নারীর সঙ্গে ওসি পায়েলের অডিও-ভিডিও ভাইরাল

ওসি পায়েল হোসেন
ওসি পায়েল হোসেন  © সংগৃহীত

যশোরের চৌগাছা থানার বিতর্কিত ওসি পায়েল হোসেনের অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ৫ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া এক নারীর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছেন ওসি। কথা বলতে বলতে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা যায় তাকে। একপর্যায়ে ওই নারীকে নিজের স্পর্শকাতর বিভিন্ন গোপন জায়গা দেখাচ্ছেন আর হাসছেন তিনি।

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ওসি পায়েল কখনো অন্য একটি মোবাইলে কথা বলছেন আবার কখনো হাসতে হাসতে ওই নারীকে বিভিন্নভাবে অশালীন ইঙ্গিত দিচ্ছেন। একপর্যায়ে নিজের পুরো শরীর প্রদর্শন করতেও দেখা যায় তাকে।

এ ছাড়া ওসি পায়েল ও ওই নারীর আরও তিনটি অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। অডিওতে ওই নারীকে ওসি রাতে তার সঙ্গে থাকতে পাঁচ হাজার টাকার প্রলোভন দেখানো হয়। আরেকটি অডিওতে ওই নারীকে চুমু খেতে শোনা যায় ওসিকে। এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে কালবেলা।

এর আগে গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) এই ওসি পায়েল হোসেনের চাঁদাবাজি নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা হয়।

জানা গেছে, কিছুদিন আগে চৌগাছা উপজেলায় পারিবারিক বিরোধের জেরে এক নারীর সঙ্গে তার স্বামীর বিচ্ছেদ হয়। সেই নারীর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার সঙ্গে রাতে থাকাসহ বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দেন ওসি পায়েল। কিন্তু ওই নারী রাজি না হওয়ায় তাকে মামলা দিয়ে জেলে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি।

তবে ওসি পায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে ওই নারী অস্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন, আমি তালাকপ্রাপ্ত, তাই ওসি পায়েল আমাকে বিভিন্ন সময়ে ফোন করে থানায় ডাকত এবং বিভিন্নভাবে জোর-জবরদস্তি করত। একদিন ওসি তার অফিস রুমের বাথরুমে নিয়ে তাকে জোর করে চুমু দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

তবে অপর একটি অডিওতে ওসির সঙ্গে তাকে রোমান্টিকভাবে কথা বলতে শোনা যায়। সেখানে ওই নারী ওসিকে ‘তুমি’ বলেও সম্বোধন করেন। সেখানে ওসি তাকে আসতে বললে তিনি খালার বাড়ি আছেন বলে জানান এবং কথাবার্তার এক পর্যায়ে ওসির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তোমার কাছে থাকব না তো কি বাবুর কাছে থাকব।’ এ ছাড়া ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে ওসি হাসতে হাসতে তাকে নিজের গোপনাঙ্গ প্রদর্শন করেন। তবে ওসি তাকে ভয় দেখিয়ে এসব করতেন বলেই ওই নারী দাবি করেন।

জানা যায়, গত সেপ্টেম্বরে ওসি পায়েল হোসেন শিল্প পুলিশ থেকে বদলি হয়ে চৌগাছা থানার দায়িত্ব নেন। থানায় যোগদানের পর থেকেই টাকার জন্য হন্যে হয়ে ওঠেন তিনি। প্রথম অভিযানেই তিনি চৌগাছা বাস মালিক সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিনের বাড়ি সারা রাত অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরদিন সকালে জসিম উদ্দিনের স্কুলপড়ুয়া ছেলে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে বাড়ির বাইরে গেলে থানার পুলিশ সদস্যরা তার গাড়ি আটক করে তল্লাশি শুরু করেন।

এ সময় স্থানীয়রা জড়ো হয়ে ছেলেটির পরীক্ষার কথা বারবার বলতে থাকলেও প্রায় ৪৫ মিনিট সেই গাড়ি তন্নতন্ন করে তল্লাশি করে তাকে যেতে দেয়। এরপর ওসি জসিম উদ্দিনের কাছে এক কোটি টাকা দাবি করেছিলেন বলে জসিম উদ্দিন অভিযোগ করেছেন।

ওসি পায়েল ৩ নম্বর সিংহঝুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হামিদ মল্লিককে গ্রেপ্তার করে ২০ লাখ টাকা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। চেয়ারম্যান টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে একটি মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় আদালতে পাঠানো হয়। কিছুদিন পরে হামিদ মল্লিক জামিনে বেরিয়ে গ্রেপ্তারের সময় থানায় জমা রাখা তার মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য জিনিসপত্র আনতে গেলে ওসি পায়েল তাকে থানার সেকেন্ড অফিসার মেহেদী হাসানের রুমে নিয়ে আবারও টাকা দাবি করেন। সে সময়ও চেয়ারম্যান টাকা দিতে অস্বীকার করলে ওসি পায়েল তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

চৌগাছা বাজারের এক ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন ওরফে জাল জসিমকে থানায় ডেকে প্রতি মাসে চার লাখ টাকা হিসেবে ছয় মাসের অগ্রিম দাবি করেন। জসিম সেই টাকা দিতে অস্বীকার করে চৌগাছা থেকে বিতাড়িত হন। জীবন ইলেকট্রনিক্সের মালিক জীবন খান লিপুর কাছেও ওসি দুই লাখ টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জীবন গণমাধ্যমকে বলেন, ওসি আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন। আমি এক লাখ টাকা দিয়েছিলাম। পরে তিনি আরও এক লাখ টাকার জন্য আমাকে বিশ্রী ভাষায় গালমন্দ করে হুমকি দিতে থাকেন। আমাকে ও অন্য একজনের ছবি দিয়ে পোস্টার বানিয়ে থানার দেয়ালে টাঙিয়ে দেন। সেখানে তাদের তিনি দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

ফাঁস হওয়া অডিও-ভিডিওর বিষয়ে ওসি পায়েল হোসেন বলেন, আমাকে ট্র্যাপে ফেলা হয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। দয়া করে এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দেন।


সর্বশেষ সংবাদ