সরকারি ভবনে থেকেও বাড়িভাড়া নিচ্ছেন যবিপ্রবি শিক্ষক-কর্মচারীরা

লোগো
লোগো  © ফাইল ছবি

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) আবাসিক ভবনে বসবাস করেও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি বাড়িভাড়ার পুরোটাই তুলে নিচ্ছেন। এরপর নামমাত্র বাড়িভাড়া পরিশোধ করছেন। এ তালিকায় রয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনও। যবিপ্রবির বিরুদ্ধে ইউজিসি প্রায় কোটি টাকার অডিট আপত্তির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে এ নিয়ে একাধিকবার আপত্তি জানালেও বিষয়টি কানে তুলছে না যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ।

ইউজিসি অনেক বিষয় নিয়ে অডিট আপত্তি দেয়। সেগুলোর যথাযথ জবাবও দেওয়া হয়। -অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, উপাচার্য, যবিপ্রবি

ইউজিসির এক অডিট আপত্তিতে বলা হয়েছে, উপাচার্য মহোদয়ের এয়ারমার্ক বাংলো থাকা সত্ত্বেও ঢাকাস্থ বাসার ভাড়া বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল হতে পরিশোধ করায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে সুপারিশ করা হয়েছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এয়ারমার্ক করা বাংলো থাকলে ব্যক্তি ব্যবহার করুক বা না করুক, এক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়া ভাতা প্রদানের কোনো সুযোগ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, যবিপ্রবির শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের জন্য ৭৩টি ফ্ল্যাট ও বাসা রয়েছে। এর মধ্যে ৬৭টি ফ্ল্যাট ও বাসায় থাকেন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ছাড়া উপাচার্যের জন্য এয়ারমার্ক বাংলো তো আছেই।

তবে তারা সরকারপ্রদত্ত বাড়ি ভাড়া বাবদ ভাতার পুরোটাই উত্তোলন করলেও ভাড়াবাবদ মাত্র দেড় থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পরিশোধ করছেন। অথচ সরকারি বিধি অনুযায়ী, ‘প্রজাতন্ত্রের যে সকল কর্মচারী সরকারি বাসস্থানে বসবাস করিতেছেন তাহারা বাড়ি ভাড়া বাবদ ভাতা প্রাপ্য হইবেন না।’

UGC wants to stop evening courses

বাসা ভাড়া নিয়ে যবিপ্রবির সর্বশেষ গত ১৩ সেপ্টেম্বরের অফিস আদেশেও বিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে। এই অফিস আদেশে তিন কক্ষের বাসা ভাড়া সাড়ে ৪ হাজার টাকা, দুই কক্ষের ৩ হাজার টাকা এবং এক কক্ষের জন্য দেড় থেকে ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আদেশে উল্লেখ আছে, ভবিষ্যতে বাসা ভাড়া বিষয়ে অডিট আপত্তি তোলা হলে নিয়ম মেনে ভাড়া পরিশোধে কর্মচারীরা বাধ্য থাকবেন।

ইউজিসির ২০২২-২৩ অর্থবছরের অডিট আপত্তিতে বলা হয়, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিধিবহির্ভূতভাবে নির্দিষ্ট হারে বাড়ি ভাড়া কর্তন করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের সুপারিশও রয়েছে অডিটে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, আবাসিক ভবনে বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণকে বিধিবহির্ভূতভাবে পূর্ণ বাড়ি ভাড়া প্রদান এবং উপাচার্যের ঢাকার বাড়ি ভাড়া প্রদান করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৯৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা।

ইউজিসি পরিদর্শক দলের সুপারিশে বলা হয়েছে, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১৬ এর উপ-অনুচ্ছেদ (২) অনুসরণপূর্বক আবাসনে বসবাসরতদের বাড়ি ভাড়াভাতা প্রদান বন্ধ করে ইতোপূর্বে প্রদত্ত অতিরিক্ত অর্থ সুবিধাভোগীদের নিকট হতে আদায় করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণকে বিধিবহির্ভূতভাবে পূর্ণ বাড়ি ভাড়া প্রদান এবং উপাচার্যের ঢাকার বাড়ি ভাড়া প্রদান করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৯৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা।

আবাসিক ভবনে বসবাসরতদের পূর্ণ বাড়িভাড়া ভাতা প্রদান সম্পর্কে জানতে চাইলে যবিপ্রবির পরিচালক (হিসাব) মো. জাকির হোসেন বলেন, রেজিস্ট্রার দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া ভাতা প্রদান করা হয়। এ জন্য তিনি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য না দিয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ইউজিসি অনেক বিষয় নিয়ে অডিট আপত্তি দেয়। সেগুলোর যথাযথ জবাবও দেওয়া হয়। আর রাজধানী ঢাকার বাইরের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বাড়ি ভাড়া ভাতা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা বিষয়টি বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটিই বাস্তবায়ন হবে।


সর্বশেষ সংবাদ