কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়: ঈদের দিনে কর্তব্যই যাদের উৎসব

  © সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যখন ঈদের ছুটিতে ফাঁকা হয়ে যায়, তখনো কিছু মানুষ নিঃশব্দে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তারা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার ও অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মী—যাদের জন্য ঈদ মানেই কর্তব্যের এক নতুন রূপ।

ঈদের দিনেও পাহারায় সতর্ক প্রহরীরা। ভোরের আজানের সঙ্গে সঙ্গে যখন সবাই ঈদের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন নিরাপত্তাকর্মীদের কেউ কেউ পাহারার দায়িত্বে থাকছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেট, প্রশাসনিক ভবন, আবাসিক হল ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তারা সতর্ক পাহারায় থাকেন।

আনসার সদস্য মো. রিয়াজ হোসেন জানালেন, "এটাই আমাদের দায়িত্ব। ঈদের দিনে অন্যরা যখন পরিবারের সঙ্গে আনন্দ করেন, আমরা তখন ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। আমরা দেশের প্রতি ও দেশের জনগণের প্রতি সম্মান রেখেই এই ত্যাগকে হাসিমুখে বরণ করে নেই। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ও দেশের জনগণ যাতে শান্তিতে থাকতে পারে সেই মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই আমরা দায়িত্ব পালন করি। "

আনসার সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, ' দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এটা আমাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। চাকরির শুরু থেকে এই দায়িত্ব আমরা নিষ্ঠার সহিত পালন করতেছি। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা সর্বদা নিয়োজিত থাকি। দায়িত্ব পালনের জন্যই পরিবারের সাথে ঈদ করতে পারি না।'

নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য ঈদের সকাল মানেই দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে সহকর্মীদের সঙ্গেই তারা ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেন।

ঈদের দিন কেমন কাটে তা নিয়ে আনসার মো. রিয়াজ হোসেন বললেন, "আমরা একসঙ্গে নামাজ পড়তে যাই, তারপর ডিউটিতে ফিরে আসি। আমাদের আনসার বাহিনীর পক্ষ থেকে ঈদের দিনে বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয় পাশাপাশি এবার ভিসি স্যারের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য ১৬০ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেনু অনুযায়ী রান্না করে আমরা একসঙ্গে খাই। এটা আমাদের নিজেদের মতো করে ঈদ উদযাপন।"

নিরাপত্তার কাজে ব্যস্ত থাকলেও পরিবারের কথা মনে পড়ে সবার। এক আনসার সদস্য নুরুল ইসলাম আক্ষেপের সুরে বললেন, "বাচ্চারা অপেক্ষা করে, কিন্তু আমি ঈদের দিনে যেতে পারি না। ফোনে কথা বলি, পরে ছুটি পেলেই যাই।"

আরেকজন আনসার সদস্য বলেন, 'মা-বাবাকে ছাড়া ঈদ উদযাপন করতে হয়। একজন ছেলে হিসেবে এটা খুব কষ্টদায়ক। তবে যখন দায়িত্বের কথা মনে পড়ে তখন সান্ত্বনা পাই যে আমাদের উপর ভরসা করেই সবাই নিশ্চিন্তে বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে পারে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন নিরাপত্তাকর্মীদের ঈদের দিনে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে। তবে অনেকেই চান, ভবিষ্যতে তারা অন্তত ঈদের দিন পরিবারের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ পান।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী দিলোয়ার হোসেন বলেন, যখন আমরা ঈদ আনন্দে ব্যস্ত থাকি, তখনো এই মানুষগুলো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন নিরবে। ক্যাম্পাসের এই নীরব সৈনিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমরা বলতে চাই—"আপনাদের জন্য রইল ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক!"


সর্বশেষ সংবাদ