ফেক নিউজ এবং ফেসবুকে আমার দেয়াল

অধ্যাপক আলী রীয়াজ
অধ্যাপক আলী রীয়াজ  © ফাইল ছবি

সারা পৃথিবী জুড়ে সাংবাদিকতা এবং রাজনীতির জন্যে এখন একটা বড় সমস্যা হছে ‘ফেক নিউজ’ বা ভুয়া খবর। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে, কখনো কখনো একেবারে বানানো বিষয়কে খবর হিসেবে প্রচার করা, অথবা সামান্য সত্যের সঙ্গে অনেক অনেক মিথ্যা জড়িয়ে তৈরি করা খবরকেই আমি ‘ভুয়া খবর’ বলে চিহ্নিত করি।

এই বিষয়ে গত কয়েক বছরে বিস্তর আলোচনা হয়েছে, এই আলোচনা ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে উগ্র দক্ষিনপন্থীদের উত্থানের কারণে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থান ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভূমিকার কারণে।

পড়ুন: গুজবনাশের মেশিন ‘বিডি ফ্যাক্টচেক’

কিন্ত মনে রাখা দরকার যে, ট্রাম্প একাই এটা করেননি। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে ব্রেক্সিট। ফেক নিউজ প্রচারে সামাজিক মাধ্যম একটা বড় ভুমিকা পালন করেছে। ফেক নিউজের বিষয়ে আমাদের এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্যর দিকে নজর রাখা দরকার, এগুলো অত্যন্ত উদ্দেশ্যপ্রনোদিত, সেনশেনাল, আবেগে ভরপুর, বিভ্রান্তিকর অথবা একেবারে তৈরি করা তথ্য।

এগুলো প্রচার করা হয় এমনভাবে যেন এগুলো প্রচলিত মূলধারার মিডিয়ায় আসতে পারতো, কিন্ত আসেনি তার কারণ রাজনৈতিক। মূলধারার মিডিয়ার দুর্বলতা এবং রাজনীতিতে বিরাজমান মেরুকরণ/বিভক্তি ফেক নিউজকে গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছে। তদুপরি কোনও কোনও ক্ষেত্রে মূল ধারার মাধ্যমগুলো এই ধরণের ফেক নিউজ প্রচার করে।

পড়ুন: দাদাকে নিয়ে ফেক নিউজ বানালে তো আমার কষ্ট লাগে (ভিডিও)

এই অবস্থায় অনেকেই জেনে অথবা না জেনে ফেক নিউজ প্রচারে সামিল হন, তার ভিত্তিতে মন্তব্য করেন। তবে এই প্রবণতা কেবল অজ্ঞতাপ্রসূত বিষয় নয়, এর পেছেন আছে উদ্দেশ্য। একটা বিপদের দিক হচ্ছে অনেক সময় মূল ঘটনা/ খবর না জেনেই মন্তব্য করা। এই প্রবণতা ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে। অনেকে এমনকি অন্যদের কথা উদ্ধৃত করে এই ধরণের প্রচার চালান। যাঁদের মন্তব্য উদ্ধৃত করা হয় তাঁরা কেনো এই ধরণের মন্তব্য করেছেন সেটা বিস্ময়ের। এই বিষয়ে সকলের সাবধানতা অবলম্বন জরুরি, বিশেষ করে যখন তা কোন ডকুমেন্ট নির্ভর বিষয় হয়।

পড়ুন: ফেসবুকে আসছে নতুন নীতি, যেসব কারণে মুছতে পারে পোস্ট

এইসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ আছে। কিন্ত এই কথাগুলো বলার কারণ এই বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করা নয়। কারণ হচ্ছে আমার দেয়ালে এই ধরনের ফেক নিউজ শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে সকলকে অনুরোধ করা। মন্তব্য হিসেবেই হোক কিংবা ট্যাগ করা হিসেবেই হোক। আমার পোস্টে করা সব ধরনের মন্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাই না, কিন্ত সব পাঠ করার জন্যে চেষ্টা করি।

পড়ুন: ভুয়া খবর বোঝার তিনটি উপায়

যে সব ক্ষেত্রে আমি ‘ফেক নিউজ’ শনাক্ত করতে পারি, সেক্ষেত্রে আমি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তা মুছে ফেলার অনুরোধ করি। কিন্ত আগামীতে আমি নিজেই তা মুছে ফেলতে বাধ্য হবো। এগুলো সেন্সরশিপ নয়, এগুলো হচ্ছে ফেক নিউজের প্রচারে অংশগ্রহণ না করার চেষ্টা।

সকলের প্রতি অনুরোধ যে কোনও খবর একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে যাচাই করুন, ডকুমেন্ট হলে সেই ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে দেখুন, অন্যরা এই বিষয়ে মন্তব্য করেছে মানেই তা সত্যি নয়। আমরা যে সময়ে বাস করছি সেখানে আমাদের সকলের আরও সচেতন হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

লেখক: সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, ইলিনয় স্টেট ইউনভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র


সর্বশেষ সংবাদ