ঢাবিতে গণত্রাণের মোট হিসাব প্রকাশ, সংগ্রহ ৭ কোটি ৭৮ লাখ
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০১:১২ AM , আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০১:৩৬ AM
দেশের দক্ষিন-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তম দিনের মত চলছে গণত্রান সংগ্রহ কর্মসূচি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সরকার পতনের এক সফল আন্দোলনের পর বন্যা কবলিতদের সহায়তার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতিই ভরসা করছেন রাজধানীসহ দেশের সাধারণ মানুষ। তারই প্রেক্ষিতে রাজধানীর জনসাধারণ, বিভিন্ন উপজেলা ভিত্তিক ছাত্র সংগঠন, বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকেও ত্রাণ ও নগদ অর্থ প্রদান করতে দেখা গেছে।
তবে কিছুদিন যাবৎ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে ত্রাণ জায়গামত পৌঁছানো ও সার্বিক কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ করছেন একাধিক শিক্ষার্থী। তারই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা সমন্বয়কদের সার্বিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। অনেকে আবার তাদের সমন্বয়হীনতার কথা উল্লেখ করে সমাধান চেয়ে পোস্ট করেছেন।
এবার সাত দিনের কর্মসূচির সার্বিক হিসাব প্রকাশ করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গণত্রাণ কর্মসূচিতে এক সপ্তাহে নগদ অর্থ, মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংকিং খাতে মোট ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৬ হাজার ২৭৮ টাকা উত্তোলন হয়েছে। এরমধ্যে গুড়, খেজুরসহ খাবার এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে ৭১ লাখ ২০ হাজার ৬৪৪ টাকা খরচ হয়েছে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমম্বয়ক আব্দুল কাদের এই তথ্য জানান।
তিনি জানান, ২২ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট রাত ৯ টা পর্যন্ত নগদ ৬ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ১০০ টাকা সংগ্রহ হয়েছে। এছাড়া, এই সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৮৩ লাখ ৮৮ হাজার ৩৮৮ টাকা এবং ব্যাংকিং মাধ্যমে ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ৭৯০ উত্তোলন হয়েছে।
এই টাকা থেকে ইতোমধ্যে ১৮ লাখ ১৫ হাজার ২০০ টাকার খেজুর, ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪০ টাকার মুড়ি, ১ লাখ ৯০ হাজার ৩০০ টাকার বিস্কুট, ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার চিনি, ১৮ লাখ ২৫ হাজার ১৫৭ টাকার চিড়া, ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯৪৮ টাকার গুড়, ৪৫ হাজার ৫০ টাকার দড়ি, কাটার, কলম ও মাইক্রোফোন, ৩ লাখ ৩০ হাজার ৫০৫ টাকার পলিথিন, ৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৮০ টাকার বস্তা, ৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকার কয়েল ও মোবাতি কেনা হয়েছে। এছাড়া সেচ্ছাসেবকদের দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য ৩ লাখ ৯২ হাজার ৬৪৫ টাকা, রিক্সা ও ভ্যান ভাড়া ৬৫০ টাকা এবং গাড়ির সাথে সেচ্ছাসেবকদের পেছনে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমম্বয়ক লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, মোট সংগৃহীত অর্থের মধ্যে ৫ কোটি ৮৪ লাখ ১৭ হাজার ১৪৭ টাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালী ব্যাংক শাখায় জমা দেওয়া হয়েছে। সমম্বয়ক আবু বাকের মজুমদার জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি থেকে সংগ্রহীত এবং ক্রয়কৃত সামগ্রী ব্যবহার করে একটি পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার এবং ওষুধের প্যাকেজ তৈরি করা হয়। এরকম ৮০০ থেকে ১২০০ টি প্যাকেজ ও ২০ থেকে ৩০ কেস পানি দিয়ে একটি ট্রাক লোড করা হয়।
‘২২ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট রাত ৯ টা পর্যন্ত এরকম ৮২ ট্রাকের মাধ্যমে এক লক্ষের অধিক মানুষের কাছে ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে ৪ হাজার প্যাকেজ হেলিকপ্টার যোগে বন্যাকবলিত দুর্গম অঞ্চলগুলোতে বণ্টন করা হয়েছে। এছাড়াও ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। ’গণ রান্না কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের গণ রান্না কর্মসূচি স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় কুমিল্লার ৪ উপজেলা ও খুলনার পাইকগাছা প্রায় ৫০ হাজার মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার থেকে এটি অন্যান্য বন্যাকবলিত জেলায়ও একই রকম কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।’
গত ২১ আগস্ট বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের আহবানে সাড়া দিয়ে ত্রাণ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জনতার ঢল নামে। পরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় টিএসসি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শারীরীক শিক্ষা কেন্দ্রের জিমনেশিয়ামে ত্রাণ রাখা শুরু হয়। সেখানেও সংকুলান না হওয়ায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের গ্যালারিতে ত্রাণ রাখা শুরু হয়। ত্রাণ গ্রহণ কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে।