মতবিনিময় সভায় প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

‘জলবায়ু পরিবর্তন রোধকল্পে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি যুক্ত করতে হবে’

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।  © টিডিসি ফটো

অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নানা ধরনের সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ। এ সংকট মোকাবেলায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি তরুণ এবং শিক্ষার্থীদের এতে কাজে লাগাতে হবে। 

সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের নানা এলাকায় ঝড়, জলোচ্ছাস, বন্যাসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে প্রাথমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়সমূহ নানাবিধ বিপর্যয় নিয়ে নেটজ বাংলাদেশ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় যৌথ সমীক্ষা ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে। 

বর্তমানে পরিবেশ ধ্বংসকারী নানা পদক্ষেপে বাংলাদেশের জলবায়ু সংকটে রয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এখানে কীটনাশক ব্যবহারসহ নানাবিধ সার ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করা দরকার। 

আরও পড়ুন: ৩১ শতাংশ আদিবাসী মেয়ের শিক্ষায় বাধা দারিদ্র্য ও সাংস্কৃতিক সংকট

ইটনা-মিটামইন সড়কে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে ফরিদা আখতার বলেন, এটি অলওয়েদার সড়ক করা হয়েছে, কিন্তু এতে পরিবেশের দিকগুলো দেখা হয়নি। এর ফলে সেখানকার জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। কিছু প্রজাতির মাছও হারিয়ে যেতে পারে। 

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শিক্ষার্থীদের ত্যাগের কথা স্মরণ করে উপদেষ্টা বাংলাদেশ এবং তার জলবায়ু রক্ষায় সবাইকে একসঙ্গে কাজের আহ্বান জানান।

আলোচনায় শিশুশ্রম প্রতিরোধে সরকারের উদ্যোগের দিকগুলোও তুলে ধরেন ফরিদা আখতার। জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বনায়ন সৃষ্টি এবং তাতে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করার ওপর জোর দেন তিনি। 

আরও পড়ুন: সংকটে উদ্বেগ বেড়েছে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের, কমেছে উপস্থিতি

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরেটাস ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। সাতক্ষীরা জেলার মানুষ ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছেন। কিছু মানুষ সীমান্তের ওপাড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এ অঞ্চলে লবণাক্ততা আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।

প্রাযুক্তিক পরিবর্তন এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে এ সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে জানিয়ে ড. নিশাত বলেন, বৈশ্বিক এ সংকট মোকাবেলায় সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে, নাহলে জলবায়ুর নানা ধরনের সংকটে পড়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে ১৪ ধরনের সংকট সৃষ্টি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে অনিয়মিত বৃষ্টি, খরা এবং লবণাক্ততাসহ নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে। সাম্প্রতিক বন্যার কারণ হিসেবে তিনি দায়ী করেন অপরিকল্পিত উন্নয়নকে।

আরও পড়ুন: সহিংসতায় প্রাথমিক স্তরে উপস্থিতি কমেছে ৩৭ শতাংশ, ভীতিগ্রস্ত ৫৫.২ শতাংশ শিক্ষার্থী

রাজধানী ঢাকা তীব্র সংকটে রয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক ড. নিশাত জানান, এখানে যেকোনো সময় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে ঢাকা শহর তলিয়ে যেতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে ফুল এবং ফসলের পরাগায়ন প্রক্রিয়ার নানা পরিবর্তন তুলে ধরা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১ হাজারের বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার এবং নানা পরিবর্তনের বিষয়গুলো আমলে নিয়ে এ গবেষণা ফলাফল তৈরি করা হয়।

দেশের দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় মোট ১১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ত করা এবং তাদের প্রস্তুতির বিষয়টি উল্লেখ করে মতবিনিময় সভায় জানানো হয়েছে, এর মধ্যে সরকারি ৮০টি এবং বেসরকারি খাতের ৩৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারীসহ মোট পাঁচটি জেলা রয়েছে।

আরও পড়ুন: প্রাথমিকে আরও তিন ক্যাটাগরিতে শিক্ষক নিয়োগের চিন্তা আছে: উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায়

গবেষণা ফলাফলে নানা সংকটের পাশাপাশি সমাধান হিসেবে নানা সমাধানও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে শিক্ষায় প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা, জলবায়ুবান্ধব বাজেট পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য পরিকল্পিত বাজেট, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং জলবায়ু শিখন এবং সবার অংশগ্রহণমূলক নীতিমালা প্রনয়ণের ওপর জোর দেওয়া হয়।

এছাড়াও বনায়ন এবং গাছ বৃদ্ধি, উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবেশের দিক মাথায় রাখারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ড. নিশাত সমালোচনা করেন ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এবং মুজিব ক্লাইমেট প্ল্যানের। এ পরিকল্পনাগুলোর কোনো বাস্তবিক দিক নেই বলেও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট যেকোনো বিষয়ে করনীয় ঠিক করতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেন।

আরও পড়ুন: বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৭৯৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সবচেয়ে বেশি নোয়াখালীতে

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরীর সভাপতিত্ব এবং সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য এবং কর্মসূচির উদ্দেশ্য বর্ণনা গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক তপন কুমার দাশ।

এ সময় বক্তব্য রাখেন ধরা’র সদস্য সচিব শরিফ জামিল, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পিইডিপি-৪ এর উপ-পরিচালক মো. ফরহাদ আলম, প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বিষয়ক সংস্কার কমিটির আহবায়ক ড. মনজুর আহমদ এবং নেটজ বাংলাদেশের ডিরেক্টর শহিদুল আলম


সর্বশেষ সংবাদ