মেয়াদের শেষকালে নিয়োগবাণিজ্য নিয়ে বিতর্কের মুখে বিএসএমএমইউ ভিসি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৪, ০১:৩২ PM , আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৪, ০১:৩২ PM
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে বিদায়ের আগে শতকোটি টাকার নিয়োগবাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। দায়িত্বে থাকাকালে তিনি বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন তার আত্মীয়স্বজনদের। নিয়ম না মেনে গত তিন বছরে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন পদে প্রায় দুই হাজার জনকে অ্যাডহক (চুক্তিভিত্তিক) ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপাচার্যের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে তিনি এখন (চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত) তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবারও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে।
আগামী ২৮ মার্চ তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতাদের একাংশের অভিযোগ, বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। ইতোমধ্যে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ। এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ীকরণ কমিটির মতামত না নিয়ে তড়িঘড়ি করে স্থায়ীকরণের জন্য ভাইভা নিচ্ছেন বর্তমান উপাচার্য, যা সম্পূর্ণ অবৈধ।
তবে চাকরি স্থায়ীকরণের লক্ষ্যে ভাইভা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ। গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, একটা পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, ফলাফল আজ প্রকাশের কথা ছিল। যেহেতু এটা নিয়ে একটি পক্ষ আন্দোলন করছে এবং আমার সব কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে। আমিও সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছি।
অভিযোগ রয়েছে, একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি নিয়োগ ও পদোন্নতি বাণিজ্য করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে রয়েছেন এমন কয়েকজন চিকিৎসক ও প্রশাসনের কর্মকর্তা তাকে এ কাজে সহায়তা করেন। তিনি এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শতকোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন।
এদিকে, এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে গেল দুইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গতকাল শনিবার একামেডিক কাউন্সিলের মিটিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভিসিকে ঘেরাও করে বলেন, নতুন ভিসি নিয়োগ হয়েছে। আপনি শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবেন। ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং ও নিয়োগ পরীক্ষা গতকাল স্থগিত করা হয়।
এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিক্ষোভকারী চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও নার্সরা বলেন, শতকোটি টাকার নিয়োগবাণিজ্য জায়েজ করার জন্য কয়েক দিন ধরে ভিসি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ও সিন্ডিকেটের মিটিং করার পাঁয়তারা করছেন। এই বিষয়টি টের পেয়ে ডাক্তার-নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তারা বিক্ষোভ ও আন্দোলন শুরু করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন সুমন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী স্থায়ীকরণ হবে ভাইভা বোর্ডের প্রতিটি সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে। কিন্তু সেটি মানছেন না বর্তমান উপাচার্য। তড়িঘড়ি করে নিজ অনুগতদের পদোন্নতি ও এডহকে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের স্থায়ী করছেন। এতে আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চালাতে গেলে প্রোভিসি, ট্রেজারার, ডিন এসব পদ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হয়। সেটা তিনি করেননি। পছন্দ মতো নিয়োগ দিয়ে এখন এদের স্থায়ী করার চেষ্টা করছেন।
বিএসএমএমইউয়ের ডিন (ডেন্টাল অনুষদ) ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল বলেন, নিয়ম অনুযায়ী এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ হয় ছয় মাসের জন্য। এরপর বাড়লে সেটা আবার ছয় মাসের জন্য বাড়ে। এভাবে এক বছর হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়মিত হয়। নিয়মিত হওয়ার পর চাকরি স্থায়ী করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কমিটির মাধ্যমে। মূলত এ বিষয় নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। গতকাল একটি মিটিং ছিল, সেটি হয়নি।
উপাচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের একটি মিটিং করছিলাম। সেখানে কিছু পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশের কথা ছিল। এর মধ্যে কিছু চিকিৎসক এসে বলল এই মিটিং করার দরকার নেই। এর মধ্যেই বাইরে শুনি কিছু মানুষ হইহুল্লোড় করছে। তারা চাচ্ছে যেহেতু আমার শেষ সময়, আমি যেন কিছু না করি। আমিও আমার শেষ সময়ে কোনো ধরনের ঝামেলায় জড়াতে চাই না, তাই আমি মিটিংটি স্থগিত করেছি।