যেসব কারণে এসএসসিতে অনুপস্থিত থাকছেন পরীক্ষার্থীরা

এসএসসি পরীক্ষা
এসএসসি পরীক্ষা  © ফাইল ছবি

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল মিতু আক্তারের। পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথমদিকে প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছিলেন। তবে এর মাঝেই বিয়ে হয়ে যাওয়ায় শেষপর্যন্ত আর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা হয়নি মিতু আক্তারের।

মিতু আক্তারের মা রিনা খানম বলেন, আমি তিন বাসায় কাজ করে সংসার চালাই। যে টাকা উপার্জন করি তাতে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করানোতো দূরের কথা বাজার করাই কঠিন। তাই ভালো ছেলে পেয়ে মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে দিছি। 

এসময় তিনি আরো বলেন, কথা ছিল মেয়ে বিয়ের পরেও পড়বে। এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার জন্য ফর্মও পূরণ করছিল। কিন্তু মেয়েটার শাশুড়ি অসুস্থ। তাই শ্বশুরবাড়ি থেকে আর পরীক্ষা দিতে আসতে দেয়নি।

আরো পড়ুন: ঢাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলা করবে এনসিটিবি

শুধুমাত্র মিতু আক্তারই নয় এবছরের এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম দিনে অনুপস্থিত ছিল প্রায় ৩১ হাজার ৪৪৭ পরীক্ষার্থী। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবারে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৫১৬ জন, যাদের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৮ লাখ ৬২ হাজার ৬৯ জন। 

বিগত তিনবছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিবছরই ফরম পূরণ করার পরেও বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকছেন। এর আগে ২০২২ সালে প্রায় ৩৪ হাজার এবং ২০২১ সালে প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন।

এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার প্রথমদিনের তথ্য অনুযায়ী নয়টি সাধারণ বোর্ডের মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ২২২, রাজশাহীতে ১ হাজার ৭২০, কুমিল্লায় ২ হাজার ৬১৮, যশোরে ১ হাজার ৮৩৪, চট্টগ্রামে ১ হাজার ৬০৭, সিলেটে ৯৪০, বরিশালে ১ হাজার ২৬, দিনাজপুরে ২ হাজার ২৪৭ এবং ময়মনসিংহে ৯৭৮ জন অনুপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন ১১ হাজার ৩৮৩ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ২ হাজার ৮৭২ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকে এগিয়ে মেয়েরা

বিগত সময়ে দেখা গেছে, শুধু প্রথম দিনেই নয়, পরবর্তী পরীক্ষাগুলোতেও কিছু কিছু পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। সময়সূচী অনুযায়ী ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি (ভোকেশনাল) লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ২৩ মে। আর ২৫ মে শেষ হবে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিলের লিখিত পরীক্ষা।

শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে অনেকসময় প্রধান শিক্ষকরা এমন সব শিক্ষার্থীদের ফর্ম পূরণ করেন যারা ক্লাসে নিয়মিত নন এবং পরবর্তীতে দেখা যায় তাদের একটি বড় অংশই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে না। এছাড়া পরীক্ষার ভালো প্রস্তুতি না থাকা, অসুস্থতা, বাল্যবিবাহ এসব কারণেও অনেকসময় শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত থাকে।

পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার বলেন, কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে শিক্ষার্থীর নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করা থাকলেই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফরম পূরণের সুযোগ করে দেয়। কিন্তু এসব শিক্ষার্থীর অনেকেই পরে পরীক্ষা দেয় না। আবার কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী প্রস্তুতি ভালো না হওয়ায় এবং অসুস্থতার কারণেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে না। 

আরো পড়ুন: গুচ্ছে আবেদন কমেছে ৫৭ হাজার, বেশি বিজ্ঞানে

তবে অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবেও শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ অনুপস্থিত থাকছে বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, পরীক্ষায় অনুপস্থিতির একটা বড় কারণ হতে পারে অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব। এখনো অনেক অভিভাবক আছেন, সন্তান কিসে পড়ে, কেমন পড়ছে, তার বিস্তারিত জানেন না। আবার অভিভাবকদের অর্থনৈতিক কারণেও অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকতে পারে। বাল্যবিবাহের কারণেও কিছু ছাত্রীর পড়াশোনায় সমস্যা হতে পারে।

এই সমস্যার সমাধানে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কোন শিক্ষার্থীর পরিস্থিতি কেমন সেটি তাদেরকেই পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী ওই সব শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে কোনো পরীক্ষার্থীকে অনুপস্থিত থাকতে না হয়। 

 


সর্বশেষ সংবাদ