কোটা আন্দোলনে মৃত্যু: সাবেক এমপিসহ ১০৩ জনের নামে মামলা

সদ্য বিদায়ী সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স
সদ্য বিদায়ী সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স  © ফাইল ফটো

পাবনায় কোটা সংস্কার নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গুলিতে দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। শনিবার (১০ আগস্ট) রাতে নিহত পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলামের (১৮) বাবা মো. দুলাল উদ্দিন মাস্টার বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন।

মামলায় পাবনা সদর আসনের সদ্য বিদায়ী সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সসহ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ঊর্ধ্বতন নেত্ববৃন্দসহ ১০৩ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়ার হুকুম দেওয়ার অভিযোগে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

এর আগে ৪ আগস্ট বেলা সোয়া ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভে নামেন। পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের প্রধান ফটক থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা শহরের ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এতে দুই ছাত্রসহ তিনজন নিহত ও অন্তত ২৫ জন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় আহত হন শতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদের গাড়িতে আগুন দেন। তাৎক্ষণিক বিক্ষুব্ধরা দাবি করেন, ওই গাড়ি থেকে নেমে দুই ব্যক্তি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়েছে। এ ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থী হলেন- জেলা সদরের চর বলরামপুর গ্রামের দুলাল উদ্দিনের ছেলে ও পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম (১৮) এবং হাজিরহাট বেতেপাড়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ও শহরের সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মাহবুব হাসান নিলয় (১৪)। অপরজন ফাহিম হোসেন রাজ্জাক।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছিলেন। এ সময় মামলার অভিযুক্ত আসামিরা লোহার রড, বাঁশের লাঠি ও দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি করে। বিনা উসকানিতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এতে ছাত্র-জনতা ভয়ে দিগ্‌বিদিক ছুটতে থাকে। এ সময় তার ছেলেসহ তিনজন আন্দোলনরত অবস্থায় ছিল। একপর্যায়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদের নির্দেশে ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে দুইজন গুলি চালাতে শুরু করে। এতে তার ছেলেসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা দুইজন শিক্ষার্থীসহ তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ প্রসঙ্গে পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী বলেন, বাদী থানায় হাজির হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। আমরা মামলা নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করেছি। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য বিদায়ী সাংসদ গোলাম ফারুক প্রিন্স একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অবস্থান ছিল না। আমরা চেয়েছিলাম ছাত্রদের ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠিত হোক। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি সুযোগ সন্ধানীরা যেন পাবনায় কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে। ৩ আগস্ট থেকে সুযোগসন্ধানীরা ছাত্রদের মধ্যে প্রবেশ করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করে।

তিনি আরও বলেন, আমরা জানতে পারি তারা ছাত্রদের লাশ চায়। ৪ আগস্ট সুযোগসন্ধানীরা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের সামনে থেকে ছাত্রদের মধ্য শহরে নিয়ে আসে। তারা ছাত্রদের পরিকল্পিতভাবে উত্তেজিত করে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় বুলবুল কলেজ সড়ক ও থানা সড়কে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলির ঘটনা ঘটে। এতে দুই ছাত্র নিহত হন। এরপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুরের চেষ্টা শুরু হয়। এ সময় পুলিশও নেতাকর্মীদের রক্ষায় ব্যর্থ হয়। পরে আত্মরক্ষার্থে  দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।


সর্বশেষ সংবাদ