‘তাদের প্রলাপ কেউ সহ্য করতে চায় না, অথচ তারা আমাদেরই আপনজন’
- আশরাফ আন নূর
- প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:১৮ AM , আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৩১ AM

‘মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষকে কেউ সহজে মেনে নেয় না। পাগলের প্রলাপ কেউ সহ্য করতে চায় না। অথচ তারা আমাদেরই স্বজন, আমাদেরই আপনজন।’ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আক্ষেপ করে কথাগুলো বললিছেন এক রোগীর স্বজন।
হাসপাতালে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে রোগীর দীর্ঘ সারি। কারও চোখে ক্লান্তি, কারও মুখে উদ্বেগের ছাপ। অনেকে আবার অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে আপন মনে কী যেন বলে চলেছেন। এ ভিড়ের মধ্যেই দেখা হলো কক্সবাজার থেকে আসা এক রোগীর স্বজনের সঙ্গে।
রোগীর ভাই বলেন, ‘আমার ভাই মানসিকভাবে অসুস্থ। সকালে তাকে নিয়ে এখানে এসেছি, কিন্তু আসার পর থেকেই নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছি। প্রথমেই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে, যা একজন রোগীর জন্য খুবই কষ্টদায়ক। আর যদি রোগী মানসিকভাবে অসুস্থ হন, তাহলে এ ভোগান্তি কয়েক গুণ বেড়ে যায়।’
বর্তমানে হাসপাতালটিতে মোট ৪০০টি শয্যা রয়েছে, কিন্তু বর্তমানে রোগী ভর্তি আছেন ৩২০ জন। এর মানে, প্রায় ৭০টি শয্যা ফাঁকা রয়েছে। তবে জনবল সঙ্কটসহ নানা কারণে সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন।
‘এতক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো সমাধান পাচ্ছি না। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে পরিচালকের কক্ষে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেন দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়। আমার ভাইয়ের মানসিক অসুস্থতার কারণ প্রেমঘটিত। পারিবারিক ও সামাজিক নানা চাপে তার অবস্থা আরও জটিল হয়ে ওঠে। এ পরিস্থিতিতে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে গিয়ে আমরা বিপদে পড়েছি।’, যোগ করেন তিনি।
রোগীর ভাইয়ের ভাষ্য, ‘মানসিকভাবে অসুস্থদের কেউ সহজে মেনে নিতে চায় না। পাগলের প্রলাপ কেউ সহ্য করতে চায় না। অথচ তারা আমাদেরই স্বজন, আমাদেরই আপনজন।’
তিনি বলেন, এ ধরনের সংকটাপন্ন অনেক রোগীকে চিকিৎসার জন্য পাবনায় পাঠানো হয়, যেখানে তাদের লকআপে রাখা হয়। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, বহু রোগীকে সেখানে রেখে তাদের আত্মীয়-স্বজন চলে যায়। এমনকি অনেক রোগী সুস্থ হওয়ার পরও পরিবারের কেউ তাদের নিতে আসে না—শুধু সম্পত্তির ভাগ বাঁচানোর লোভে।
আরো পড়ুন: ভাড়া ভবনে ভিসির কক্ষ সাজাতে ব্যয় ২০ লাখ টাকা
পুরান ঢাকা থেকে এক তরুণের (৩২) চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে আসেন বাবা। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি রয়েছে। আমরা এখান থেকে ভালো সেবা পাচ্ছি না। পরিবেশ ও সেবার মান অত্যন্ত খারাপ।’ দীর্ঘ সময় ধরে তারা কোনও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রোগী যথাযথ চিকিৎসা ও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ তার।
কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে হাসপাতালটিতে মোট ৪০০টি শয্যা রয়েছে, কিন্তু বর্তমানে রোগী ভর্তি আছেন ৩২০ জন। এর মানে, প্রায় ৭০টি শয্যা ফাঁকা রয়েছে। তবে জনবল সঙ্কটসহ নানা কারণে সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন।
হাসপাতালের পরিস্থিতি বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এখানে রোগীর চাপ অনেক বেশি। শয্যা ফাঁকা থাকলেও যথাযথভাবে পূরণ করা যাচ্ছে না। এর প্রধান কারণ হিসেবে তিনি জনবল ও দক্ষতার অভাবের কথা উল্লেখ করেন। পর্যাপ্ত দক্ষতা এবং কর্মী না থাকায় এ শয্যাগুলোয় রোগী ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না।