রাজকীয় বরণ নিয়ে মুক্তি পাওয়া কে এই ছাত্রদল নেতা জাকির?

আলোচিত ছাত্রদল নেতা জাকির খান
আলোচিত ছাত্রদল নেতা জাকির খান  © সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জে ফের আলোচনায় উঠে এসেছেন একসময়ের তুমুল আলোচিত ছাত্রদল নেতা জাকির খান। আজ রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয় পুরো শহরজুড়ে। অনুসারীদের ঢল, শত শত মোটরসাইকেল ও গাড়ির শোভাযাত্রায় রীতিমতো রাজকীয় বরণ পেয়েছেন তিনি।

কারাগার থেকে মুক্তির মুহূর্তে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের সামনে জড়ো হয় শত শত নেতাকর্মী ও সমর্থক। সকাল থেকেই সাউন্ডবক্স, ব্যানার আর পতাকায় সজ্জিত হয়ে অপেক্ষায় ছিলেন তারা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে। সকাল ১০টার দিকে ছাত্রদল নেতা জাকির খান কারাগার থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ে জনতা। ঢাকাগামী লিংক রোড থেকে শহরের প্রধান সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। অনুসারীরা মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট গাড়ির দীর্ঘ মিছিল নিয়ে শহরজুড়ে বিজয় মিছিল করেন।

জানা গেছে, জাকির খান এক সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। নব্বইয়ের দশকে জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠনের মাধ্যমে রাজনীতিতে তার পথচলা শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে বিএনপির ছাত্রসংগঠনে সক্রিয় ভূমিকা নেন। তবে তার রাজনৈতিক জীবনে বড় আঘাত আসে ২০০৩ সালে, বিএনপি সরকারের সময় ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। এ ঘটনার পরপরই তিনি দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান থাইল্যান্ডে।

প্রায় দুই দশক বিদেশে পলাতক থাকার পর ২০২১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ভারত হয়ে গোপনে দেশে ফেরেন জাকির খান। এরপর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সপরিবারে পরিচয় গোপন রেখে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে পড়ে যান তিনি। ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর র‍্যাব-১১-এর একটি অভিযানে বসুন্ধরা এলাকা থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জাকির খানের বিরুদ্ধে রয়েছে চারটি হত্যা মামলাসহ মোট ৩৩টি মামলা। গ্রেপ্তারের পর একে একে এসব মামলায় জামিন পেতে থাকেন তিনি। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ব্যবসায়ী সাব্বির আলম হত্যা মামলার রায়ে তিনি খালাস পান।

কারামুক্তির পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জাকির খান। বলেন, আমার শরীরের চামড়া দিয়ে যদি জুতা বানিয়ে দেই, তাহলেও নারায়ণগঞ্জবাসীর ঋণ শোধ করতে পারব না। আমরা রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনার সরকারের মাধ্যমে যেভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছি, আগামী প্রজন্ম যেন এই পরিস্থিতির শিকার না হয়, সে জন্য সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখব।

নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, আমি যদি এখানে শুয়ে পড়তে পারতাম, তাহলে বুঝিয়ে বলতে পারতাম আমার অনুভূতি। এখন আমি বাড়ি যাব, মায়ের হাতে ভাত খাব—এটাই আমার সবচেয়ে বড় অনুভূতি।

কারামুক্তির দিনেও প্রশাসনকে ঘিরে বক্তব্য দিতে ছাড়েননি এই ছাত্রনেতা। বলেন, এই প্রশাসনই আগামী দিনে থাকবে। প্রশাসনকে সহযোগিতা করে নতুন একটি মানবিক প্রশাসনের ভিত্তি গড়ে তুলব।


সর্বশেষ সংবাদ