স্নায়ুরোগের বিশ্বমানের চিকিৎসা দিতে চায় নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল: ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান
- আশরাফ আন নূর
- প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩০ PM , আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩০ PM

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত দেশের অন্যতম স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল। স্নায়ুরোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য দেশের একমাত্র বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান এটি। এ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এখানে বিশ্বমানের পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট রয়েছে। এবং স্নায়ুরোগীদের দ্রুত ও কার্যকর চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের সহকারী পরিচালক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এসব কথা জানান।
ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে ব্রেইন স্ট্রোক, যা মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলের সমস্যা বা রক্তক্ষরণের কারণে ঘটে। এছাড়া ব্রেইন টিউমার রোগীরাও দেখা যায়। এর পাশাপাশি স্নায়ু সংক্রান্ত রোগ (Neurological disorders), যেমন প্যারালাইসিস, আলঝেইমার্স, পারকিনসন্স ডিজিজ ইত্যাদি রোগী প্রচুর। সেই সঙ্গে রয়েছে মাথাব্যথা, টেনশন, মাইগ্রেন বা ক্লাস্টার মাথাব্যথা।
তিনি আরও বলেন, অনেক রোগী আসেন খিঁচুনি (Seizures) নিয়ে। মাথায় আঘাতজনিত সমস্যা, যা দুর্ঘটনা বা অন্য কোনও কারণে মস্তিষ্কে আঘাত হতে পারে। স্পাইনাল কর্ডের সমস্যা রোগীরাও আসে, যেখানে মেরুদণ্ড বা স্পাইনাল কর্ডের কোনো ধরনের সমস্যা যেমন হাড় ভেঙে যাওয়া বা স্নায়ু টানটান হয়ে যাওয়া দেখা যায়।
একটা সফল চিকিৎসা
সহকারী পরিচালক বলেন, প্রায় এক বছর আগে মানিকগঞ্জ থেকে শহীদুল ইসলাম (ছদ্মনাম) নামে এক রোগী স্পাইনাল কর্ডের গুরুতর সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন। আমরা তাকে বিশেষভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করি। তার চিকিৎসার জন্য ২২ কোটি টাকা মূল্যের একটি ইনজেকশন প্রয়োজন ছিল। সাধারণত, এই ইনজেকশন তৈরির বিদেশি প্রতিষ্ঠান মাঝে মাঝে লটারির মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু রোগীর জন্য এই ধরনের ওষুধ সরবরাহের সুযোগ দেয়। আমরা সেই সুযোগের জন্য আবেদন করি এবং ভাগ্যক্রমে লটারি পাওয়ায় রোগী বিনামূল্যে ইনজেকশনটি গ্রহণ করতে সক্ষম হন।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ইউনিট
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ইউনিট (C.T.U.) রয়েছে, যেখানে জটিল ও ক্রিটিক্যাল ব্রেইন সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। প্রথম ধাপে, অনেক রোগীকে এই ইউনিটে নিয়ে গিয়ে বিশদ মূল্যায়ন করা হয়, যাতে চিকিৎসার যথার্থতা নিশ্চিত করা যায়।
গবেষণা ও প্রকাশনা
গবেষণা নিয়ে তিনি জানান, গবেষণার অগ্রগতির জন্য আমরা নিয়মিত বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা নিয়ে কাজ করি। আমাদের গবেষণা কার্যক্রমের প্রতিফলন ঘটে ‘জার্নাল অব ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস’-এ, যেখানে আমাদের গবেষণাগুলোর নিয়মিত প্রকাশনা হয়। এছাড়া, আমাদের গবেষণা বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতিমান আন্তর্জাতিক জার্নালেও প্রকাশিত হয়ে থাকে, যা আমাদের বৈশ্বিক স্বীকৃতিকে আরও সুসংহত করে। এই ধরনের গবেষণায় আমরা রোগের প্রকৃত উৎস নিয়ে কাজ করি। যা পরবর্তীতে রোগীর সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়।
আন্তর্জাতিক গবেষণা সহযোগিতা
গবেষণা কার্যক্রমকে আরও উন্নত করতে আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে MOU (Memorandum of Understanding) স্বাক্ষর করি। এর মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে গবেষণা পরিচালিত হয়। এটি আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে-তিনি যোগ করেন।
মাসিক রিসার্চ ওয়ার্কশপ
ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমাদের এখানে নিয়মিত মাসিক রিসার্চ ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অংশগ্রহণ করেন। তারা চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। তারা গবেষণার নতুন দিক উন্মোচন করে, জটিল অপারেশন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। এসব ওয়ার্কশপ চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও গবেষণা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রতিষ্ঠানের চ্যালেঞ্জসমূহ
তিনি প্রতিষ্ঠানের চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে বলেন, এখানে শয্যা সংখ্যা ৩০০ হলেও, প্রতিদিন আউটডোরে ২হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। জায়গার সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্পেস দিতে পারছি না। এছাড়া, দক্ষ জনবলেরও ঘাটতি রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত জনবল আমরা সরকার থেকে পাচ্ছি না। বিশ্বমানের চিকিৎসা ও এই প্রতিষ্ঠানের সফলতা ধরে রাখতে হলে, দ্রুত প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া দরকার।