নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা, মিয়ানমার সীমান্তে সতর্ক বিজিবি

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্ত এলাকা ও টেকনাফের কাছাকাছি মিয়ানমারের হেলিকপ্টার মহড়া দিতে দেখা যাচ্ছে। চলমান সংঘর্ষের মধ্যে বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, গত দুই মাসের পরিস্থিতিতে রাখাইন রাজ্যের বেশ কয়েকটি এলাকা অবরুদ্ধ হয়ে গেছে। সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবন যাপনও অনেকটা সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। সংঘর্ষের মাত্রা যত দীর্ঘায়ু হচ্ছে, ততই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ছে। রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দাদের আগামী উপায় কী হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন উক্ত রাজ্যের বাসিন্দারা।

আরও পড়ুন: বান্দরবান সীমান্তে গোলাগুলিতে ৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা

সীমান্তে সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় মিয়ানমার থেকে আবারও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে কয়েকশ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।

এর মধ্যে গত রোববার (২৮ জানুয়ারি) বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু বাজার থেকে হেলিকপ্টার উড়তে দেখেছেন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।

এর আগে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) টেকনাফের সীমান্তবর্তী এক বাড়ির দেয়ালে গুলি লেগেছে। গুলি লাগার ঘটনায় সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সীমান্তঘেঁষা এলাকার পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়া, তুলাতুলি ও কাঞ্জরপাড়া সীমান্ত, উখিয়া উপজেলার পালংখালির আনজুমান পাড়া এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ও ঘুমধুম এলাকায় বেশি গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।

পালংখালী অনজুমান পাড়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, মিয়ানমারের মংডু ও বলিবাজার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের সীমানার কাছাকাছি অবস্থান করছে রোহিঙ্গারা। আবার কিছু রোহিঙ্গা ডিঙি নৌকা করে নাফ নদীতে অবস্থান করছে। মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) রোহিঙ্গাদের কোনো বাধা দিচ্ছে না। এতে বাংলাদেশ সীমান্তে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন: ভারতে পালাচ্ছে মিয়ানমারের শত শত সেনা

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আনোয়ারি বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারে আবারও উত্তেজনা শুরু হয়েছে। প্রতিদিন গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। গত শনিবার একটি গুলি এসে আমার ইউনিয়নের এক বাসিন্দার ঘরে পড়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সীমান্তের কাছাকাছি বসবাস করা মানুষরা। ইতোমধ্যে অনেক মানুষ ঘর ছেড়েছে। মিয়ানমারে উত্তেজনা শুরু হলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে শঙ্কা থাকে। শুনেছি কিছু রোহিঙ্গা সীমান্তের কাছাকাছি আছে। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। 

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের উনছিপ্রাং এলাকার জেলে পুতু বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি বিলার ডিলাতে কিছু রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। আমরা মাছ ধরতে গেলে তাদের সাথে দেখা হয়। 

বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ নিয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে বিজিবি। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একজন রোহিঙ্গাকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। আমরা সবসময় সজাগ আছি। 

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলি হচ্ছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরের ঘটনা। রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ নিয়ে বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে সতর্ক করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ