বিয়ের সাতদিনের মাথায় স্বামীর কফিনে নববধূর মেহেদী রাঙা হাত

হিমেলের কফিন নিয়ে যাচ্ছে তাঁর স্ত্রী
হিমেলের কফিন নিয়ে যাচ্ছে তাঁর স্ত্রী  © সংগৃহীত
চোখে এখনো লাজ ভাঙেনি। যুগলবন্দী জীবনের মাত্র ৭ দিন। শুকায়নি নববধূর হাতের মেহেদিও। হয়তো একগাদা স্বপ্নও সাজিয়েছিলেন। জনম জনমের পথ পাড়ি দেবে বলে হাত রেখেছিল পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা হিমেলের হাতে।
 
কিন্তু সেই হাত এখন নিরব নিস্তেজ এক কফিনের ওপর। খুনসুটি আর মুঠো মুঠো প্রেমের ডালি নিয়ে অপেক্ষার পরিবর্তে শেষ গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন প্রিয়তমকে। ওপারে ডাক কখন আসে, মানুষ জানে না। প্রতিটি চলে যাওয়ার পেছনে কত কত স্বপ্ন আর গল্প যে জমা থাকে। সেই অব্যক্ত গল্প সারা জীবন কুড়ে কুড়ে খেলেও মুখ ফুটে প্রিয়তমকে আর বলা হবে না।
 
সদ্যই হিমেল পাস করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মধ্যবিত্ত পরিবারের অন্য আট-দশটা ছেলের মতোই ভেবেছিলেন এবার বাবা-মায়ের মুখে একটু হাসি ফুটুক। নিচ্ছিলেন বিসিএস পরীক্ষার প্রিপারেশন। সামনেই রিটেন পরীক্ষা। তবে এরমধ্যেই চাকরি হয়ে যায় কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে।
 
বিয়ে করেছেন এই ঈদের ছুটিতে, এক সপ্তাহও পার হয়নি। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা একটা ভিন্ন উপাখ্যান লিখে রেখেছেন, যা আমরা কখনোই জানি না জানতে পারিও না। কেবল সাক্ষী হই, কখনোবা উপাখ্যানের চরিত্র হই।
 
 
ছুটি শেষে হিমেল পরশুই ফিরেছিলেন কর্মস্থলে। গতকাল শখের বশে সহকর্মীদের সঙ্গে গিয়েছিলেন হাওরে মাছ ধরতে। ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অল ওয়েদার সড়কের দ্বিতীয় সেতুর কাছে জাল দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে তিনি প্রবল স্রোতে তলিয়ে যান।
 
একদিন পর আজ মিলেছে হিমেলের লাশ। আর সেই লাশ পরম মমতায় আগলে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে নিয়ে যাচ্ছেন প্রিয়তমা স্ত্রী। হিমেল ক্যাম্পাসেরই ছোট ভাই। পরিচয় নেই। কিন্তু এভাবে চলে যাওয়াটা খুব পীড়া দিচ্ছে। আল্লাহ ছেলেটাকে ওপারে ভালো রাখুক।
 
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)

সর্বশেষ সংবাদ