পাতার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে পাঠকদের মতামত জানতে চাওয়া পোস্টে এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ২শ জন পাঠক মন্তব্য করেছেন। এছাড়া প্রায় এক হাজার মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

নাহিদুর রহমান তুশার নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা উচিৎ হবে না। এমনিতেই অনেক শিক্ষার্থীর পড়ালেখার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। তার পাশাপাশি শিশুশ্রম বাল্যবিবাহ এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধের প্রকোপ বেড়েছে। এখন প্রয়োজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা, সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে আহ্বান করা।

আরও পড়ুন: যেসব উপসর্গ দেখা দেয় ওমিক্রন আক্রান্তদের দেহে

এর আগে, ২০২০-২১ সালে করোনা প্রতিরোধে লকাডাউন থাকাকালীন দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। তবে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে থাকেননি। গেল বছরের ২ অক্টোবর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে গিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাতীন ইতমাম মাহমুদ পানিতে ডুবে মারা গেছেন। ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এছাড়া আরও বেশকিছু অপ্রীতিকর খবর গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাঈম হোসাইন লিখেছেন, আমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিপক্ষে। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলে আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে ছেলেদের জীবন একেবারেই থেমে যায়।

আরও পড়ুন: নিজেই টিকা হয়ে উঠতে পারে ওমিক্রন, ৩ মাসেই কাটবে ভয়াবহতা

তিনি লিখেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয় কিসের জন্য? যেন আমাদের আগামী ভবিষ্যত ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। এটা অনেকে মানেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঠিকই বন্ধ থাকে। কিন্তু কোন শিক্ষার্থী কি ঘরে বসে থাকে? না, কেউ ঘরে থাকে না। সবাই তখন নানানরকম আড্ডায় ব্যস্ত থাকেন। সেখানেও করোনার ঝুঁকি থেকে যায়। তাই সবাইকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে।

অনেকে আবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে লকডাউনসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন। খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসাইন নিলয় লিখেছেন, করোনা পরিস্থিতি খুবই বিপদজনক হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা উচিত। তবে সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই বিকল্প শিক্ষা পদ্ধতি চালু রাখতে হবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় পাঠদান সচল রাখার কথাও ভাবছে সরকার। এজন্য টিকা কার্যক্রমে জোর দেওয়া হচ্ছে। এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চাই না। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন টিকা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার সঙ্গে হয়তো একটু অসুবিধা হতে পারে।

দেশে ফের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাস, ট্রেন ও লঞ্চে অর্ধেক যাত্রী বহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য শিগগিরই নির্দেশনা আসবে বলে জানান। মন্ত্রী বলেন, দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দু-এক দিনের মধ্যেই কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে।

আরও পড়ুন: সংক্রমণ বাড়লে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

আগামীকালকের সভার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, আজ আমাদের মন্ত্রণালয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ আছে। আগামীকাল রবিবার কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটির সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক আছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের ঊর্ধ্বগতির মুখে আরেক দফা স্কুল বন্ধ হওয়া সর্বনাশা হবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর এক বিবৃতিতে বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লে ও কঠোর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়লে স্কুলগুলো অবশ্যই সবার শেষে বন্ধ এবং ফের সবার আগে খুলতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ