ফেনী সরকারি কলেজের ৬ একর ভূমি বেদখলে

ফেনী সরকারি কলেজ
ফেনী সরকারি কলেজ  © টিডিসি ফটো

ফেনী সরকারি কলেজের ভূমি দখল নিয়ে জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতাল মোড় এলাকায় প্রায় ৬ একর ভূমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী দখল করে নিয়েছে। কলেজের ভূমি রক্ষা কমিটি জানিয়েছে, বিরিঞ্চি, ফলেশ্বর ও সুলতানপুর মৌজায় কলেজের নামে অধিগ্রহণ করা ১ হাজার ৬৬১ শতাংশ জমির মধ্যে ১ হাজার শতাংশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ৭২ শতাংশ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৫৭৯ শতাংশ জমি কলেজের মালিকানায় থাকলেও এর বড় অংশ দখল হয়ে গেছে।

কলেজ ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য ও গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জহির উদ্দিন বলেন, ছাত্র হোস্টেল, খালি জায়গা, কবরস্থান, শৌ-মিল এবং ফেনী জেনারেল হাসপাতালের গেট পর্যন্ত জায়গা কলেজের অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তির মধ্যে পড়ে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এই জমি বেদখল হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতাল মোড়ের একটি জায়গায় স্থাপনা তৈরির চেষ্টা চলছে, যা কলেজ কর্তৃপক্ষের অজানা ছিল।

সরেজমিনে সদর হাসপাতাল মোড় ঘুরে দেখা যায়,  আনুমানিক ৩৬ শতকের একটি জায়গা উন্মুক্ত পড়ে আছে, যেখানে ইটের দেয়ালের মতো একটি স্থাপনা উঠানো হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এ জায়গার মালিকানা দাবি করছেন সুলতানপুর মৌজার হাকীম আলীর ওয়ারিশরা। যারা সৈয়দনগরের বাসিন্দা। 

এ প্রসঙ্গে হাকীম আলীর ওয়ারিশদের একজন মো: সাহাবউদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ জায়গা হাকীম আলীর ওয়ারিশদের মধ্যে ৬ পরিবার মালিকানার দাবি রয়েছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন মামলা চলছিল। সম্প্রতি জটিলতা কাটিয়ে সেখানে অস্থায়ী স্থাপনার কাজ করছিল আমাদের মালিকপক্ষ।

সাহাবউদ্দিন আরও বলেন, আমরা অতীতে কখনও শুনিনি আমাদের মালিকীয় ভূমি দাগে ফেনী কলেজের জায়গা আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, পৌর ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খোকন হাজারী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এনামসহ অন্যান্যরা বেদখল করার চেষ্টা করেছে। তখন তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জায়গাটি বুঝে নিয়েছি। অথচ তখন কলেজ কর্তৃপক্ষ জায়গাটি মালিকানা দাবি করতে একবারও আসেনি। এখন শুনতে পাচ্ছি এটি কলেজের অধিগ্রহণকৃত জায়গা। এ প্রসঙ্গে কয়েকদিন পূর্বে আমাদের আইনজীবীসহ কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে বৈঠক করেছি। সেখানে কোনরূপ সুরাহা হয়নি। এসময় আইনিভাবে ভূমি মালিকানা বুঝে পেতে কথা হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে জহির উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, হাকীম আলীর পরিবার ওই ভূমির মালিক হওয়ার কথা নয়। ১৯৬২ সালে কলেজের নামে জায়গাগুলো অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, জায়গাগুলোতে তারা উত্তরাধিকার সূত্রে ভূমির মালিক তবে ওনাদের সাথে আমাদের বিরোধ নেই। সরকার যখন অধিগ্রহণ করে কলেজকে দিয়েছে এখন সেটি কলেজের। আর যারা এখন দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে সবাই উত্তরাধিকারীও নয়। বিভিন্নভাবে বিষয়টি দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে যাতে প্রক্রিয়াটি পিছিয়ে যায়। আদালতেও প্রক্রিয়াটি দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

কলেজের বিভিন্ন জায়গা দখলমুক্ত করার প্রসঙ্গে ভূমি রক্ষা কমিটি সূত্র জানায়, কিছুদিন পূর্বে এডিএম কোর্ট হাসপাতাল মোড়ের জায়গায় ১৪৫ ধারা জারি করেছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের সাথে আলোচনা হবে, দুইপক্ষের সাথে বসার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে, কলেজের যে কাগজপত্র আছে সেখানে বলা আছে এ জায়গাগুলো কলেজের। পরবর্তীতে মালিকানা দাবিদারদের সাথেও কমিটি কথা বলেছে। তারা বিএস খতিয়ানে নাম উঠিয়েছে যেকোনোভাবে। ঢাকায় গ্যাজেটের মাধ্যমে এটি অধিগ্রহণ হয়েছিল সেটির প্রমাণ কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আছে।

এ বিষয়ে ভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক নূরুল আজিম ভুঞা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ জায়গাটি বেদখল ছিল। অতীতে বিভিন্ন সময় ভূমি রক্ষা কমিটি ছিল। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে কমিটিগুলো সেভাবে কাজ করতে পারেনি। বর্তমান অধ্যক্ষ ভূমিগুলো রক্ষার বিষয়ে আগ্রহী সে অনুযায়ী আমরাও কাজ করছি। শুধুমাত্র সে জায়গা নয়, পাইলট হাই স্কুলের সাথে একটি ভূমি নিয়ে বিরোধ আছে, সেটি নিয়েও কাজ করছি।

হাকীম আলীর ওয়ারিশগণ সূত্রে জানা গেছে, ১৯১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রিকৃত ৪৭৮ নং সাফ কবলা কেবলা মূলে হাকিম আলী গাইন সুলতানপুর মৌজার সি.এস ১০৫/৩ রেকর্ডীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৬৪.৫০ শতক ভূমি ক্রনয় করে মালিক দখলকার হন। পরবর্তীতে হাকীম আলীর বায়া সি.এস রেকর্ডীয় ব্যক্তিদের নামে এস.এ ১১৫ খতিয়ান প্রস্তুত ও প্রচারিত হয়। অতিসম্প্রতি বাংলাদেশ জরিপ বি.এস খতিয়ানও হাকীম আলী গাইনের ওয়ারিশদের নামে প্রস্তুত ও প্রচারিত হয়। বর্তমানে হাকীম আলীর দুই পরিবারের ৬ সন্তানের ওয়ারিশরা উক্ত জায়গা দখলে আছেন।

ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক ফরিদ আলম ভুঞা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কলেজের আরেকটি ক্যাম্পাস ফলেশ্বর এলাকায় হওয়ার কথা ছিল। এখানে ইন্টারমিডিয়েট ওখানে ডিগ্রি এমন পরিকল্পনা ছিল। আমাদের জায়গার মধ্যে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানও হয়েছে। আমরা কলেজের জায়গাগুলো নেওয়ার চেষ্টা করছি। এ জায়গাগুলো নিয়ে আমরা একটা আবেদন করেছি। সে অনুযায়ী এডিএম আদালতে ১৪৫ জারি করেছে। এখানে আমাদের কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। কলেজের জায়গা আমরা সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় কাজ করছি। এসিল্যান্ড অফিস থেকে আমাদের বসার জন্য বলা হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধি যাবে তখন এ অনুযায়ী আলোচনা হবে।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, ফেনী সরকারি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ এনামুল হক খোন্দকার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি কলেজের জায়গা উদ্ধারে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে সদর হাসপাতাল মোড়ে কলেজের খালি জায়গায় কাটা তারের বেড়া দিয়েছেন তিনি। 

কলেজের এ জায়গাগুলো উদ্ধারে আগের প্রশাসনের কোন অবহেলা ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কেউ এ ঝামেলা নিতে চায়নি। অবহেলা ত অবশ্যই ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালীন কেউ দখলকরার চেষ্টা করেছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি সে সময় কিছু মানুষ মাটি ফেলে ভরাটের চেষ্টা করেছিল। তখন এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ কেউ তখন কথা বলেনি কেন সে দায়িত্ব আমার নয় কারণ, তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। হয়তোবা তখন পরিস্থিতি এমন ছিল না। প্রভাবশালী মহল তখন জড়িত ছিল তাই হয়ত কেউ কথা বলেনি। বিগত সময়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনো অবহেলা ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলা ছিল। কেউ দায়িত্ব নিতে চাননি কারণ, অনেক ধরনের ঝামেলা আছে। কেউ হয়ত ঝামেলাগুলো নিতে চাননি।

তিনি আরও বলেন, অধিগ্রহণের নথি আমাদের কাছে আছে। কিছু অবৈধ দখলদার এগুলো দখল করে রেখেছে। এ বিষয়ে একটা মামলা চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনের সাথে আলোচনা হয়েছে, তারা এ বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

এদিকে কলেজের সম্পদ রক্ষায় গতকাল বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে কলেজ গেইট সম্মুখে মানববন্ধন করেছে কলেজের শিক্ষার্থীরা।


সর্বশেষ সংবাদ