একাদশে ভর্তি: টাকা দিলেও পেমেন্ট না হওয়ায় পছন্দের কলেজ হারানোর আশঙ্কা

একাদশে ভর্তিতে বিড়ম্বনা। ছবিতে বোর্ড, এমএফএস এবং ব্যাংকের লোগো
একাদশে ভর্তিতে বিড়ম্বনা। ছবিতে বোর্ড, এমএফএস এবং ব্যাংকের লোগো  © টিডিসি

একাদশ শ্রেণির অনলাইন ভর্তিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। ভর্তি আবেদনের জন্য দেওয়া টাকা কেটে নেওয়া হলেও পেমেন্ট সম্পন্ন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অনেক ভুক্তভোগী। কেটে নেওয়া অর্থ এখন পর্যন্ত ফেরতও দেওয়া হয়নি। ফেরত দেওয়া হবে কিনা তা নিয়েও সন্দিহান এই ছাত্রছাত্রীরা এবং তাদের অভিভাবকরা।

এদিকে নিয়ম অনুযায়ী, ভর্তি ফির অর্থ পরিশোধ না হলে আবেদনও সম্পন্ন হয় না। ফলে কারিগরি ফাঁদে পড়ে পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে না পারার আশঙ্কা করছেন অনেক শিক্ষার্থী। ফি পরিশোধে জটিলতা ও বিলম্বের কারণে অনেকে অন্যায্যতার শিকার হতে পারেন বলেও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।  

শিক্ষা বোর্ডগুলো এবং মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানিগুলো বলছে, বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অনলাইনে একসঙ্গে পেমেন্ট করায় কিছু সমস্যা হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পেমেন্ট সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কেউ অভিযোগ করলে  ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানায় সংস্থা দুটি।

আরও পড়ুন: একাদশে ভর্তি: যে ভুলে বাতিল হতে পারে আবেদন

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার এইচএসসি ভর্তিতে অনলাইনে ফি পরিশোধের জন্য পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে কাজ করছে সোনালী ব্যাংক এবং এসএসএল কমার্জ। ভর্তিচ্ছুরা যেই ব্যাংক বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) থেকেই আবেদন করুক না কেন ফি সরাসরি জমা না হয়ে গেটওয়ের মাধ্যমে পরিশোধ হয়। বিদ্যমান সক্ষমতা দিয়ে বিপুল সংখ্যক ভর্তিচ্ছুর পেমেন্ট রিকোয়েস্ট তাৎক্ষনিকভাবে সম্পন্ন করতে বেগ পোহাতে হচ্ছে গেটওয়েগুলোকে। তাই বেশ কিছু সংখ্যক ভর্তিচ্ছুর আবেদনের সঙ্গে পেমেন্ট সম্পন্ন হচ্ছে না। সক্ষমতা না বাড়ালে এই ভোগান্তিও দূর হবে না। 

এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ড সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পেমেন্ট করার পরও যদি তা সম্পন্ন না হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ করতে হবে। যে নম্বর থেকে পেমেন্ট করেছে সেই নাম্বারসহ বোর্ডে অভিযোগ দিলে তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: একাদশে ভর্তি আবেদনে জটিলতা নিরসনে নতুন নির্দেশনা কর্তৃপক্ষের

ভর্তিবিষয়ক ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “যদি আপনি ইতিমধ্যেই আবেদন ফি জমা দিয়ে থাকেন (আবেদন ফি Payment Service Provider কেটে রেখেছে), অথচ একাদশ শ্রেণিতে স্মার্ট ভর্তির সিস্টেমে পেমেন্ট সম্পন্ন দেখাচ্ছে না, তাহলে এই ফরমটি পূরণ করুন। ফরমটি পূরণ করার শেষ সময় হলো ৭ জুন রাত ১১টা ৫৯মিনিট।”

জানা গেছে, গত ২৬ জুন থেকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি আবেদন শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে সার্ভার জটিলতার কারণে ওইদিন থেকে আবেদন শুরু হয়নি। জটিলতা সমাধান করে ২৮ জুন থেকে আবেদনগ্রহণ শুরু হয়। এরপর শুরু হয় নতুন বিড়ম্বনা। ভর্তি আবেদনের ফি পরিশোধ করা হলেও তা সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে না।

সূত্র বলছে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি আবেদনের শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য অনলাইনে আবেদন ফি পরিশোধের সুবিধা রাখা হয়। মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ, রকেট, নগদসহ একাধিক মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ অর্থ পরিশোধ করতে পারছেন শিক্ষার্থীরা। তবে অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আবেদন ফি’র অর্থ কেটে নেওয়া হলেও শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে পেমেন্ট সম্পন্ন দেখাচ্ছে না। 

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, নতুন শিডিউল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া চলবে ১১ জুন পর্যন্ত। ভর্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৩ জুন। ভর্তি নিশ্চায়ন করতে হবে ২৯ জুনের মধ্যে। দ্বিতীয় ধাপে ভর্তি আবেদন শুরু হবে ৩০ জুন থেকে, যা চলবে ২ জুলাই পর্যন্ত। 

দ্বিতীয় ধাপে আবেদন করা শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ হবে ৪ জুলাই। একইদিন পছন্দক্রম অনুযায়ী প্রথম দফায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশনের ফলও প্রকাশ করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে ভর্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থী ভর্তি নিশ্চায়ন শুরু হবে ৫ জুলাই থেকে, যা চলবে ৮ জুলাই পর্যন্ত।

আরও পড়ুন: একাদশে ভর্তি: জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ তারিখসমূহ

তৃতীয় ধাপে ভর্তি আবেদন শুরু হবে ৯ জুলাই, চলবে ১০ জুলাই পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপের মাইগ্রেশন এবং তৃতীয় ধাপের ফল ১২ জুলাই প্রকাশিত হবে। তৃতীয় ধাপের ভর্তি নিশ্চায়ন করতে হবে ১৩ থেকে ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে। সব ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তি শুরু হবে ১৫ জুলাই থেকে। ভর্তি কার্যক্রম চলবে ১০ দিন। অর্থাৎ ২৫ জুলাই একাদশ শ্রেণির ভর্তি শেষ হবে। আর ক্লাস শুরু হবে ৩০ জুলাই থেকে।
 
শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন। ১৫০ টাকা আবেদন ফি জমা দিয়ে সর্বনিম্ন পাঁচটি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে পছন্দক্রমের ভিত্তিতে আবেদন করা যাবে।

একজন শিক্ষার্থী যে কটি কলেজে আবেদন করবেন তার মধ্য থেকে তার মেধা, কোটা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটি কলেজে তার অবস্থান নির্ধারণ করা হবে। শুধু শিক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে। 


সর্বশেষ সংবাদ