দৈনিক শনাক্তের হার ৪ শতাংশের বেশি
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের পথে বাংলাদেশ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৪৪ PM , আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ১১:০২ PM
সারা বিশ্বে বাড়ছে করোনার প্রকোপ। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে গত তিন সপ্তাহে দেশেও বেড়েছে করোনার প্রকোপ। গত একদিনে শনাক্ত ৯শ ছুই ছুই। যা গত ১৪ সপ্তাহের মধ্য সর্বোচ্চ। নমুনা পরিক্ষার বিপরীতে দৈনিক করোনা শনাক্তের হার ৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন করোনার প্রথম, দ্বীতিয় ঢেউ শেষে এখন তৃতীয় ঢেউ চলছে। ফলে ভাইরাসটির গণসংক্রমণ শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, করোনা এখনো শেষ হয়নি। সারাবিশ্বকে নাস্তানাবুদ করছে ভাইরাসটি। নতুন ধরন ওমিক্রন ছাড়াও আরও ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। তাই দেশে আবার গণসংক্রমণ শুরু হয়েছে বলা যেতে পারে। দিন যত যাচ্ছে রোগীর সংখ্যা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরও পড়ুন: অনেক দেশের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে: শিক্ষামন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, জনসচেতনতা ছাড়া এ ভাইরাস মোকাবিলা করা সম্ভব না। আগামী ২ মাস কঠোরভাবে সাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তাহলে সবাই উপকৃত হবে। এক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে মাস্ক পরা, সভা-সমাবেশ বন্ধ, ছোট পরিসরে সামাজিক অনুষ্ঠান করে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে হবে। তবেই শনাক্তের হার কমবে, রোগীরা পরিপূর্ণ সেবা পাবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। দেশে ১০ জনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্যবিভাগ আরও ২৫ জনকে সন্দেহভাজন তালিকায় রেখেছে। সরকার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণসহ নতুন ধরন প্রতিরোধে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে। প্রত্যকবারের মত গৎবাঁধা কিছু নির্দেশনা দিয়ে দায় সারলে নতুন ঢেউ মোকাবিলায় চ্যালেঞ্জ বাড়বে। সরকারকে মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ এখনো অর্ধেকের বেশি মানুষ পূর্ণ ডোজ টিকার আওতায় আসেনি। সীমান্ত এলাকা অরিক্ষত রয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও মেলা চলছে। সব ধরনের প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। গণপরিবহণ, পর্যটন কেন্দ্র, সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠান-সবখানে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ওমিক্রনে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখতে ঢাবির নির্দেশনা জারি
বিশিষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, নতুন ধরন ওমিক্রন খুবই সংক্রামক। এটি দ্রুত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতিকে তৃতীয় ঢেউ বা গণসংক্রমণ দুটোই বলা যায়। ভারতে এটি ব্যাপক আকার ধারন করেছে। এখন পর্যন্ত ৪৯ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে। বুধবার একদিনে ৯ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। আমাদের দেশেও এটি চলে এসেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় গুচ্ছ সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এটির সংক্রমন আরো বৃদ্ধি পাবে। এখন থেকে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করে সংক্রমন নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল না দেওয়ার আহ্বান জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। তিনি বলেন, ‘দেশে সংক্রমণ বাড়ছে, মানে নতুন ভ্যারিয়েন্ট আছে। সংক্রমণ যেন আবারও দ্রুত না ছড়ায় এবং সেটি মহামারি আকার ধারণ না করতে পারে। সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে নতুন তফসিল না দেওয়ার অনুরোধ জানাই।’
আরও পড়ুন: জাবি স্কেটিং ক্লাবের প্রথম নারী সভাপতি পাখি
গত ১১ ডিসেম্বর দেশে প্রথম দুজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়। তারা জিম্বাবুয়ে ফেরত বাংলাদেশি দুই নারী ক্রিকেটার ছিলেন। তারা বর্তমানে সুস্থ আছেন। এর আগে ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় একজন এবং রাতে তিনজনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হয়। আগের দিন ২৭ ডিসেম্বর রাতে আরও একজনের নমুনায় করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানায় জিআইএসএআইডি।
আজ দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৪০ জন। এর চেয়ে বেশি রোগী এক দিনে শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ ২৯ সেপ্টেম্বর, সেদিন ১ হাজার ১৭৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর এসেছিল।
আরও পড়ুন: স্ত্রী-সন্তানদের নির্যাতন মুরাদের, জিডিতে যা আছে
করোনায় এ পর্যন্ত দেশে ২৮ হাজার ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে; শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৮৯ হাজার ৯৪৭ জনে। আজ বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৮৯২ জনের মধ্যে ভাইরাসটির সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এর চেয়ে বেশি রোগী এক দিনে শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ ২৯ সেপ্টেম্বর। সেদিন ১১৭৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর এসেছিল। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৮০৭ জনে