চা খেতে খেতে বই পড়তে পারবেন
এ যেন চট্টগ্রামের টিএসসি! নগরীর সিআরবি শিরিষতলার পাশ দিয়ে হেঁটে যেতেই দেখা মিলবে চারিদিকে ছোট-ছোট বাঁশ, উপরে ছন আর একপাশে খ্যাতনামা লেখকদের জনপ্রিয় বিভিন্ন বই দিয়ে সাজানো ছোট্ট একটি চায়ের দোকান।
কেউ নিজে নিজেই চা বানিয়ে নিচ্ছে, কেউ চা খেতে খেতে বই পড়ে সময় পার করছে, আবার কেউ কেউ ব্যস্ত চা খেতে খেতে ভিন্নধর্মী এই চা-স্টলের সাথে নিজেকে ফ্রেমবন্দী করতে। তরুণ থেকে শুরু করে নানা শ্রেণিপেশার মানুষের আগমনে চারপাশের পরিবেশ দেখে আপনার মনে হতেই পারে আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থান করছেন!
ব্যতিক্রমী এই চায়ের দোকানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কুঞ্জ’। আর চায়ের দোকানটি বানিয়েছেন চট্টগ্রামের স্নাতক পড়ুয়া ৯ শিক্ষার্থী। চা খেতে খেতে কথা হয় দোকানের অন্যতম কর্ণধার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষে অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী ইয়াসির মাহিনের সাথে।
তিনি জানান, করোনায় দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও অলস সময়কে কাজে লাগাতে আমরা বন্ধুরা মিলে ভালো কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নেই। স্নাতক পড়ুয়া ৯ বন্ধু মিলে অনেকটা সাহস করেই আমরা এই টি-স্টলটি দিয়েছি৷ তবে মানুষজন অল্পদিনে যেভাবে আমাদের গ্রহণ করছে, আমাদের দোকান নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় রিভিউ করছে সত্যি আমরা অভিভূত এবং কৃতজ্ঞ।
দোকানের নাম ‘কুঞ্জ’ হওয়ার পেছনের গল্প জানতে চাইলে মাহিন বলেন, ‘কুঞ্জ’ নামটা মূলত আমাদেরই আরেকজন অন্যতম কর্ণধার দেলোয়ারের দেওয়া। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় একটা স্থাপনার নাম দেখেই এরকম নামকরণ করা হয়েছে। প্রথমে আমরা ঠিক করেছিলাম এই দোকানটার নাম হবে ‘জ্ঞানকুঞ্জ’। কিন্তু কিছুটা গুরুগম্ভীর হয়ে যাওয়ায় আমরা ‘কুঞ্জ’ নামটা সকলে মিলে ঠিক করি। সন্ধ্যা নামতেই প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার চা-প্রেমিক মানুষজন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে ভিন্নধর্মী এই টি-স্টলে। চা খেতে খেতে আড্ডা আর গল্পে মেতে ওঠে চা প্রেমিক মানুষজন। শিক্ষার্থীদের এমন সৃজনশীল টি-স্টল নজর কাড়ছে যে কারও। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মধ্যেমেও ব্যাপক প্রসংশা কুড়িয়েছে ‘কুঞ্জ’।
ব্যতিক্রমী এই চায়ের দোকানের ছবি তুলে মানুষ প্রতিদিন শেয়ার করছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্লাটফর্মে। বর্তমানে তিন ধরনের চা পাওয়া যাচ্ছে এই চায়ের দোকানে। মালাই চা, দুধ চায়ের পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে রঙ চা৷ প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই চায়ের দোকান।
প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার টাকার মতো চা বিক্রি হচ্ছে এই দোকানে তবে ছুটির দিনগুলোতে আরও বেশি বিক্রি হয়ে থাকে৷ এখানে চা খেতে আসা মানুষজনও প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন এই শিক্ষার্থীদের৷
কথা হয় চা খেতে আসা এক শিক্ষক দম্পতির সাথে। তারা বলেন, মূলত ফেসবুকে বেশকিছুদিন ধরেই এই চায়ের দোকানের ছবিটি দেখছি। ব্যস্ততার কারণে আসা হয়নি। তবে এসে যেটি দেখলাম সত্যিই আমি অবাক হয়েছি। এত সুন্দর একটি চায়ের দোকান সাজানো ও চা বানানোর কাজটি করছে একদল শিক্ষার্থী, এটি জেনে আমি ব্যাপক আনন্দিত।
তিনি আরেও বলেন, এ ধরনের উদ্যোগী কাজগুলোতে সমাজের সবারই সহযোগীতা প্রয়োজন। ঘরে বসে না থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট হলেও কিছু একটা করা কিংবা করার চেষ্টাকে সবসময় আমি সাধুবাদ জানাই। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকলেও এখন বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ সবাই প্রসংশা করছে তাদের।
ইয়াসির মাহিন বলেন, ব্যতিক্রমী এই টি-স্টলের পুরো উদ্যোগটা আমরা ৯ জন বন্ধু মিলেই নিয়েছি একদম শুরু থেকেই এখনো একসাথে কাজ করে যাচ্ছি। চায়ের স্বাদ ও মান ভালো রাখতে প্রতিদিন আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে পুরো কাজটা আমরা করছি পড়াশোনার পাশাপাশি।
তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন ,আমাদের দেশের একটা বড় সমস্যা কাজকে ছোট করে দেখা। উন্নত বিশ্বে অবশ্য এই ব্যপারটি নেই, এজন্যই হয়তো তারা উন্নত। আমাদের সবার এই ধারণা থেকে যেভাবে হোক বের হয়ে কাজ করতে হবে। কোনো কাজই খারাপ নয় এই চিন্তাধারা নিয়ে সবার কাজ শুরু করা উচিত। তবে অবশ্যই সেই কাজ কারো ক্ষতির কারণ হতে পারবে না।