ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের বিশেষ অভিযানের মধ্যেই কলেজছাত্রকে হত্যা

আদনান সাইদ রাকিব
আদনান সাইদ রাকিব  © ফাইল ছবি

ঈদুল আজহার ছুটি শেষে ১ জুলাই কর্মস্থল ঢাকায় ফিরে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান তালুকদার। এর আগে ঈদের দিন রাতে রামপুরা টিভি সেন্টার এলাকায় ছিনতাইকারীদের হামলায় এক সাংবাদিক গুরুতর আহত হন। এরপরই রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে পুলিশ। পুলিশের এই বিশেষ অভিযানের মধ্যেই রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায় ছিনতাইকারীদের হামলায় কলেজছাত্র রাকিব খুন হল। চলতি মাসের গত ১৭ দিনে ৬৭৯ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

কলেজছাত্র রাকিব হত্যার ঘটনায় চার ছিনতাইকারী জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে তিনজনকে আটক করেছে ডিবি।

নিহত শিক্ষার্থীর আদনান সাইদ রাকিব (১৭)। সে সেন্ট্রাল রোডের আইডিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। গত ১৬ জুলাই দিবাগত রাত ১১টার দিকে শেখ জামাল ক্লাব মাঠের সামনে ছিনতাইকারীরা ছুরি মেরে তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন ধানমণ্ডি থানার ওসি পারভেজ ইসলাম।

ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার আবু তালেব জানান, শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় রাকিবের বাবা ধানমন্ডি থানায় মামলা করেছেন। ঘাতকদের শনাক্ত করতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যেই জড়িতদের ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে ডিবি পুলিশ। একটি চক্রের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনও উদ্ধার হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় জড়িত মূল আসামিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে আজ সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

রাকিবের বড় ভাই হৃদয় বলেন, ‘রবিবার রাতে আমাদের বাসার উল্টো পাশে ধানমণ্ডি বয়েজ কলেজের রায়হান নামের এক বন্ধুর সঙ্গে চা খেতে যায় রাকিব। কিন্তু সে বাড়ি ফিরল লাশ হয়ে। তিনি আরও বলেন, রাকিবকে নিয়ে আমরা অনেক স্বপ্ন দেখতাম। মা-বাবা চাইতেন ভালো করে লেখাপড়া শিখে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে। রাকিবের মৃত্যুর পর মা-বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’

আরও পড়ুন: ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আইডিয়াল কলেজছাত্রের মৃত্যু

ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ হোসেন জানান, রাকিব হত্যা ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে, নাকি পূর্বশত্রুতার জেরে ঘটেছে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তদন্তে হত্যার কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট হওয়া যাবে। জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্টতা পেলে হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে।

এদিকে গতকাল সোমবার (১৭ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থী রাকিব হত্যার বিচারের দাবিতে ধানমণ্ডি এলাকার একটি সড়ক অবরোধ করে সহপাঠী ও শিক্ষার্থীরা। ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের সামনের সড়কে জড়ো হয়ে অবরোধ করে তারা। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশের আশ্বাসে  শিক্ষার্থীরা সড়ক ছাড়ে।

রাকিব সেন্ট্রাল রোডের আইডিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। একমাস পরেই এইচএসসি পরীক্ষায় বসার কথা ছিল তার। তার বাবা মো. নুরুন্নবী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী। তাঁদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানা এলাকায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে রাকিব সবার ছোট। পরিবারের সঙ্গে কলাবাগান স্টাফ কোয়ার্টারে থাকত সে।


সর্বশেষ সংবাদ