ড. ইউনূসের মামলা খারিজ: পরিশোধ করতে হবে ১৫ কোটি টাকা

ড. ইউনূসের মামল খারিজ: পরিশোধ করতে হবে ১৫ কোটি টাকা
ড. ইউনূসের মামল খারিজ: পরিশোধ করতে হবে ১৫ কোটি টাকা  © ফাইল ছবি

১৫ কোটি টাকা কর দাবি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা রেফারেন্স মামলা খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (৩১ মে)  ড. ইউনূসের পৃথক তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলার শুনানি নিয়ে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

একই সঙ্গে নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূসের করা পৃথক তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলাও খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। ফলে তাকে আয়করের প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। কর আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করার সময় ১৫ কোটির মধ্যে ৩ কোটি টাকা জমা দিয়েছিলেন ইউনূস। ফলে তাকে আরো ১২ কোটি টাকা এনবিআরকে পরিশোধ করতে হবে।

এর আগে দানের বিপরীতে ধার্য করা প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকা আয়কর চেয়ে এনবিআরের পাঠানো নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূসের করা পৃথক তিনটি মামলার শুনানি শেষ হয়। এনবিআরের ওই নোটিশগুলোর বৈধতা নিয়ে রায়ের জন্য আজ  ধার্য ছিল। এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে গত মঙ্গলবার (২৩ মে) সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফারজানা রহমান শম্পা। ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সুমাইয়া ইফরিত বিনতে আহমেদ ও সুমন সেনগুপ্ত।

রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ড. ইউনূস যে টাকা নিজের নামে তিনটি ট্রাস্টে দান করেছেন, এই টাকা যদি তার নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে থাকতো তাহলে তাকে সে টাকার আয়কর দিতে হতো। ট্রাস্ট যেহেতু কর অব্যাহতি পায় সেজন্য হয়তো তিনি এ টাকা ট্রাস্টে দান করেছেন। আবার দানটা করেছেন মৃত্যুচিন্তা এবং পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে। কিন্তু দানকর আইন, ১৯৯০-এর ৪ ধারার (ছ) (জ) উপধারা অনুসারে দানের এই দুটি কারণের প্রযোজ্যতা প্রমাণ করতে পারেননি। যে কারণে ট্রাইব্যুনাল তার আবেদন খারিজ করেছিলেন।

সেই খারিজ আদেশ বহাল রেখে আদালত বলেছেন, আয়কর পরিশোধ না করার কৌশল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্টে এ টাকা দান করেছেন। ট্রাইব্যুনালের খারিজ আদেশে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। বরং খারিজ করে সঠিক সিদ্ধান্তই দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ফলে পরিশোধের টাকা বাদ দিয়ে আরোপ করা দান করের বাকি টাকা তাকে পরিশোধ করতেই হবে।

ড. ইউনূসের আইনজীবী সুমাইয়া ইফরিত বিনতে আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব অথবা দানকর পরিশোধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালের দানকর আইন অনুযায়ী ২০১১-১২ করবর্ষে মোট ৬১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দানের বিপরীতে প্রায় ১২ কোটি ২৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা কর দাবি করে নোটিশ পাঠায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০১২-১৩ করবর্ষে ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা দানের বিপরীতে ১ কোটি ৬০ লাখ ২১ হাজার টাকা দানকর দাবি করা হয়। আর ২০১৩-১৪ করবর্ষে ৭ কোটি ৬৫ হাজার টাকা দানের বিপরীতে ১ কোটি ৫০ লাখ ২১ হাজার টাকা কর দাবি করে নোটিশ দেয় এনবিআর।

এসব দানের বিপরীতে যথাক্রমে প্রায় ১২ কোটি ২৮ লাখ ৭৪ হাজার ৮০০, এক কোটি ৬০ লাখ ২১ হাজার এবং এক কোটি ৫০ লাখ ২১ হাজার টাকাসহ মোট ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ৮০০ টাকা আয়কর দাবি করে এনবিআর। একই সঙ্গে ৬৯ লাখ ২৬ হাজার ২৫৬ টাকা জরিমানাও ধার্য করা হয়। জরিমানাসহ ইউনূসের কাছে এনবিআরের মোট পাওনা দাঁড়ায় ১৬ কোটি আট লাখ ৪৩ হাজার ৫৬ টাকা। যেখানে ড. ইউনূস আয়কর বাবদ পরিশোধ করেন ৩ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ৪৪৮ টাকা। পরিশোধের অর্থ বাদ দিলে জরিমানাসহ ইউনূসের কাছে এনবিআরের বর্তমান পাওনা ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৬০৮ টাকা।

দানের বিপরীতে ১৫ কোটি টাকারও বেশি দানকর দাবি করে এনবিআরের এসব নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ড. ইউনূস। বাদীর দাবি, আইন অনুযায়ী দানের বিপরীতে এনবিআর এ কর দাবি করতে পারে না।


সর্বশেষ সংবাদ