জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন হবে কাল © টিডিসি সম্পাদিত
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর)। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দুই দশক পর প্রথমবারের মতো অধিকার আদায়ের প্রতিনিধিকে নির্বাচনের সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। পুরো নির্বাচনকে উৎসবের রূপ দিতে প্রস্তুত ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্রশক্তি ও বাম-জোট।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি এবং কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। দুদিন আগে থেকেই ক্যাম্পাস নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে।
১৯৮৭ সালে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কলেজটি ২০২৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ার পর এটিই প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন। অর্থ্যাৎ ৩৮ বছর প্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
এদিকে জকসু নির্বাচনে মোট ৩৯টি কেন্দ্রে ১৭৮টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এরইমধ্যে বুথ স্থাপন শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকালে কেন্দ্র ও বুথের তালিকা প্রকাশ করে কমিশন।
কমিশন সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য ৩৮টি এবং হল সংসদের জন্য ১টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি ১০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে ভোটগ্রহণ বুথ থাকবে। ভোটগ্রহণ শেষে মেশিনের মাধ্যমে ভোট গণনা করা হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। সব মিলিয়ে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে প্রবেশসংক্রান্ত বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন-কেবল অনুমোদিত ব্যক্তি, ভোটার, শিক্ষক এবং নির্বাচন কাজে বিশেষভাবে অনুমোদিত ব্যক্তিরাই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। এজন্য নির্ধারিত পরিচয়পত্র বহন বাধ্যতামূলক। পরিচয়পত্র সংগ্রহের বিস্তারিত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রবিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আনসার, র্যাব র?্যাব সদস্যদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। আজ সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও তার আশপাশে এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করবে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। জকসু নির্বাচন ঘিরে ভোটকেন্দ্রে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আরও পড়ুন: ছুটির দিনে সিন্ডিকেট সভার ডাক, ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন শিক্ষক ও ছাত্রনেতারা
এদিকে কমিশনের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, নির্বাচনের দিন ভোটার নয় এমন কোনো শিক্ষার্থী, ছাত্র সংগঠনের নেতা বা কর্মী ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা আশপাশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার, জটলা বা অননুমোদিত প্রবেশ বরদাশত করা হবে না বলে রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব তথ্য জানান নির্বাচন কমিশন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। ৩৯ কেন্দ্রের ১৭৮ বুথে ভোট গ্রহণ হবে। ব্যালট পেপার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভোট গ্রহণ চলাকালে প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবেন। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ টিম দায়িত্ব পালন করবে।
একনজরে জকসু নির্বাচন
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, জকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১৬ হাজার ৪৪৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৮ হাজার ৪৭৯ জন এবং পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ১৭০ জন। কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট প্রার্থী ১৮৭ জন। নির্বাচনের মোট প্যানেল ৪টি (ছাত্রদল, শিবির, ছাত্রশক্তি ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রান্ট)। সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী ৯ জন, সহসাধারণ সম্পাদক ৮ জন। নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার), এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।