সাত কলেজ প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ চূড়ান্ত হচ্ছে কাল?

সাত কলেজ লোগো
সাত কলেজ লোগো   © ফাইল ফটো

রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজকে নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা করছে সরকার। তবে নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কি হবে— এ নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন শিক্ষার্থীরা। এরইমধ্যে গত ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের নামকরণ সংক্রান্ত বিষয়ে ছাত্র প্রতিনিধিবৃন্দের টিম লিডারদের মতবিনিময় সভা আয়োজনের ঘোষণা দেন। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রদানের লক্ষ্যে কমিশনের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সভাপতিত্বে কনফারেন্স রুমে আগামী ১৬ মার্চ সকাল ১০টায় প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এই সভায় প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাতটি কলেজ হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখেরও বেশি । শিক্ষক রয়েছে প্রায় এক হাজারের বেশি।

এ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে নামকরণ করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছে ভিন্ন চিন্তা ও মতামত। তবে ভিন্নতা ছাড়িয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস।

এ বিষয়ে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের অন্যতম প্রতিনিধি ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারী বলেন, ‘সাত কলেজকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের কাজ তড়িৎ গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। কমিশন  সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মতামত কে প্রাধান্য দিয়েই যাবতীয় কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করছে। নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কি নাম ঘোষণা হবে তা আমাদের জানা নেই। তবে নাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাতটি কলেজের যাবতীয় বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই নির্ধারণ করা হবে বলে মনে করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সাথে সাথেই সর্বপ্রথম যে সমস্যার সমাধান হবে তা হল ‘পরিচয়হীনতার’ অবসান ঘটবে। ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের কোনও পরিচয় ছিল না। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নির্ধারণের মাধ্যমে এর অবসান ঘটবে। আমরা বিশ্বাস করি,অন্যান্য সমস্যা সমূহের অবসান ঘটবে দ্রুত সময়ের মধ্যে। এতদিন পর্যন্ত ৭ কলেজের কোনও অভিভাবক ছিল না। এবার তার ও অবসান ঘটবে। এবং নতুন প্রশাসন সুন্দর ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঘোষণার ব্যাপারে জানতে চাইলে সরকারি বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী জাফরিন আক্তার বলেন, ‘সাত কলেজকে নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণের বিষয়টা আসলে সামগ্রিক ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমরা সুনির্দিষ্ট করে কোন নাম বলতে পারছি না। অনেকে অনেক নামই চাইবে তবে সব থেকে সুন্দর নামটা ঘোষণা করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নাম অবশ্যই একটা প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি ধারণ করে আর এখানে সাতটা কলেজের আলাদা সংস্কৃতি রয়েছে। সেক্ষেত্রে সাতটি কলেজের ঐতিহ্য সংস্কৃতির সমন্বয়ে একটি সুন্দর নাম হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার মাধ্যমে অন্যান্য সকল সমস্যার সমাধান হবে।’

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের মেহেদি হাসান মেহরাজ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ কেবল একটি পরিচয় নয় এটি তার সংস্কৃতি ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যতের ভাবমূর্তি প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এমন হতে হবে যা গর্বে সঙ্গে উচ্চারণ করা যায়, যা বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে সম্মানজনকভাবে তুলে ধরবে এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় নিজের বিশ্ববিদ্যালয়কে অনন্য উচ্চতায় দেখাবে। আমি আশা করি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এমন হবে যা সাত কলেজের ইতিহাস ঐতিহ্য যথার্থভাবে প্রকাশ করবে।’

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা আশা করছেন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সাত কলেজের ইতিহাস ঐতিহ্য যথার্থভাবে প্রকাশ করবে। খুব শিগগির নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঘোষণা মাধ্যমে পরিচয়হীনতা দূর হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর অন্যান্য সকল সমস্যার সমাধান হবে। 

প্রসঙ্গত, সাত কলেজ ঢাবি অধিভুক্তের প্রায় ৮ বছর পার হলেও সাত কলেজে নেই দৃশ্যমান কোন শিক্ষার উন্নয়ন অপরদিকে রয়েছে প্রশাসনিক ও একাডেমিক সমন্বয়হীনতা, পাঠদান ও পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে সমস্যা,ফল বিপর্যয়, শিক্ষক সংকট, গবেষণার অভাব, এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মপরিচয়ের সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা। এ সকল সমস্যার সমাধান করার লক্ষ্যে একাধিকবার রাস্তায় নেমেছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত অবস্থায় আহত শিক্ষার্থীর তালিকাটাও ছিল না কম। এর পরে শিক্ষার্থীদের জন্য আসেনি কার্যকর কোন সমাধান।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সাত কলেজের শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সেশনজট কমানোসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল।


সর্বশেষ সংবাদ