৭ কলেজ পরীক্ষার্থীর খাতা ফেসবুকে দিয়ে ঢাবি অধ্যাপকের স্ট্যাটাস, নেটিজেনদের সমালোচনা

সেই ফেসবুকের স্ট্যাটাসটি
সেই ফেসবুকের স্ট্যাটাসটি  © সংগৃহীত

উত্তরপত্রের ভুল ধরে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের এক পরীক্ষার্থীর খাতা ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. সোহানা জাহান। সেই পোস্টের স্ক্রিনশটটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, পরে তা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা করছেন নেটিজনরা। এরপর যদিও স্ট্যাটাসটির বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরে দুঃখপ্রকাশ করে আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঢাবির এই অধ্যাপক।

সম্প্রতি ফেসবুকের ওই স্ট্যাটাসে ঢাবির অধ্যাপক লেখেন, ‌‌‍“৭ কলেজের Number Theory এর খাতা। আমার কপালে কেমনে আসলো জানিনা!! নিজেরদেরগুলাই দেখার সময় পাইনা আবার ৭ কলেজ!! কাউকে ছোট করতে চাইনা!! আবার একজনকে দিয়ে সবাইকে জাজ করাও ঠিকনা। Perfect number er definition লিখতে চেয়েছে। এই এক Perfect word টাই একবারও perfectly লিখতে পারলোনা !!! আর খাতা দেখার সময় ভুলগুলা আমাকে দেখালো আমার ক্লাস 4 এ পড়া সামিহ।” তার এই স্ট্যাটাসে অনেক বানানগত ভুল ছিল বলে দাবি নেটিজেনদের, তা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

পরীক্ষার্থীর খাতা ফেসবুকে দিয়ে এমন স্ট্যাটাসের সমালোচনা করে এস্তোনিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিনুল ইসলাম লিখেন, মানে এটাও সম্ভব! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের একজন শিক্ষক একটা ছাত্রের পরীক্ষার খাতা তার ফেসবুকে আপলোড করে দিয়েছে! মানে এটাও সম্ভব! এরপর কি লিখেছে জানেন! ‘একটা বানান পর্যন্ত ঠিক মত লিখতে পারে না। বানান যে ভুল; সেটা ধরে দিয়েছে আমার ক্লাস ফোরে পড়া সামিহ।’ 

তিনি আরও লিখেন, অর্থাৎ তার সন্তানও ৭ কলেজের খাতা দেখছে! একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক; ছাত্রদের কোন চোখে দেখে একটা বার চিন্তা করে দেখুন। সে পরীক্ষার খাতা ফেসবুকে আপলোড করে দিয়ে বলছে- তার ক্লাস ফোরে পড়া সন্তানও নাকি এর চাইতে ভালো লিখতে পারবে! ছাত্র যদি ভুল করে। সেই ভুল ধরিয়ে দেয়াই তো শিক্ষকের কাজ। অথচ তিনি কি করলেন? ঘৃণা ছড়ালেন। 

মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিন সেই স্ট্যাটাসের মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, এই যেন আহমদ ছফার ‘গাভী বিত্তান্ত’ বইয়ের প্রতিফলন। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উচিত নিজস্ব গুরু থাকা। মারুফ মোতাহির নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘আমার ছেলের বয়স ৪। সে এখন শুধু অক্ষর চেনে। আমার ক্ষুদ্র মনে প্রশ্ন, ওই শিক্ষকের ৪ বছরের সন্তান কি তাহলে জন্মগত ভাবেই শিক্ষিত (!) হয়ে জন্মেছে?’ 

সমালোচনার মুখে আরেকটি পোস্টে নিজের অবস্থান তুলে ধরে দুঃখপ্রকাশ করেছেন অধ্যাপক ড. সোহানা জাহান। সেই স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, “শিক্ষক হিসেবে আমাদের অবশ্যই কথায়, কাজে, লিখায় অনেক পলিশড হওয়া উচিত। আমি শিক্ষক, সারা বাংলাদেশের সবার জন্যই শিক্ষক। আমার একটি পোস্টে ৭ কলেজ সংক্রান্ত একটি লিখা ছিল। যদিও আমি লিখেছি ‘কাউকে ছোট করার জন্য লিখিনি’ বা একজনকে দিয়ে সবাইকে জাজ করা ঠিক না। তবুও ওই লিখার কন্টেন্টটা অন্যকে ছোট করার মতোই ছিল। আমি ওই লিখার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”

“আমার ফ্রেন্ডলিস্টে, আমার রিলেটিভসদের মাঝেও অনেকেই আছেন ৭ কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছেন এবং যার যার জায়গায় সুপ্রতিষ্ঠিত আছেন। তাছাড়া আমার বন্ধুমহলে অথবা সিনিয়র জুনিয়র অনেক ভাই বোনও আছেন যারা বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করছেন। সর্বোপরি ৭ কলেজের সকল শিক্ষার্থীকেই বলছি কাউকে humiliate করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। তবুও নিজের অজান্তেই আমি তোমাদের কষ্ট দিয়েছি। তাই আমার ওই পোস্টের জন্য আমি আন্তরিকভাবেই দুঃখিত।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. সোহানা জাহানকে মুঠোফোনে কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।  

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছেন বলে জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ