পাঠ প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের অন্যতম জ্ঞানকেন্দ্র বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি

বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ১৯৫২-২০২৩ বই
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ১৯৫২-২০২৩ বই  © সংগৃহীত

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ১৯৫২-২০২৩’ বই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান তাঁর গবেষণালব্ধ তথ্য ও বিশ্লেষন তুলে ধরেছেন এ বইয়ে। এটি পড়ার পর পাঠক হিসেবে প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো। 

বই: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ১৯৫২-২০২৩
বই লেখক: মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান
প্রকাশনী: ইতিবৃত্ত প্রকাশন/সেপ্টেম্বর ২০২৩
অধ্যায়: ৪; পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৭৬

উইলিয়াম জোনস এশিয়ার মানুষ ও প্রকৃতি জানার তাগাদা থেকে কলকাতায় যে 'এশিয়াটিক সোসাইটি' প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তার অনুস্মৃতিতে প্রায় সমউদ্দেশ্যে ঢাকার বুদ্ধিজীবী সমাজ গড়ে তুলেছেন 'বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি'।

১ম অধ্যায়: জোনসের 'এশিয়াটিক সোসাইটি', ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর 'ওরিয়েন্টাল একাডেমি', বুদ্ধিজীবী মহলের 'এশিয়াটিক সোসাইটি অব পাকিস্তান', এবং স্বাধীনতা উত্তর 'দ্যা এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ' থেকে 'বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি' নামে বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার ইচ্ছাবৃত্তি, প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, ব্যক্তি ও তাঁদের কর্মতৎপরতা বইটির ১ম অধ্যায়ের উপজীব্য।

উপমহাদেশের বৃটিশ শাসকদের ওরিয়েন্টালিজম চর্চা এবং প্রয়োজনীয়তা চিন্তাশীল পাঠককে নাড়া দিবে নিশ্চয়ই। বিশেষত জোনস দায়িত্ব পেয়ে ভারতবর্ষে আসার যাত্রাপথে জাহাজে বসেই চিন্তা করেছেন এশিয়ার মানুষ ও প্রকৃতি জানার জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে! আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য ও জাতিগোষ্ঠীর আচরণ গবেষণা ছাড়া এ উপমহাদেশ শাসন অসম্ভব ছিলো বৈকি!

২য় অধ্যায়: গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির এযাবৎকালের গবেষণা ও প্রকাশনা পর্যালোচনা দ্বিতীয় অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয়। সোসাইটির বিশদ ভলিয়মের বিভিন্ন গবেষণা সমূহ লেখক সংক্ষেপে আলোচনা করেছেন এবং সন ভিত্তিক ১৫২ টি প্রকাশনার তালিকা উল্লেখ করেছেন। প্রথমদিকে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি গবেষণা ইসলাম ও মুসলিম প্রসঙ্গ দৃশ্যমান। পরবর্তী কিছু গবেষণার প্রসঙ্গ মুসলিম শাসন ও শাসকদের ইতিবৃত্ত। তার পরবর্তী গবেষণাসমূহ স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ ও সংশ্লিষ্ট ইতিহাস, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে। 

বিগত তিন দশকের গবেষণা কার্যক্রর্য সোসাইটির ইতিহাসে এক মাইল ফলক বলা যায়। এ অধ্যায় পাঠকের মনে সোসাইটি প্রকাশিত গ্রন্থগুলো পাঠে ব্যাপক উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে। তবে প্রথম দিকের প্রকাশিত 'ইসলাম ও মুসলিম' প্রসঙ্গে প্রকাশিত গ্রন্থগুলো যদি পর্যালোচনায় লেখক অন্তর্ভুক্তর্ভু করতেন তবে পাঠক প্রাথমিক ভাবে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারতেন। 

আরও পড়ুন: অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমানের ‘বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ১৯৫২-২০২৩’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

৩য় অধ্যায়: একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ৪৬টি ট্রাস্ট ফান্ড রীতিমত বিস্ময়কর। এ বিস্ময়ের মূল কারণ ট্রাস্ট ফান্ডের বহুমুখী উদ্দেশ্য। বিজ্ঞান থেকে কলা, চিকিৎসা থেকে সামরিক, রাজনীতি থেকে অর্থনীর্থ, সাহিত্য থেকে ধর্ম ইত্যাদি সর্ববিষয়ে গবেষণা ও গবেষণা বক্তৃতার জন্য ট্রাস্ট ফান্ড যা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রত্যেক গবেষকের জানা অপরিহার্য। এ অধ্যায়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় নিযুক্ত গবেষক শিক্ষকদের জন্য মাস্ট রিড হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ইসলামিক স্টাডিজ ব্যাকগ্রাউন্ড একজন শিক্ষার্থী হিসেবে অন্তত এক ডজন ট্রাস্ট ফান্ডের উদ্দেশ্য এ রিভিউ রাইটারের জন্য প্রাসঙ্গিক।

৪র্থ অধ্যায়: এ অধ্যায়ে গবেষক এশিয়াটিক সোসাইটির জাদুঘর, আর্ট গ্যালারি ও গ্রন্থাগারের পরিচয় বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। বিশেষত নতুন প্রজন্মের কাছে নিমতলী প্রাসাদ ও দেউরির বিস্মৃত এক ইতিহাস আলোকে নিয়ে এসেছেন। পাঠক মনে নিমতলী জাদুঘর ও গ্ৰন্থাগারে বসে অধ্যয়ন করার বাসনা এঁকে দেয়ার মাঝে লেখকের সাফল্য ধরা পড়ে। এ রিভিউয়ের লেখক বিশেষত ইসলাম, আরবী, উর্দু ও ফারসি ভাষায় রচিত পাণ্ডুলিপি সমূহ ঘেঁটে দেখার উদগ্র বাসনা চেপে রাখতে ক্লান্তি অনুভব করেছে।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান একজন ইতিহাস গবেষক। ইতিহাসের এক নির্মোহ পাঠ তিনি শুধুতার কলমে লিপিবদ্ধ করেছেন। কোনরূপ পূর্ব দৃষ্টান্ত কিংবা কোন কিছু অনুসৃতি ছাড়া সম্পূর্ণ একটি নতুন বিনির্মাণের মতো দুঃসাধ্যকে তিনি সাধন করেছেন অত্যন্ত সাধারণ, প্রাঞ্জল ও পাঠযোগ্য ভাষায়। যদিও কম্পোজ ও মুদ্রণ জনিত কিছু ত্রুটি লক্ষণীয়।

ড. খানের গবেষণার প্রধান অধিক্ষেত্র আধুনিক মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক ক্রমবিকাশ। দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিকাশ ধারা সম্পর্কিত পাঠ ও গবেষণা তার বিশেষ আগ্রহের বিষয়। সে হিসেবে তিনি 'মোগল ভারতের ইতিহাস', 'বাংলাদেশের ইতিহাস ১৯৭২-২০১৪', 'উসমানী সালতানাত: রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি', 'নবাবি বাংলার অভিজাত শ্রেণি: রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি' ইত্যাদি গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেছেন। তম্মধ্যে সর্বশেষ উল্লেখিত বইটি এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত। ইতিহাস পাঠক এসব গবেষণা গ্ৰন্থ পাঠ করতে পারেন।

তাই গবেষণা আগ্ৰহী পাঠক বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় নিযুক্ত গবেষক শিক্ষকদের জন্য লেখকের 'বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ১৯৫২-২০২৩' বইটি সংগ্রহ ও অধ্যয়ন যোগ্য মনে করছি।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ