জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ অনিয়ম চিহ্নিত করল ইউজিসি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়  © লোগো ও ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিভিন্ন খাতে নানা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে দেশের সকল উচ্চশিক্ষালয়ের তদারক সংস্থা ইউজিসি। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির বাজেট বাস্তবায়নে পদে পদে অনিয়মের চিত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের গ্রেড কেলেঙ্কারি, অতিরিক্ত হারে দায়িত্ব ভাতা নেয়া, অনুমোদন ছাড়া ১৩টি গাড়ি কেনা, এক প্রশিক্ষণে একই ব্যক্তির একাধিকবার সম্মানী নেয়া ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগসহ মোট ২৫টি খাতে অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাজেট পর্যালোচনা দল চলতি বছরের ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের সংশোধিত ও ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের মূল বাজেট পর্যালোচনাকালীন সময় পরিলক্ষিত আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে।

অসংগতি ও অনিয়মগুলো প্রতিবেদনে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দিয়েছে ইউজিসি। একইসঙ্গে অতিরিক্ত ভাতা বা সম্মানির টাকা ফেরত দিতে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ অনিয়ম চিহ্নিত করলো ইউজিসি
রেজিস্ট্রারকে উচ্চতর গ্রেড প্রদান: বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামানকে ২য় গ্রেডে বেতন প্রদান করায় জাতীয় বেতন স্কেলের ব্যত্যয় ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতীয় বেতন স্কেলের নিয়ম অনুযায়ী স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মচারী ৩য় গ্রেড বা তদূর্ধ্ব গ্রেডে বেতনপ্রাপ্ত হবেন না।

ভাতা ও বেতন প্রদানে অনিয়ম: ইউজিসি বলছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত হারে দায়িত্ব ভাতা প্রদান করা হয়েছে। একইসঙ্গে নিয়ম না মেনে বই ভাতা বাবদ শিক্ষক প্রতি বাৎসরিক ৩ হাজার টাকা হারে অর্থ প্রদান করা হয়েছে। ড্রাইভার ও হেলপারদেরও তদারকি ভাতা প্রদান করা হয়েছে, যা সরকারি নিয়মের পরিপন্থী।

এছাড়া এই উচ্চশিক্ষালয়টিতে স্বতন্ত্র পে-স্লিপ তৈরি করা হয় না এবং পে-স্লিপে শিক্ষক, কর্মকর্তা/কর্মচারীদের স্বাক্ষর নেয়া হয় না। অধিকাল ভাতার হার সরকারি হারের চেয়েও অধিক। শিক্ষকদের TOFEL, IELTS, GRE পরীক্ষার ফিও বিশ্ববিদ্যালয় হতে পরিশোধ করা হয় যা নিয়মের মধ্যে নেই।

সম্মানী ভাতা প্রদানে অসংগতি: জবির উপাচার্য দপ্তর, রেজিস্ট্রার দপ্তরের একাডেমিক কাউন্সিল ও ব্যক্তিগত শাখার কর্মকর্তাগণকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সম্মানী প্রদান করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এছাড়া প্রশিক্ষণ ভাতার নীতিমালার বাইরে প্রশিক্ষণকালীন সময়ে ৬০০ টাকা হারে দৈনিক মজুরি বিল প্রদান করা হয়। একই ব্যক্তিকে অতিথি ও অংশগ্রহণকারী হিসেবে দেখিয়ে উভয় ক্ষেত্রে সম্মানী প্রদান করারও প্রমাণ মিলেছে। প্রশিক্ষণ ভাতাও সরকার নির্ধারিত ভাতার থেকে বেশি প্রদান করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: মৌখিক পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া হতে পারে না

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে অনিয়ম: তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, ইউজিসি প্রদত্ত বাজেট বরাদ্দ হতে কম-বেশি করে বাজেটে আন্তঃখাত সমন্বয় করা হয়েছে জবির বাজেটে, যা নিয়মের ব্যত্যয়। সংশোধিত বাজেট প্রণয়নের পূর্বেই কিছু খাতে মূল বাজেটের চেয়ে অধিক অর্থও ব্যয় করা হয়েছে।

নিয়োগে অনিয়ম: জবিতে নিয়োগের ক্ষেত্রেও অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে ইউজিসি। ড্রাইভার, তবলা সঙ্গতকারী, বাস হেল্পার পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সুযোগ না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এসকল পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগকৃত জনবলের ভেরিফিকেশনও করা হয়নি। মন্ত্রণালয় অনুমোদিত অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি, ও পদোন্নয়ন নীতিমালাতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মীকরণ করা হয়নি।

অনুমোদনবিহীন যানবাহন ক্রয়: ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের বিমকের প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়াই ২টি মাইক্রোবাস ও ০১টি বাস ক্রয় করেছে জবি। একইসঙ্গে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বিমকের বাজেট বরাদ্দ না থাকা সত্ত্বেও ১০টি বাস ক্রয় করা হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রে বাজেট পর্যালোচনায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়টির আরও বেশ কিছু অনিয়ম ও অসংগতির বিষয় উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম নেই। নেই কোন বাজেট সেলও। ব্যয় নিয়েও রয়েছে আরও বেশ কিছু খাতে অসংগতি। অনুষ্ঠান বা উৎসব পালনে জাতীয় দিবস ব্যতীত বিভিন্ন দিবসে অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়ায় চালিত যানবাহনেরও প্রশাসনিক ও আর্থিক অনুমোদন নেই।

একইসঙ্গে পিআরএল, পেনশন, হাজিরা ও আপগ্রেডেশনে নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি। পেনশনারগণের পেনশন বই প্রণয়ন করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাৎসরিক হাজিরা গ্রহণও করা হয়নি। এছাড়া সিনিয়র ড্রাইভার, সিনিয়র গার্ড পদ অর্গানোগ্রামে না থাকা সত্ত্বেও আপগ্রেডেশন প্রদান করা হয়েছে যা নিয়ম বহির্ভূত বলে তদন্ত রিপোর্টে জানিয়েছে ইউজিসি।

ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জবি রেজিস্ট্রারের বক্তব্য
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এসকল অনিয়মের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো সিদ্ধান্ত নেবে কিনা তা এখনো আমি জানি না।

ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী নিয়ম বহির্ভূতভাবে ২য় গ্রেডে বেতন নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ২য় গ্রেডে বেতন আমাকে কর্তৃপক্ষ দিয়েছে। এটা সিন্ডিকেটে পাশ হয়ে তারপর আমি বেতন পেয়েছি। এতে আমার কোনো ভুল আছে বলে মনে করিনা। কর্তৃপক্ষ যদি দেয় আমার কি করার আছে? আর এমন ঘটনা এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ