ঢাবিতে ছাত্রফ্রন্টের সমাবেশে ২৬ মাইক, শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বন্ধ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:১২ PM , আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:১৫ PM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সমাবেশে ব্যবহৃত ২৬ টি মাইক শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বন্ধ করতে বাধ্য হয় আয়োজকরা। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯ টা থেকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে চারদিকে রাস্তা বন্ধ করে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্টের চার দশক পূর্তি উপলক্ষ্যে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সমাবেশের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
সমাবেশে ব্যবহৃত মাইকের উচ্চ শব্দে একসময় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। রাজু ভাস্কর্য থেকে ভিসি চত্বর, শহীদ মিনার ও শাহবাগ পর্যন্ত এসব মাইক টাঙানো হয়। পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, রোকেয়া ও শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ২৬টি মাইক বন্ধ করেন আয়োজকরা।
সমালোচনার ফলে মাইক বন্ধ হলেও রাজু ভাস্কর্যে ছয়টি উচ্চ শব্দের সাউন্ডবক্স বাজিয়ে যান তারা।
এসময় লাইব্রেরি থেকে মাইক বন্ধ করতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সকালে লাইব্রেরিতে এসে মাইকের তীব্র আওয়াজে কোনো ভাবেই পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। শব্দ এতো তীব্র যে মনে হচ্ছে যেন লাইব্রেরির ভেতরেই প্রোগ্রাম হচ্ছে। শব্দে রীতিমতো লাইব্রেরির গ্লাসগুলো কাঁপছিলো। অনেকের পরীক্ষা চলমান, এটা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির উদ্দীন রিয়ন বলেন, ‘ক্যাম্পাসের তিন শতাধিক বহিরাগত এনে সকাল থেকে উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো হচ্ছে। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল চলছে। মাইকের আওয়াজে শিক্ষার্থীরা হলে, লাইব্রেরিতে থাকতে পারছে না। অন্যদিকে বইমেলার কারণে এমনিতেই চারদিকে তীব্র যানজট, তার উপর এসব কাণ্ডজ্ঞানহীন সমাবেশে অতিষ্ঠ আমরা।’
তাছাড়া বহিরাগত শিক্ষার্থী ও লোকজন ভাড়া করে এনে ক্যাম্পাসের পরিবেশ ও ভারসাম্য বিঘ্নিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
সমাবেশে উপস্থিত হওয়া উর্মি নামের একজন বলেন, তিনি চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন। পড়ছেন উচ্চ মাধ্যমিকে। উর্মির মতো শ’খানেক বহিরাগত শিক্ষার্থী ও লোকজনের দেখা মিলেছে সরেজমিনে।
তোপের মুখে সংগঠনটির সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মাইকগুলো বন্ধ করে দিয়েছি তবে আমাদের অনুষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিশাল জায়গা নিয়ে অনুষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় টিএসসি, মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ, শাহবাগ, শহীদ মিনার ও দোয়েল চত্বর এলাকায় তীব্র যানজট দেখা গেছে। এসময় অসুস্থ রোগী পরিবহণকারী অ্যাম্বুলেন্সকেও আটকে থাকতে দেখা যায়।
পথচারী রাশেদুল ইসলাম জানান, ‘আধাঘণ্টা ধরে গাড়িতে বসে আছি জ্যামের কারণে। এরকম রাস্তা আটকিয়ে সমাবেশ করা নতুন বাংলাদেশের স্পিরিটের পরিপন্থি।’
অন্যদিকে সমাবেশের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি না নেয়ার ব্যাপারে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘তারা আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। অনুমতি চেয়েছিল, আমরা না করেছি। আমরা বলেছি, বইমেলা চলাকালীন সময়ে রাস্তা বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু তারা কথা রাখেনি, বরং উচ্চ শব্দে মাইক ব্যবহার করেছে। মাইকের আওয়াজে আমরা অফিসে বসতে পারছি না।’
তারা বিনা অনুমতিতে কীভাবে এত বড় সমাবেশ করছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রক্টর বলেন, ‘আমরা তো আর মাইক খুলে ফেলতে পারি না, ফোর্স অ্যাপ্লাই করতে পারি না। আমরা তাদেরকে বুঝিয়েছি, কিন্তু তারা কথা রাখেনি।’
সমাবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিনষ্টের অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদেরকে শোকজ করবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, ‘আমাদের এই কর্মসূচির পরিকল্পনা দুই মাস আগের। আমরা প্রশাসনকে বলেছিলাম। মাইক ছাড়া এতো বড় প্রোগ্রাম করা সম্ভব না। এই মাইক বাজে বলেই গরীব শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারে।’